যশোরে ফ্লাইওভার কাম রেলওয়ে ওভারপাসের কাজ শুরু
- যশোর প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৪৫ AM
মহাসড়কে যানজট নিরসনে যশোরের আরবপুর মোড় থেকে চাঁচড়া পর্যন্ত ফ্লাইওভার কাম রেলওয়ে ওভারপাসের কাজ শুরু হয়েছে। ফলে যশোরের বেনাপোল ভোমরা স্থলবন্দর থেকে পণ্যবোঝাই ট্রাকসহ যাত্রীবাহী বাস চলাচল এবং অর্থনীতিতে নতুন দিগন্তের উন্মোচিত হতে যাচ্ছে বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
ওয়েস্টার্ন ইকোনমিক করিডোর (উইকেয়ার, ফেজ-১)-প্রকল্পের আওতায় যশোর সদরের মুরাদগড় থেকে শহরের চাঁচড়া মোড় পর্যন্ত ১৫ দশমিক ৮ কিলোমিটার রয়েছে। এই প্রকল্পের অধীনে মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীত করা হবে।
তবে, ধীরগতিতে কাজটি চলছে মূলত জমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে বলছেন সংশ্লিষ্টরা। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বেনাপোল ঢাকা, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আমদানি করা পণ্য বোঝাই ট্রাক সাবলীল গতিতে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে বলে আমদানিকারক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও ট্রাক মালিকদের সংগঠন মনে করছে।
উইকেয়ার, ফেজ-১ প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে যশোর- ঝিনাইদহ উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে ৮৯২ কোটি কোটি ব্যয়ে যশোর সদরের মুরাদগড় থেকে শহরের চাঁচড়া মোড় পর্যন্ত ৬ লেনের কাজ শুরু হয়েছে। মূলত দুর্ঘটনারোধ, নিরবিচ্ছিন্ন যাতায়াত, রেলক্রসিংয়ে জট থেকে মুক্তির জন্যে এই কাজ। আরবপুর মোড় থেকে চাঁচড়া পর্যন্ত দুটি রেলক্রসিং রয়েছে। সেখানে দুই কিলোমিটার বেশি (২.০৬৯) ফ্লাইওভার কাম রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ করা হবে। সে লক্ষ্যে ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া যশোর-ঝিনাইদহ সড়কের বারীনগর ও চুড়ামনকাটি বাজারে দীর্ঘ যানজট হয় মূলত সবজির বাজারের কারণে। সেখানে দুটি পিওপি (পেডিস্ট্রিয়ান ওভারপাস) ছাড়াও যশোর সেনানিবাস এলাকায় ৪১৫ মিটার ভিওপি (ভেহিকুলার ওভারপাস) নির্মাণ করা হবে। ২০২৭ সাল নাগাদ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন সম্ভব বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এদিকে, এই সড়ক ব্যবহারকারী পাবনা রুটের বাসের চালক মো. নাহিদ বলেন, চাঁচড়া থেকে পালবাড়ী মোড় পর্যন্ত রাস্তার অবস্থা খুবই করুণ। এছাড়া পার হতে হয় দুটি রেলক্রসিং। অনেক সময় ট্রেনের জন্যে আমাদের অনেকক্ষণ দাড়িয়ে থাকতে হয়। সেইসময় দু’পাশে যানজট লেগে যায়। এতে অনেক সময় লাগে। ৬ লেন মহাসড়ক ও ওভারপাস নির্মাণ সম্পন্ন হলে আমাদের শ্রমঘণ্টা অনেক বেঁচে যাবে।
যশোর-কুষ্টিয়া ও যশোর-খুলনা রুটের বাসচালক মুসলিম আলী বলেন, সড়ক সংকীর্ণ ও যানজটের কারণে আমাদের ঘণ ঘণ ব্রেকে পা দেওয়া লাগে। এতে ইঞ্জিনসহ গাড়ির অন্যান্য ক্ষতি হয়। তাছাড়া রাস্তায় সময়ও নষ্ট হয়। মহাসড়কটি ঠিক হলে সময়মতো আমরা গন্তব্যে পৌছাতে পারবো।
আরও পড়ুন: জাকসু নির্বাচনে ৮ হলের অনানুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা
এ বিষয়ে বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৪শ’ থেকে ৫শ’ ট্রাক ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। রাস্তা সংকীর্ণ এবং জরাজীর্ণ হওয়ায় পরিবহণ চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। প্রায় সময়ই রাস্তায় ট্রাক আটকা থাকে। এতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
