স্বামীহারা সাধনার জীবন ছিল উশৃঙ্খলতায় ভরা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০১৯, ০৯:০৪ AM , আপডেট: ২৬ আগস্ট ২০১৯, ১১:২২ AM
জামালপুর জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীরের যৌন কেলেঙ্কারির ভিডিও প্রকাশের পর তাকে ওএসডি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ খবর জানাজানির পর জেলা প্রশাসক অফিসের অফিস সহকারী (পিয়ন) সানজিদা ইয়াসমিন সাধনাকে নিয়ে মুখরোচক নানা কথা বলতে শুরু করেছেন। যারা ভয়ে এতদিন আহমেদ কবীর ও তার শয্যাসঙ্গীকে নিয়ে কোন কথা বলেননি, তারাও মুখ খুলতে শুরু করেছেন।
ভুক্তভোগীদের কয়েকজন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সানজিদা ইয়াসমিন অফিসে দোর্দণ্ড প্রতাপে দাপিয়ে বেড়াতেন। শুধু কর্মচারীরাই নন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও তিনি পাত্তা দিতেন না। চাকরি হারানোর শঙ্কায় প্রতিবাদ করতে সাহস পেতেন না কেউ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানিয়েছেন, ২০১৮ সালে উন্নয়ন মেলায় হস্তশিল্পের স্টল বরাদ্দ নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীরের সাথে দেখা করেন সাধনা। সে সময় সাধনার রূপে মুগ্ধ হয়ে বিনামূল্যে স্টল বরাদ্দ দেন ডিসি আহমেদ কবীর। পরে উন্নয়ন মেলা চলাকালে আহমেদ কবীরের সঙ্গে সখ্য আরও গভীর হয়। একপর্যায়ে সে সখ্য রূপ নেয় শারীরিক সম্পর্কে। সম্প্রতি সেই অবৈধ সম্পর্কের একটি ভিডিওচিত্র ভাইরাল হয়। তারপর থেকে ‘টক অব দি কান্ট্রি’তে পরিণত হন তারা।
যেভাবে চাকরি পান সাধনা: চলতি বছর জানুয়ারিতে ডিসি অফিসে ২৭ জনকে অফিস সহায়ক (পিয়ন) পদসহ ৫৫ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়। সেই সম্পর্কের সূত্র ধরে ডিসি অফিসে পিয়ন (অফিস সহকারী) পদে নিয়োগ পান সানজিদা ইয়াসমিন সাধনা। সেই সঙ্গে তার দুই আত্মীয় রজব আলী ও সাবান আলীকে অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ পাইয়ে দেন তিনি।
অফিস সহায়ক বা সহকারী পদে সাধনা যোগদান করার পর জেলা প্রশাসকের অফিস কক্ষের পাশে ‘খাসকামরা’ হয়ে ওঠে মিনি বেডরুমে। যেখানে খাট ও অন্যান্য আসবাবপত্র দিয়ে সাজ-সজ্জা করা হয়। সে রুমেই চলত আহমেদ কবীর-সাধনার রঙ্গলীলা। অফিস চলাকালে তাদের রঙ্গলীলা অবাধ ও নির্ঝঞ্ঝাট করতে সেই কামরার দরজায় বসানো হয় লাল ও সবুজ বাতি। রঙ্গলীলা চলাকালে ‘লালবাতি’ জ্বলে উঠত। সে সময় দরজার সামনে পাহারায় থাকতেন তাদেরই বিশ্বস্ত কোনও অফিস সহকারী।
যতক্ষণ লালবাতি জ্বলতো সাক্ষাৎপ্রার্থীতো দূরের কথা কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও প্রবেশাধিকার নিষেধাজ্ঞা ছিল। এ সময় তার অফিসের বাইরে ফাইলপত্র নিয়ে অপেক্ষায় থাকতেন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সাক্ষাৎপ্রার্থীরা। লীলা শেষ করে পরিপাটি হয়ে যখন চেয়ারে বসতেন, তখন জ্বলে উঠতো সবুজ বাতি। ‘সবুজ বাতি’ জ্বলে ওঠার পরই শুরু হতো তাদের দাপ্তরিক কার্যক্রম।
পড়ুন: ১০ বছরে ২৭৪৮ অভিযোগ প্রশাসনে, যৌন কেলেঙ্কারির শাস্তি ওএসডি!
কে এই সাধনা? সাধনার জন্ম জামালপুর শহরের পাথালিয়া গ্রামে। মা ফেলানী বেগম। বাবা অহিজুদ্দিন। বাবার পেশা ছিল ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে মালামাল আনা-নেয়া। সাধনার জন্মের সময় অহিজুদ্দিনের ঘরে দেখা দেয় অভাব। সাধনার বয়স যখন ৭ দিন, তখন অভাবের তাড়নায় তাকে দত্তক দেন মাদারগঞ্জ উপজেলার বালিজুড়ি ইউনিয়নের সুখনগরী গ্রামের নিঃসন্তান খাজু মিয়া ও নাছিমা আক্তার দম্পতির কাছে। তাদের লালন-পালনে বেড়ে ওঠা সাধনার লেখাপড়া চলাকালেই বিয়ে হয় একই উপজেলার জোনাইল গ্রামের বেসরকারি কোম্পানির কর্মচারী জাহিদুল ইসলামের সাথে। তাদের ঘরে পূর্ণ নামের এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়।
২০০৯ সালে মারা যান সাধনার স্বামী। স্বামীর মৃত্যুর পর তার পালক পিতামাতার সাথে জামালপুর শহরের বগাবাইদ গ্রামে বসবাস শুরু করেন। পরে টাঙ্গাইলের এক পুলিশ কনস্টেবলের সাথে পালিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেন তিনি। সাধনার উশৃঙ্খল জীবন-যাপন ও অবাধ চাল-চলনের কারণে টেকেনি দ্বিতীয় বিয়েটিও। দ্বিতীয় বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর তিনি নিজ ঘরেই দোকান দিয়ে বিক্রি করতেন দেশি-বিদেশি প্রসাধনী। সেই ব্যবসাতেও টিকতে না পেরে শুরু করেন হস্তশিল্পের ব্যবসা। ২০১৮ সালের উন্নয়ন মেলায় হস্তশিল্পের স্টল বরাদ্দ নিয়েই ডিসি আহমেদ কবীরের সাথে গড়ে সম্পর্ক।