বিদ্যুৎখাতের দুর্নীতি নিয়ে কথায় বলায় ‘মব জাস্টিসে’র কবলে পাওয়ার গ্রিডের কর্মকর্তা

হেনস্তার সময় ধারণকৃত ভিডিও থেকে তোলা ছবি
হেনস্তার সময় ধারণকৃত ভিডিও থেকে তোলা ছবি  © টিডিসি সম্পাদিত

পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ পিএলসির প্রধান কার্যালয়ের উপ-ব্যবস্থাপক মুহাম্মদ ছলিমুল্লাহ সম্প্রতি বিদ্যুৎখাতে দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে আলোচনা করার কারণে সহকর্মীদের উসকানিতে হেনস্তার শিকার হয়েছেন। এসময় ‘মব জাস্টিসে’র কবলে পড়েছেন বলেও থানায় দেয়া লিখিত এক অভিযোগে উল্লেখ করেন এই কর্মকর্তা।

গত বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) পাওয়ার গ্রিডের প্রধান কার্যালয়ের লেভেল-২ তে গিয়ে, তিনি মহাব্যবস্থাপক (পিএন্ডএ)-এর অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রসঙ্গে মন্তব্য করলে এমন পরিস্থিতির স্বীকার হন তিনি। এরপর আজ রবিবার (১ ডিসেম্বর) সকালে প্রায় শতাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী তার বিরুদ্ধে তেড়ে এসে তাকে হুমকি প্রদান করে এবং শারীরিকভাবে আক্রমণ করার চেষ্টা করে। পরে দুপুরে এ ঘটনায় তিনি রাজধানীর বাড্ডা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন।

এদিকে, এ ঘটনায় আজ সন্ধ্যা থেকে মুহাম্মদ ছলিমুল্লাহকে বহিষ্কারের দাবিতে পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ পিএলসির প্রধান কার্যালয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ভুক্তভোগী কর্মকর্তাকে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সন্ধ্যায় ৭টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তিনি অবরুদ্ধ ছিলেন বলে জানা গেছে।

লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, মুহাম্মদ ছলিমুল্লাহ দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎখাতে দুর্নীতি এবং সরকারের অসঙ্গত কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কথা বলে আসছিলেন। তিনি সাবেক বিদ্যুৎ উপদেষ্টার আশপাশের কিছু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম এবং দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তা প্রকাশ্যে আনেন এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেন। তার এসব বক্তব্য পাওয়ার গ্রিডের কিছু কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের কাছে খারাপভাবে গৃহীত হয় এবং তাকে চাকরির মায়া করার কথা বলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মাধ্যমে  হুমকি দেওয়া হয়।

এ ঘটনার পর, পাওয়ার গ্রিডের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ছলিমুল্লাহকে একাধিকবার চাকরিকে কেন্দ্র করে ভয় দেখানো হয়। একই সঙ্গে, তিনি যে তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে এক উপ-সহকারী প্রকৌশলীকে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন, সে বিষয়টিও আলোচিত হয়। সেই তদন্ত কার্যক্রম চলাকালে ডিপ্লোমা প্রকৌশলী নেতাদের একটা অংশ তদন্তে দোষী ব্যক্তির পক্ষে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য প্রভাব দেখায়। এজন্য তারা আমাকে হুমকি প্রদান করছে। অভিযুক্ত ব্যক্তি অত্যন্ত শক্তিশালী ও ক্ষমতাধর, যিনি সব মহলকে ম্যানেজ করে দুর্নীতি করে আসছেন। পাওয়ার গ্রিডের ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতির কিছু নেতা অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত না করার জন্য প্রভাব বিস্তার করেন এবং এই অভিযোগের তদন্তে বাধা সৃষ্টি করেন।

তবে, পাওয়ার গ্রিডের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে সমর্থন দিয়ে অভিযোগকারীর চাকরি চলে যাবে মর্মে হুমকি দেন।

এই বিষয়ে পাওয়ার গ্রিডের উপ-ব্যবস্থাপক মুহাম্মদ ছলিমুল্লাহ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, আমি কিছু গোপন দুর্নীতি, বদলি ও নিয়োগ বাণিজ্যের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে কথা বলে আসছি। আমি কখনোই দুর্নীতি বা অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলা থামাব না, কিন্তু এর ফলস্বরূপ এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। আমি নিরাপত্তা ও সুবিচারের জন্য বাড্ডা থানায় সাধারণ ডায়েরি করার জন্য লিখিত আবেদন করেছি।

এ বিষয়ে পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুর রশীদ খানকে একাধিকবার মুঠোফোন যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

তবে বাড্ডা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, অবরুদ্ধের বিষয়টি জানা নেই। এরকম কিছু ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


সর্বশেষ সংবাদ