ঘূর্ণিঝড় সিডরের ১৮ বছর : আজও ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে উপকূলবাসী
- মাইনুদ্দিন আল আতিক, কলাপাড়া (পটুয়াখালী)
- প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:৫৪ PM
২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর রাত। ঘূর্ণিঝড় সিডরের তাণ্ডবে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর ইউনিয়নের নিজামপুর বেড়িবাঁধ ভেঙে মুহূর্তেই তলিয়ে যায় গোটা জনপদ। ঘরবাড়ি, ফসল, গবাদিপশু থেকে শুরু করে মানুষের জীবন—সবকিছুই হয়ে যায় লণ্ডভণ্ড। সেই বিভীষিকাময় রাতের ১৮ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো টেকসই বেড়িবাঁধ পানি এ অঞ্চলের মানুষ। পরিবর্তন হয়েছে শুধু প্রশাসনিক কাঠামো—মহিপুর ইউনিয়ন এখন থানা, নেতৃত্বে এসেছে নতুন নতুন জনপ্রতিনিধি। কিন্তু ভাঙা বেড়িবাঁধের দুর্ভোগ রয়ে গেছে আগের মতোই।
এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বছরের পর বছর ধরে জোড়াতালি দিয়ে সংস্কার চালানো হলেও বর্ষা ও জোয়ারের চাপে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বাঁধ। সামান্য জলোচ্ছ্বাসেই পানিতে তলিয়ে যায় বাড়িঘর, নষ্ট হয় শত শত একর ফসলি জমি। কৃষকরা জমি হারিয়ে অনেকেই এখন জেলে পেশায় ঝুঁকেছেন। ঘূর্ণিঝড়ের আতঙ্ক আর আর্থিক ক্ষতির চাপ সইতে না পেরে বহু পরিবার এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে।
সরেজমিনে গণমাধ্যমকর্মীদের দেখে অনেকেই অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। স্থানীয়দের ক্ষোভ—‘সাংবাদিক আয় ছবি তোলে, ভিডিও করে… কিন্তু মোগো ভাগ্য আর বদলায় না।’
তারা বলছেন, বছরের পর বছর প্রতিশ্রুতি মিললেও টেকসই বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেই। একই দৃশ্য দেখা যায় নীলগঞ্জ ইউনিয়নের গইয়াতলা গ্রামেও—সিডরের ক্ষতচিহ্ন আজও চোখে পড়ে।
গইয়াতলার বাসিন্দা মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘সিডরের রাতে ঘরবাড়ি, ফসল, গবাদিপশু—কিছুই রেহাই পায়নি। ১৮ বছর পরও আন্ধারমানিক নদীর মোহনায় ভাঙা বেড়িবাঁধ না হওয়ায় আমরা এখনো ঝুঁকিতে। অনেক পরিবার আজও সেই ধকল কাটিয়ে উঠতে পারেনি।’
উপজেলার ধুলাসার, মহিপুর, চম্পাপুর ও লালুয়া ইউনিয়নের প্রায় ১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সম্পূর্ণ অরক্ষিত। এসব এলাকার তিন হাজারের বেশি পরিবার এখনো সাগর-নদীর ঢেউয়ের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে আছে।
সরকারি-বেসরকারি সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৭ সালের সিডরে শুধু কলাপাড়াতেই প্রাণহানি ঘটে ৯৪ জনের। আহত হন ১ হাজার ৭৮ জন, নিখোঁজ হন সাত জেলে। মারা যায় ৪,৯৪৪টি গবাদিপশু, ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৫৫৩টি নৌযান।
এ বিষয়ে কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহ আলম বলেন, ‘বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ দ্রুত নির্মাণে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছি। অনেক অংশে জিও ব্যাগ দিয়ে অস্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে।’
১৮ বছর পরও জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলে বসবাসকারী মানুষের ভাগ্যে টেকসই বেড়িবাঁধ না আসার ঘটনায় হতাশ স্থানীয়রা। তাদের একটাই দাবি—প্রতিশ্রুতির অবসান ঘটিয়ে দ্রুত স্থায়ী ও শক্তিশালী সুরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা।