ব্যাংকের পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস: মূলহোতাসহ ২ আসামির স্বীকারোক্তি

  © সংগৃহীত

রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচ ব্যাংকের অফিসার (ক্যাশ) পদের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের মূলহোতা আহসানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি টেকনিশিয়ান মুক্তারুজ্জামান রয়েল ও জনতা ব্যাংকের গুলশান শাখার কর্মকর্তা শামসুল হক শ্যামল আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।

আজ শনিবার (১৩ নভেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেগম মাহমুদা আক্তার ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় দুই আসামির জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।

এই মামলার অপর চার আসামিকেও রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা উপপরিদর্শক রনপ কুমার এসব তথ্য জানান।

এদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তেজগাঁও জোনাল টিমের পরিদর্শক লিয়াকত আলী বাড্ডা থানায় দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় রিমান্ড শেষে ৬ আসামিকে আদালতে হাজির করেন। এর মধ্যে চারজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ডের আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

পরবর্তীতে দুই আসামি প্রশ্নফাঁসের মূলহোতা মুক্তারুজ্জামান রয়েল ও শামসুল হক শ্যামল স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তবে অপর দুই আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদানে অস্বীকৃতি জানান। তাই অপর চার আসামি জনতা ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার এমদাদুল হক খোকন, সোহেল রানা, ঢাকা কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল জাবেদ জাহিদ ও পূবালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান মিলনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

গত ১০ নভেম্বর মুক্তারুজ্জামান রয়েল, শামসুল হক শ্যামল ও মোস্তাফিজুর রহমান মিলনের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। ওইদিন রূপালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার জানে আলম মিলন ও চাকরিপ্রার্থী রাইসুল ইসলাম স্বপনের রিমান্ড নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়। পরদিন এমদাদুল হক খোকন, সোহেল রানা ও আব্দুল্লাহ আল জাবেদ জাহিদেরর একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

গত ১০ নভেম্বর বিকেলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার জানান, পাঁচটি ব্যাংকে অফিসার (ক্যাশ) পদে এক হাজার ৫১১ জন জনকে নিয়োগ দিতে ৬ নভেম্বর বিকেলে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল তিনটা থেকে চারটা পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন কেন্দ্রে বহুনির্বাচনী পদ্ধতিতে হয় এ পরীক্ষা। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকার সিলেকশন কমিটির মাধ্যমে প্রশ্নপত্র তৈরি ও পরীক্ষা সম্পাদনের দায়িত্বে ছিল আহসানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি।

হাফিজ আকতার বলেন, পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস হবে ৫ নভেম্বর রাতে, এমন তথ্য আসে ডিবির কাছে। ডিবির টিমের সদস্যরা ছদ্মবেশে পরীক্ষার্থী সেজে ৬ নভেম্বর সকাল সাতটার দিকে প্রশ্নপত্রসহ উত্তর পাওয়ার জন্য চক্রের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। অগ্রিম টাকা পরিশোধের পর প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র ফাঁস চক্রের অন্যতম হোতা রাইসুল ইসলাম স্বপন ডিবির ছদ্মবেশী পরীক্ষার্থীকে নিয়ে যান। এরপর পরীক্ষার উত্তরপত্রসহ স্বপনকে হাতেনাতে আটক করা হয়।

গত ৬ নভেম্বর পরীক্ষায় আসা প্রশ্নের সঙ্গে সকালে পাওয়া প্রশ্ন ও উত্তর হুবহু মিলে গেলে স্বপনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রূপালী ব্যাংকের সাভার শাখার শ্রীনগর থেকে জানে আলম মিলনকে গ্রেফতার করা হয়। রূপালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার জানে আলম মিলনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র সরবরাহকারী শামসুল হক শ্যামলকে ধরতে প্রথমে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে অভিযান চালানো হয়। পরে জানা যায়, শ্যামল ঢাকায় অবস্থান করছেন। এরপর ঢাকার দক্ষিণ বাড্ডা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

অপর তিন আসামি সোহেল, খোকন ও জাহিদকে ১০ নভেম্বর রাতে গ্রেপ্তার করা হয়।


সর্বশেষ সংবাদ