জানতে চাইলে বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজিম উদ্দিন গাজী বলেন, বেনাপোল থেকে ঢাকা পর্যন্ত ৬ লেনের রাস্তা হলে সবচেয়ে ভালো হয়। বেনাপোলে পণ্যবাহী ট্রাক, মালামাল লোড-আনলোড, খালি গাড়ি আর যাত্রীবাহী বাসের কারণে প্রধান সড়কে অধিকাংশ সময়ই যানজট লেগে থাকে। প্রতিদিন সাড়ে ৪শ’ থেকে সাড়ে ৫শ’ পণ্যবোঝাই ট্রাক বেনাপোল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। অনেকসময় এই যানজটের কারণে মুমূর্ষু রোগীদের মৃত্যুও ঘটেছে।
তিনি আরও বলেন, ফ্লাইওভার ও রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ করা হলে অমাদের অযথা সময় নষ্ট হবে না। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার বাড়বে বলে মনে করছি।
ওয়েস্টার্ন ইকোনমিক করিডর (উইকেয়ার, ফেজ-১)-এর পরিচালক প্রকৌশলী নকিবুল বারী বলেন, প্রকল্পটি ২০২০ সালে অনুমোদন হলেও ডিজাইন ও ঠিকাদার নিয়োগ করতে প্রায় সাড়ে তিন বছর সময় লেগেছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে মূল চ্যালেঞ্জ ভূমি অধিগ্রহণ। যশোর অংশের ৫৩ একর জমি অধিগ্রহণে চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়া গেছে। আরও ৭ একর জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। জেলা প্রশাসক জমি ও স্থাপনার ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করবে। তাদের চাহিদার ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করা হবে। জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হলে দ্রুত কাজ এগিয়ে নিতে পারব। আশা করছি, ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের ৯০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হবে।
যশোরের জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম বলেন, ভূমি অধিগ্রহণের চূড়ান্ত অনুমোদন হয়েছে। এবার মৌজা মূল্য অনুযায়ী সরকারি নিয়মে জমির প্রাক্কলন ব্যয় নির্ধারণ করা হবে। প্রাক্কলন ব্যয় নির্ধারণের পর আমরা প্রত্যাশী সংস্থা বরাবর চিঠি দিয়ে টাকার অঙ্ক জানাবো। আমাদের অ্যাকাউন্টে জমা দিলেই জমি ও স্থাপনার মালিককে ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ করে জমি প্রকল্পে হস্তান্তর করা হবে। তারা বারীনগর বাজার এলাকায় পিওপি করতে চেয়েছে। তাদের বলেছি সেখানে ভিওপি করতে, না হলে সবজি বাজারে যে যানজট তা থাকবেই। তারা ডিজাইনে পরিবর্তন আনতে পারে।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ২৪ নভেম্বর একনেক সভায় ওয়েস্টার্ন ইকোনমিক করিডোর (উইকেয়ার, ফেজ-১) যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কের ৪৭ দশমিক ৪৮ কিলোমিটার সড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণের প্রকল্প পাস হয়। চার হাজার ১৮৭ কোটি ৭০ লাখ টাকার এ প্রকল্পের মেয়াদ ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। পরে প্রকল্পের ব্যয় ছয় হাজার ৬২৬ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ও মেয়াদ ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে তিনটি লটে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম লটে ঝিনাইদহ শহরের বাস টার্মিনাল থেকে কালীগঞ্জ মাহাতাব উদ্দিন কলেজ পর্যন্ত ১৫ দশমিক ৯ কিলোমিটার মহাসড়ক। দ্বিতীয় লটে কালীগঞ্জের মাহাতাব উদ্দিন কলেজ থেকে যশোর সদরের মুরাদগড় পর্যন্ত ১৫ দশমিক ৮ কিলোমিটার। এবং যশোর সদরের মুরাদগড় থেকে শহরের চাঁচড়া মোড় পর্যন্ত তৃতীয় লটে ১৫ দশমিক ৮ কিলোমিটার ।