এমসি কলেজে ধর্ষণ: প্রধান আসামী গ্রেফতার
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১০:২৫ AM , আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১১:১৫ AM
সিলেটে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি ছাত্রলীগ নেতা সাইফুর রহমানকে (২৮) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রোববার সকাল ৮টার দিকে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা নোয়ারাই খেয়াঘাট থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, প্রযক্তির সহায়তায় সীমান্ত এলাকার দিকে আসামি সাইফুর রহমানের অবস্থান নিশ্চিতের পরই একটি দল পুলিশ নোয়ারাই খেয়াঘাট থেকে তাকে গ্রফতার করে। গ্রেফতারকৃত সাইফুর রহমান সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার সোনাপুরের চান্দাইপাড়ার মো. তাহিদ মিয়ার ছেলে।
সাইফুর অস্ত্র মামলারও আসামি। ঘটনার দিন রাত ৩টার দিকে এমসি কলেজের হোস্টেলে অভিযান চালিয়ে সাইফুর রহমানের কক্ষ থেকে একটি পাইপগান, চারটি রামদা ও একটি চাকু, দুটি লোহার পাইপ, প্লাসসহ বিভিন্ন জিনিস জব্দ করে। ছাত্রলীগের এই নেতার বিরুদ্ধে হোস্টেল সুপারের বাংলো দখলের অভিযোগও রয়েছে।
জানা যায়, ধর্ষণের শিকার তরুণীর বাড়ি সিলেটের দক্ষিণ সুরমায়। তিনি শুক্রবার বিকেলে স্বামীসহ নিজেদের গাড়িতে করে শহরের টিলাগড় এলাকায় এমসি কলেজে বেড়াতে যান। গাড়ি চালাচ্ছিলেন তাঁর স্বামী। সন্ধ্যার পর কলেজের প্রধান ফটকের সামনে গাড়ি রেখে তাঁরা একটি দোকানে কেনাকাটা করেন। পরে গাড়িতে ফিরে তাঁরা গল্প করছিলেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কয়েকজন যুবক তাঁদের গাড়ির কাছে আসে। তারা তরুণীকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে স্বামী বাধা দেন। তখন তাঁকে মারধর করে দুর্বৃত্তরা। এরপর অংশ নেন ধর্ষণে।
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, নিজেকে রক্ষা করতে ‘বাঁচাও, বাঁচাও’ বলে চিৎকার করেছিলেন ও গৃহবধূ। স্বামীও চিৎকার করছিলেন। এ সময় উল্লাস করছিল ছাত্রলীগ কর্মীরা। চিৎকারের আওয়াজ রোধ করতে তারাও করে চিৎকার। চিৎকার শুনলেও হোস্টেলে থাকা শিক্ষার্থীরা কেউ এগিয়ে আসেনি। গৃহবধূর স্বামী এক বর্ণনায় জানান, ধর্ষণের সময় কয়েকজন পাহারা দিচ্ছিলো। তখন ওই ভবনের ২য় তলা থেকে এক যুবক বারান্দায় বের হলে তাকে ধমক দিয়ে চলে যেতে বলে ছাত্রলীগের কর্মীরা। দূর থেকে আমি বিষয়টি দেখতে পাই। তবে তারা ফোন করে শাহপরান থানা পুলিশকে ঘটনাটি জানায়।
যদিও পুলিশ আসতে আসতেই গণধর্ষণের শিকার হন ওই বধূ। রাত ৯টার দিকে যখন পুলিশ এমসি কলেজের হোস্টেলে পৌঁছায় ততক্ষণে ধর্ষকরা সটকে পড়ে। হোস্টেলের সামনে দাঁড়িয়ে অঝোরে কাঁদছিলেন স্বামী-স্ত্রী। গণধর্ষণের কারণে স্ত্রী শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে স্বামী কাঁদছিলেন। পুলিশকে দেখেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন স্বামী-স্ত্রী দু’জনই। এরপর পুলিশ তাদের হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, মামলার আসামী সাইফুর, রনি ও মাহফুজুর ইংরেজি বিভাগের স্নাতক শ্রেণির অনিয়মিত শিক্ষার্থী। অর্জুন সাবেক শিক্ষার্থী। রবিউল বহিরাগত। ছয় ধর্ষকের কেউ সাবেক শিক্ষার্থী আবার কেউ বহিরাগত হলেও এমসি কলেজের ছাত্রাবাসই ছিল তাঁদের ঠাঁই।
এর আগে ২০১২ সালের ৮ জুলাই ছাত্রলীগ-শিবির সংঘর্ষের জেরে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে ছাত্রাবাসের ৪২টি কক্ষ ভস্মীভূত হলে নতুন করে তা নির্মাণ ও সংস্কার করা হয়। প্রথমে কেউ শনাক্ত না হলেও আদালতের হস্তক্ষেপে ছাত্রলীগ-শিবিরের বেশ কয়েকজনকে অভিযুক্ত করা হয়। তবে অগ্নিসংযোগ মামলার কার্যক্রমও থমকে আছে। এরই ফাঁকে ছাত্রলীগ পরিচয়ে আবার ছাত্রাবাস নিয়ন্ত্রণ নেয় একটি পক্ষ। যদিও এমসি কলেজ ছাত্রলীগ তো বটেই, সিলেট জেলা ও মহানগর শাখায় ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই।