চাকরিচ্যুত শিক্ষক আন্দোলনে আটক হওয়া সমন্বয়কসহ ২৭ জনের মুক্তি

সমন্বয়কসহ ২৭ জনের মুক্তি
সমন্বয়কসহ ২৭ জনের মুক্তি  © টিডিসি ফোটো

কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের আন্দোলন চলাকালে আটক হওয়া সমন্বয়কসহ ২৭ জনকে সাত ঘণ্টা পর মুক্তি দিয়েছে পুলিশ। বুধবার (২০ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সর্বদলীয় বৈঠকের মাধ্যমে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জসীম উদ্দিন বলেন, ‘আগামী ২৫ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কক্সবাজার সফরে আসবেন। সফরের আগে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে শিক্ষকদের মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তারা সড়কে বিশৃঙ্খলা করছিলেন বলেই জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল।’

অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী নেতা সুজা উদ্দিন জানান, বৈঠকে একটি ঐক্যমত পত্র তৈরি হয়েছে। সেখানে শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি ও তাদের ওপর সংঘটিত অন্যায়ের বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘দাবি আদায়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে কথা বলা হবে।’

মুক্তির পর আন্দোলনকারীরা উখিয়া শহীদ মিনারে জড়ো হন। সেখানে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সরোয়ার জাহান চৌধুরী ঘোষণা দেন, প্রধান উপদেষ্টার সফরকে কেন্দ্র করে আন্দোলন আপাতত স্থগিত রাখা হবে এবং দাবির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক হবে।

সংহতি জানাতে গিয়ে আটক হওয়া ‘২৪-এর গণঅভ্যুত্থান’ সমন্বয়ক ও বাগছাস নেতা জিনিয়া শারমিন রিয়া মুক্তির পর বলেন, ‘আমরা পুলিশের হামলায় জড়িত সদস্যদের শাস্তি ও ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করছি।” আন্দোলনের সমন্বয়ক শামিম হোসেন অভিযোগ করেন, “ওসি সাহেব আমাদের অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে নির্যাতন করেছেন। আমরা এর বিচার চাই।’

এর আগে সকালে আন্দোলনের সময় পুলিশ লাঠিচার্জ করলে নারীসহ তিন শিক্ষক গুরুতর আহত হন এবং অন্তত সাতজনকে আটক করা হয়। পরে হাসপাতালে আহতদের দেখতে গেলে আরও ২০ জনকে আটক করে পুলিশ। দুপুরে আটক সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে থানার সামনে পাঁচ শতাধিক আন্দোলনকারী জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বিকেল ৩টার দিকে আন্দোলনকারীরা থানার ফটকের তালা ভাঙার চেষ্টা করলে ফের লাঠিচার্জ হয়। এতে অন্তত ১০ জন আহত হন, যাদের মধ্যে এনসিপির জেলা সংগঠক খালিদ বিন সাইদ ও এক গণমাধ্যমকর্মীও রয়েছেন।

আরও পড়ুন: ডাকসুতে সবচেয়ে কম নারী প্রার্থী ছাত্রদলে

উল্লেখ্য, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্থানীয় বাংলাদেশি শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন। তবে অর্থ সংকটের কারণে গত জুলাইয়ে প্রায় দেড় হাজার শিক্ষককে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরপর থেকেই তারা আন্দোলনে নামে। গত সোমবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়ক অবরোধ করলে শত শত গাড়ি আটকা পড়ে এবং ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, যুক্তরাষ্ট্র ফান্ড বন্ধ করায় ক্যাম্পভিত্তিক প্রকল্পগুলোতে অর্থ সংকট তৈরি হয়েছে। ইউনিসেফও সংকটে রয়েছে। তিনি বলেন, ‘তারা জানিয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষকদের জন্য কিছু করার চেষ্টা চলছে। তবে টাকা না পেলে কিছু করার উপায় নেই। স্থানীয়রাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, এসব চাকরির মাধ্যমে তারা কিছুটা স্বস্তি পেতেন।’


সর্বশেষ সংবাদ