‘পর্দা করলে ডাকাতের মতো লাগে’— ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে করা কলেজ শিক্ষকের মন্তব্য নিয়ে যা জানা গেল

উখিয়া কলেজের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল আলম
উখিয়া কলেজের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল আলম  © টিডিসি সম্পাদিত

কক্সবাজারের উখিয়া ডিগ্রি কলেজের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক তৌহিদুল আলমের বিরুদ্ধে নারী শিক্ষার্থীদের পর্দা নিয়ে বিদ্রুপ মন্তব্যের অভিযোগ উঠেছে।  গত বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) কলেজের হলরুমে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করেন বলে নিশ্চিত করেছেন প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক শিক্ষার্থী। পরে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে।

এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) কলেজ প্রশাসন থেকে একটি নোটিশ জারি করে ৩ সদস্যের একটি ‘নিরপেক্ষ’ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

ঘটনার সময় উপস্থিত কলেজের এক নারী শিক্ষার্থী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানায়, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কলেজের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল আলম স্যার নারী শিক্ষার্থীদের বলেন ‘পর্দা করলে ডাকাতের মত লাগে, পর্দা করতে ইচ্ছে হলে মাদ্রাসায় পড়ো, কলেজে কী? তারপর তিনি আমাদের বলেন, ‘তোমরা নেকাব খুলতে না পারলে ক্লাস থেকে বের হয়ে যাও।’

“আমাকে এর আগেও তিনি ক্লাসে ৩ বার নেকাব খুলতে বলেছে। আমি তখন কান্না করে দিয়েছি। কারণ আমি পর্দা করি।  আমি মনে করি, কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা ঠিক না।  আমি এই শিক্ষকের বিচার চাই।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানায়, ওইদিন কলেজে আন্তঃক্রীড়া প্রতিযোগিতা চলাকালীন তহিদুল ইসলাম স্যারের সঙ্গে আরিফ নামের ছেলেটার বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে অধ্যক্ষ স্যার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে প্রাথমিকভাবে বিষয়টা মীমাংসা করলেও বিকেলে আরিফসহ কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী তহিদুল ইসলাম স্যারের বিরুদ্ধে ‘পর্দা করলে ডাকাতের মতো লাগে’— ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে উঠা এমন অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেন। তবে সংবাদ সম্মেলনে কোনো ভুক্তভোগী উপস্থিত ছিলেন না বলে তিনি দাবি করেন। 

কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হামিদুল হক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে অনেক শিক্ষক নারী শিক্ষার্থীকে নেকাব খুলতে বাধ্য করেন। আবার অনেকে খারাপ মন্তব্যও করেন। এতে করে নারী শিক্ষার্থীরা খুবই বিব্রত হয়ে যায়। তবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তৌহিদুল আলম স্যার এমন মন্তব্য করেছে কিনা আমি জানি না। ঘটনাটি তিনি ফেসবুকে জানতে পেরেছেন বলে জানান। 

এ বিষয়ে কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. আরিফ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানায়, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অধিকার কারও নেই। সহকারী অধ্যাপক একজন মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও ধর্মীয় বিধানের বিরুদ্ধে স্পর্শকাতর মন্তব্য করেছেন। ধর্মীয় কারণে আমরা প্রতিবাদ করেছি। একজন মুসলিম হয়ে কখনো এটি আমি মেনে নিতে পারি না। এখন আমার জীবন হুমকির মধ্যে।  তিনি আমার বিষয়ে যে অভিযোগ করেছেন তা সত্য নয়।  আমি ব্যক্তিগত কোনো আক্রোশে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায়নি। 

তবে অভিযোগ মিথ্যা উল্লেখ করে উখিয়া কলেজের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল আলম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানায়, এটি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।  কলেজের বার্ষিক সংস্কৃতি অনুষ্ঠানে এইচএসসির মানবিক বিভাগের আরিফ নামের একটি শিক্ষার্থীকে প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থান করায় ক্ষুব্ধ হয়ে আমার বিরুদ্ধে এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।  

“আমরা শিক্ষকরা একটি রুমে বসে ছিলাম। তাকে আমি কেন ১ম ঘোষণা করলাম না তাই সে কয়েকটি শিক্ষার্থী নিয়ে এসে আমার সাথে বাকবিতণ্ড করে। পরে ওই শিক্ষার্থী নিজেকে সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে আমাকে বলে, তাকে আমি ১ম ঘোষণা করতে। আমি তাকে বলেছি, যেহেতু তুমি সমন্বয়ক তাহলে তুমি নাহিদ-সারজিসের কাছে গিয়ে বিচার দাও তারা তোমাকে ১ম করে দিবে। তারপর তাকে আমি রুম থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছি।”

তিনি আরও জানান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের পর্দা থাকলে খুলে রেজিস্ট্রেশন কার্ডের সাথে মিলাতে হয়। যদিও আমি ২ বছর যাবত পরীক্ষার হলে ডিউটি করি না। ২ বছর আগে পরীক্ষার্থীদের হলে পরীক্ষকের দায়িত্ব পালনকালে রেজিস্ট্রেশন কার্ডের সাথে শিক্ষার্থীদের পরিচয় মিলাতে গিয়ে ছাত্রীদের নেকাব খুলতে বলেছি। সেই বিষয়কে তারা এখন সামনে এনেছে। 

এ বিষয়ে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ কামরুল হোসেন চৌং দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, বিষয়টি আমার নজরে আসার পর আমি কলেজের সাথে যোগাযোগ করি। পরে কলেজ অধ্যক্ষ জানান, একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।  কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তবে এই বিষয়ে জানতে উখিয়া কলেজের অধ্যক্ষকে কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। 


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence