ফেনীতে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় সাজার চেয়ে খালাস বেশি
- এমএ আরাফাত ভূঞা, ফেনী প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২৫, ০৫:৩১ PM , আপডেট: ১২ মার্চ ২০২৫, ০৫:৪৯ PM

ফেনীতে নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়েনি, তবে পারিবারিক কলহজনিত কারণে মামলার প্রবণতা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। গত ২০২৩ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত ৬৯২টি মামলার নিষ্পত্তি করা হলেও সাজা হয়েছে মাত্র ১০ জনের, বিপরীতে ২৬৭ জন আসামি খালাস পেয়েছেন এবং ৬৪ জনকে ডিসচার্জ করা হয়েছে। বিচারাধীন মামলার সংখ্যা বছর শেষে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৪টিতে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে সাজার চেয়ে খালাস পান বেশিরভাগ আসামি।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের শেষ পর্যন্ত ফেনীতে মোট ২ হাজার ৩২টি মামলা দায়ের হয়। এর মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা ১ হাজার ২৭০টি, শিশু সংক্রান্ত মামলা ৫৬৬টি, অভিযোগ ১৮০টি এবং মানবপাচার সংক্রান্ত মামলা ১৬টি। ২০২৪ সালে নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা কিছুটা কমলেও অভিযোগের সংখ্যা বেড়েছে। গত বছর দায়ের হওয়া ৭১৪টি মামলার মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা ছিল ২৯৯টি, অভিযোগ ২৭৭টি, শিশু নির্যাতন মামলা ১৩৫টি এবং মানবপাচারের মামলা ৩টি।
২০২৪ সালে ফেনী জেলার বিভিন্ন থানায় নারী ও শিশু নির্যাতনের ১২১টি মামলা রেকর্ড হয়েছে। এর মধ্যে ফেনী সদরে ৬২টি, দাগনভূঞায় ১৩টি, সোনাগাজীতে ১৯টি, ছাগলনাইয়ায় ১৬টি, ফুলগাজীতে ৬টি এবং পরশুরামে ৫টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় পুলিশ মোট ১৩৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা প্রসঙ্গে ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী কাজী তাসনিম জাহান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা সমাজে প্রতিনিয়ত ঘটছে, তবে আদালতে এসব মামলার সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সামাজিকভাবে ঘটনাগুলো মীমাংসার চেষ্টা করা হয়। সামাজিক প্রতিবন্ধকতা এবং ভয়ভীতি প্রদর্শনের কারণে অনেক ভুক্তভোগী নারী আইনের আশ্রয় নিতে সাহস পান না। ফলে নির্যাতনের শিকার নারীরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হন।
এ ব্যাপারে ফেনী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মেজবাহ উদ্দিন খান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, নারী সংক্রান্ত কিছু অপরাধের মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও ফেনীতে গুরুতর নারী নির্যাতনের মামলার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য বাড়েনি। তিনি বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার মধ্যে অধিকাংশই পারিবারিক কলহজনিত স্বামী-স্ত্রীর মামলা। কিন্তু ধর্ষণ, অপহরণের মতো ইত্যাদি গুরুতর অপরাধের মামলা বৃদ্ধির কোনো প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়নি বলে জানান তিনি।
অপহরণ মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেক সময় দেখা যায়, মেয়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে স্বেচ্ছায় ছেলের সঙ্গে পালিয়ে যায়। পরে মেয়ের পরিবার অপহরণের মামলা দায়ের করে, যা প্রকৃত অর্থে অপহরণের সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে না।
তিনি আরও বলেন, ফেনীতে ধর্ষণ ও অপহরণের মতো গুরুতর অপরাধের মামলা বৃদ্ধির কোনো প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়নি। ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধ রোধে তিনি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নকে অপরিহার্য উল্লেখ করেন। পাশাপাশি, সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের নৈতিক মানোন্নয়ন এবং সামাজিকভাবে ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।
ফেনীর পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত মামলাগুলোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়। ভিকটিমদের সহায়তা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতে জেলা পুলিশ ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করছে।