ছেলেকে শিক্ষক বানালাম, এখন তার হাতেই লাঞ্ছিত—মায়ের কান্নাজড়িত কণ্ঠে অভিযোগ
- ভোলা প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৫, ০৭:৪৮ PM , আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৫, ০৯:৫৫ AM

ভোলার চরফ্যাশনে মাকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে এক স্কুল শিক্ষকের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত মাকসুদুর রহমান (৪৫) শশীভূষণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এবং আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা। আজ শুক্রবার (৪ জুলাই) উপজেলার দুলারহাট থানার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মুজিবনগর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে এই ঘটনা ঘটে।
ছেলের বিচার চেয়ে আদালতে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান মা বিবি ফাতেমা। ছেলের হাতে মারধরে গুরুতর আহত হয়ে চরফ্যাশন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মা রয়েছেন বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, বিবি ফাতেমার চার ছেলে ও দুই মেয়ে। সন্তানদের মধ্যে সবার বড় মাকসুদুর রহমান। বর্তমানে শশীভূষণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। এক সময় বিবি ফাতেমা স্বামী হারুন মোল্লাকে নিয়ে উপজেলার আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নের বসবাস করতেন। মাকসুদ স্কুলে চাকরি নেওয়ার পর ছোট তিন ভাইকে তার বাবার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করছে বলে অভিযোগ করছেন ভুক্তভোগীরা।
মাকসুদ তার নিজের নামে বাবার সম্পত্তি লিখে নেয়ার জন্য প্রায় সময় মারধর করত মা বিবি ফাতেমাকে। ৮ বছর আগে বাবা-মাকে মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেয়। পরে কৃষক ছেলের কাছে আশ্রয় নেয় মা। সেখানে গিয়েও মাকসুদ তার বাবাকে ব্যাপক মারধর করে। পরে অসুস্থ হয়ে প্রায় ৬ মাস আগে স্বামী হারুন মোল্লার মৃত্যু হয়।
আজ সকালে মাকসুদ বহিরাগত লোকজনদের নিয়ে মুজিবনগরের সম্পত্তি দখলে নিতে সফিককে (মাকসুদের ভাই) মারধর করে। এসময় তাকে বাঁচাতে িমা বিবি ফাতেমা এগিয়ে গেলে, তাকেও মারধর করে। পরে অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয়দের সহায়তায় হাসপাতালে নেওয়া হয়।
বিবি ফাতেমা বলেন, ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়ে শিক্ষক বানালাম, অথচ সেই ছেলের হাতেই আজ আমি লাঞ্ছিত। ছেলের অত্যাচার সইতে না পেরে বৃদ্ধ স্বামীকে নিয়ে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মুজিবনগরে গিয়ে কৃষক ছেলের কাছে আশ্রয় নিয়েছি। আবার জমির জন্য আমার গায়ে হাত তুলেছে। আজ ছেলে মাকসুদকে নিজের ছেলে হিসেবে পরিচয় দিতে খুব কষ্ট হয়। কারণ তার হাতে তার বাবা মারধরের শিকার হয়ে দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর মৃত্যু বরণ করেন।
মাকসুদের ছোট ভাই সফিক ও ছিদ্দিক বলেন, আমার ভাইকে বাবা শিক্ষিত করেছেন। ওই সময় আমরা জমিতে কৃষি কাজ করেছি। ভাই লেখা-পড়া শেষে স্কুলে চাকরি করছেন। বাবার সম্পত্তি নিজের নামে করার জন্য বাবা-মাকে বিভিন্ন সময়ে মারধর করতেন। আমাদের সম্পত্তিও দখলে রেখেছেন।
এ বিষয়ে স্কুল শিক্ষক মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘ভাইদের দ্বারা মা প্রভাবিত হয়ে এমন অভিযোগ করেছেন, অভিযোগটি সঠিক নয়।’
দুলারহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফ ইফতেখার বলেন, ‘এ ঘটনায় এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মা-বাবার ওপর সন্তানের হামলা সবচেয়ে ঘৃণিত ও ন্যাক্কারজনক অপরাধ।’