ছাত্র বলাৎকারে ইমামতি থেকে বহিষ্কার রাগীব প্রতিষ্ঠা করেন এহসান গ্রুপ

আটক এমএলএম কোম্পানি এহসান গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা রাগীব আহসান
আটক এমএলএম কোম্পানি এহসান গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা রাগীব আহসান  © সংগৃহীত

ভূয়া এমএলএম কোম্পানি এহসান গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা রাগীব আহসান পিরোজপুরের এক মসজিদে ইমামী করার সময়ে এক মাদ্রাসা ছাত্রকে বলাৎকারের ঘটনায় ২০০৭ সালে চাকুরি চ্যুত হয়ে ছিলেন। এরপর তিনি এরপর ঢাকার একটি এমএলএম কোম্পানিতে ৯০০ টাকা বেতনে চাকরি নেন। চাকরি হারিয়ে অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এমএলএম কোম্পানি খোলেন। ২০০৮ সাল থেকে শরিয়াভিত্তিক ও সুদমুক্ত হালাল ব্যবসার কথা বলে মানুষের কাছ থেকে টাকা নেওয়া শুরু করেন রাগীব আহসান। এরপর একে একে ১৭টি প্রতিষ্ঠান খুলেন। প্রতিষ্ঠানগুলো দিয়ে হালাল ব্যবসার কথা বলতেন।

প্রতিষ্ঠানগুলো হলো এহসান গ্রুপ বাংলাদেশ, এহসান পিরোজপুর বাংলাদেশ (পাবলিক) লিমিটেড, এহসান রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমিটেড, নুর-ই মদিনা ইন্টারন্যাশনাল ক্যাডেট অ্যাকাডেমি, জামিয়া আরাবিয়া নুরজাহান মহিলা মাদ্রাসা, হোটেল মদিনা ইন্টারন্যাশনাল, আল্লাহর দান বস্ত্রালয়, পিরোজপুর বস্ত্রালয়-১ ও ২, এহসান মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড, মেসার্স বিসমিল্লাহ ট্রেডিং অ্যান্ড কোং, মেসার্স মক্কা এন্টারপ্রাইজ, এহসান মাইক অ্যান্ড সাউন্ড সিস্টেম, এহসান ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস, ইসলাম নিবাস প্রজেক্ট, এহসান পিরোজপুর হাসপাতাল, এহসান পিরোজপুর গবেষণাগার এবং এহসান পিরোজপুর বৃদ্ধাশ্রম।

পিরোজপুর জেলা ইমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা মীর মো. ফারুক আব্দুল্লাহ সংবাদমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ফারুক আব্দুল্লাহ বলেন, ‘রাগীব আহসান শহরতলির কেনগর তালিমুল কোরআন মাদ্রাসা মসজিদে ইমামতি করতেন। ২০০৭ সালে এক ছাত্র বলাৎকারের অভিযোগে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এরপর এলাকা ছেড়ে চলে যান। এক বছর পর এলাকায় ফিরে রাগীব পিরোজপুরে এমএলএম ব্যবসা শুরু করেন।’

গেলো ৯ সেপ্টেম্বর পিরোজপুর সদর উপজেলার মূলগ্রাম রায়েরকাঠী এলাকায় হারুন অর রশিদ নামের এক মাদ্রাসার শিক্ষক রাগীব আহসানের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

তিনি বলেন, আমি যে মামলাটি করেছি তাতে ৯৫ জনের টাকার হিসাব রয়েছে। আমার আছে ১৬ লাখ টাকা। আমার মতো কয়েক হাজার মানুষ প্রতারিত হয়েছেন।

হারুন অর রশিদ মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, ধর্মীয় অনুভূতি কাজে লাগিয়ে ২০০৮ সাল থেকে শরিয়াভিত্তিক ও সুদমুক্ত হালাল ব্যবসার কথা বলে মানুষের কাছ থেকে টাকা নেওয়া শুরু করেন রাগীব আহসান। একই সঙ্গে সুদমুক্ত হালাল ব্যবসার প্রচার চালান। তিনি আমাদের বলেছেন, ইসলামে সুদ জিনার সমান পাপ। তাই হারাম ও সুদভিত্তিক ব্যবসা করা যাবে না। ব্যবসার ওপর লাভের কথা বলে মানুষের কাছ থেকে ব্যাংকের মতো টাকা নিতেন। বলতেন, আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল এবং সুদকে হারাম করেছেন। কৌশল হিসেবে একই পরিমাণ লাভ না দিয়ে এক লাখ টাকায় মাসে কখনও দুই হাজার আবার কখনও এক হাজার ৮০০ টাকা দিতেন। কখনও দুই হাজার ২৫ টাকা দিতেন। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বলতেন, ব্যবসায় যখন যেমন লাভ হয় তেমন দিচ্ছি। কিন্তু মূল টাকা ফেরত চাইলে তার প্রতারণা ধরা পড়ে যায়।

২০১০ সালে পিরোজপুর সদর উপজেলার খলিশাখালী এলাকায় রাগীব আহসান ‘এহ্সান রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্স’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়েন। পরবর্তী সময়ে কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে ‘এহ্সান গ্রুপ’ রাখেন। এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হন রাগীব আহসান। প্রতিষ্ঠানে তার তিন ভাই, বোন, শ্বশুর, বোন জামাইসহ আত্মীয়দের গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হয়। পরে পৌর শহরের সিও অফিস মোড় সংলগ্ন বাইপাস সড়কের পাশে জমি কিনে প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় স্থাপন করেন।

সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাগীব আহসানসহ তার তিন ভাইয়ের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন পিরোজপুরের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. মহিউদ্দীন। এ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়েছে। আদালত যে মামলায় তাদের রিমান্ড দিয়েছেন ওই মামলায় ৯১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।

এ মামলার অভিযোগে বলা হয়, এহসান রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমিটেড বিভিন্ন গ্রাহকের কাছ থেকে ৯১ কোটি ১৫ লাখ ৫৫ হাজার ৯৩৩ টাকা নেয়।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাতে র‌্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১০-এর একটি দল রাজধানীর শাহাবাগ থানার তোপখানা রোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে রাগীব আহসান ও তার সহযোগী আবুল বাশার খানকে গ্রেফতার করে। পরে পিরোজপুর থেকে তার তিন ভাইকে গ্রেফতার করে পুলিশ।


সর্বশেষ সংবাদ