মেয়েকে হারানোর পর আর বাস চালান না দিয়ার বাবা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০১৯, ১১:৪৮ AM , আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৯, ১১:৪৮ AM
রাজধানী ঢাকায় জাবালে নূর পরিবহনের বাস চাপায় নিহত হন দিয়া খাতুন মিম। কুর্মিটোলার শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন তিনি। ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই ওই দুর্ঘটনা ঘটে। প্রায় দেড় বছর পর সেই দুর্ঘটনার রায় হচ্ছে আজ রোববার (০১ ডিসেম্বর)।
দিয়ার বাবা জাহাঙ্গীর আলমও ছিলেন পেশায় বাসচালক। মেয়েকে হারিয়ে বলেছিলেন, ‘যে বাস মেয়েরে চাপা দিল, সেই বাস আর আমি চালামু না।’ দেড় বছর পরও সেই কথায় অটল থেকেছেন দিয়ার বাবা।
আবেগাপ্লুত জাহাঙ্গীর বলেন, ‘মেয়ে বেঁচে থাকলে সেকেন্ড ইয়ারে উঠতো। এখন এমন জায়গায় গেলো আর আইবো না। আর কোনোদিন সালাম দিবো না।’
তিনি বলেন, ‘যে বাসের ড্রাইভার মেয়েরে মারছে, ওরা ড্রাইভারগো মানসম্মান নষ্ট করছে। যারা দক্ষ ও জ্যেষ্ঠ চালক, তারা বেশি দুর্ঘটনা ঘটায় না। কিছু পোলাপান বাস চালাতে জানে না। হালকা যানের লাইসেন্স নিয়া ভারী যান চালায়। ওরাই বেশি দুর্ঘটনা ঘটায়।’
মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় একই কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম রাজীবও প্রাণ হারান। আহত হন আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী। সড়ক দুর্ঘটনায় মেয়েকে হারানোর পর বাস চালানো ছেড়ে দিয়েছেন দিয়ার বাবা।
মহাখালী বাস টার্মিনালের পাশে চা-নাশতার দোকান দিয়েছেন তিনি। মেয়ের স্মৃতি বিজড়িত সেই বাড়িতেও তিনি থাকতে পারেন না। ফলে বাসাও বদল করেছেন। মেয়ের ছবি মোবাইলের ওয়ালে রেখে দিয়েছেন। প্রতি মুহূর্তেই মনে পড়ে মেয়েকে। মেয়ের পাশে থাকতে কবর দিয়েছেন মহাখালী রহিম মেটাল মসজিদের পাশের কবরস্থানে।
মেয়ের স্মৃতি ধরে রাখতে দিয়ার স্কুলেই ভর্তি করেছেন ছেলে রিয়াদুল ইসলামকে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে সে। আরেক মেয়ে রোকেয়া কানন রিয়া এইচএসসি প্রথম বর্ষে পড়ছে।
ঢাকার রাস্তায় এখনো শৃঙ্খলা আসেনি। বিষয়টি নিয়ে আক্ষেপ করে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘দিয়ার মৃত্যুর পর ছাত্ররা রাস্তায় নামলো। রিকশা, কার, বাস চলার আলাদা লেন হলো। কতো আন্দোলন হল, এখন তা নাই। অথচ এটা হইলে ঢাকায় দুর্ঘটনা কমে আসতো।’
সরকারের লোকেরা যেন ভালোভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে চালকের হাতে লাইসেন্স দেন সেটাই এখন তার চাওয়া। টাকা নিয়ে যেন সবার হাতে হাতে লাইসেন্স না দেওয়া হয়।
মেয়ের স্মৃতি খোঁজেন এখনো জাহাঙ্গীর। তিনি বলেন, ‘মেয়ের স্কুলে যাই। মেয়েটাকে যে জায়গায় বাসচাপা দিয়েছে সেখানে গিয়ে দাঁড়াই। বুকটা হাহাকার করে ওঠে। আশা করি, ন্যায়বিচার হলে ঘাতকদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে। মেয়ের আত্মাটা শান্তি পাবে, আমরাও শান্তি পাবো।’