যশোরে সবজির বাজারে উত্তাপ, অস্বস্তিতে ক্রেতারা
- রুহুল আমিন, যশোর
- প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৫, ১২:২৫ PM , আপডেট: ২১ জুন ২০২৫, ০২:১০ PM
গত শীত মৌসুম ও রমজানের আগে-পরে বাজারে সবজির দামে যে স্বস্তি ফিরেছিল, তা এখন উধাও হয়ে গেছে। গত তিন-চার মাস সবজি ধরে তুলনামূলক কম দামে সবজি কিনতে পারলেও, বর্তমানে যশোরের বাজারগুলোয় বেশির ভাগ সবজির দামই ৮০ টাকা ছাড়িয়েছে। আবার কিছু সবজির দাম ছাড়িয়েছে ১০০ টাকা। সবজি বাজারে ক্রেতাদের স্বস্তি নেই।
সরেজমিনে যশোরের বাজার ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে, সবজির দোকানগুলোয় গোল বেগুন, লম্বা বেগুন, করলা, পটল, লাউ, কাঁচা পেঁপে, শসা, গাজর, ফুলকপি, বরবটি, চিচিঙ্গা, মিষ্টিকুমড়া, ফিঙা, কচুর লতি, ঢেঁড়শসহ অন্যান্য সবজি কচুর লা সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশটির দামই কেজি প্রতি ৮০ টাকা বা তার বেশি। বরবটি, কচুর লতি, পটোল, ঝিঙ্গে, বেগুন, কচুর মুখি ও শালগম বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে। আর ঘাটকোল ও শজনের ডাটার দাম আকাশছোঁয়া। সবজি দুটি মানভেদে ১২০-১৬০ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি করা হচ্ছে। আর তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম দামে পাওয়া যাচ্ছে করলা, লাউ, ফিতে, ধুন্দুল, ঢ্যাঁড়স ও পেঁপে, যেগুলোর কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে। কেজি। সবচেয়ে কম দামের সবজি এখন টমেটো, যা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি। এ ছাড়া আলু ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি ও কাঁচামরিচ ৮০-১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
রহমান নামের এক ক্রেতা বলেন, তার বাড়ি খড়কি হাজামপাড়ায়। রিকশা চালিয়ে তিনি সংসার চালান। সবজির দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় তার কষ্ট হচ্ছে ক্রয় করতে। হিসাব করে বাজার করতে হচ্ছে।
ঝন্টু দফাদার চাকরি করেন উপশহর ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম পুলিশ হিসেবে। তিনি বলেন, সামন্য বেতনে তিনি চাকরি করেন। কয়েক মাস তিনি ভালোই ছিলেন কাঁচাবাজারের জিনিসপত্রের সাধ্যের মধ্যে ছিল। কয়েক দিন ধরে সবজির দাম বেশ চড়া। তাই বাজার করতে যেয়ে চিন্তা করতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: হাবিপ্রবিতে ভর্তি পরীক্ষার শেষ দিন আজ
ফাহিমা বেগম। তার বাড়ি সরকারি এম এম কলেজের পাশে। তিনি বস্তিতে থাকেন। ছাত্রমেসে রান্না করেন। ছাপোষা মানুষ। তেমন আয়-উপার্জন নেই। সংসারে চার সন্তান, স্বামী নেই। সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ বহন ও সংসার চালাতে যেয়ে তিনি রীতিমত হিমশিম খাচ্ছেন।
তিনি বলেন, সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় তার বিপদের শেষ নেই। শান্তিমত তরকারি ক্রয় করতে পারছেন না।
আবু হোসেন নামের এক ক্রেতা বলেন, বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য দাম বাড়ার একটি কারণ। এ ছাড়া পাইকারি বাজার থেকে খুচরা ব্যবসায়ীরা যে দামে সবজি কেনেন, তার কয়েক গুণ বেশি দামে পরে তারা বিক্রি করেন। যার নজরদারি ঠিকমতো করা হচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি বাজারে দামের ঊর্ধ্বগতি এবং বাড়তি পরিবহন খরচই মূল্যবৃদ্ধির জন্য দায়ী। বড়বাজারের সবজি বিক্রেতা আরিফ হোসেন বলেন, ‘আমরা বেশি দামে কিনলে বাধ্য হয়ে বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। গত কয়েক সপ্তাহে পাইকারি বাজারে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। বিশেষ করে পটোল, বরবটি, বেগুন-এগুলোর দাম বেশ চড়া। আমাদের কেনা দাম বেশি হলে আমরা কম লাভে বিক্রি করতে পারি না। এ ছাড়া শীতের পর আগের মতো এখন আর সহজে মাল পাওয়া যাচ্ছে না। এখন যে সবজিগুলো বাজারে আসছে, সেগুলোর চাষের খরচও শীতের সবজির চেয়ে বেশি। সে জন্য দামও বেশি।’
আরও পড়ুন: পাক-ভারত যুদ্ধের পূর্বাভাস ৬ বছর আগেই ছিল যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণায়
এ বিষয়ে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কমলেশ মজুমদার বলেন, শীতকালে নানা ধরনের সবজি পাওয়া যায়, তাই তুলনামুলক দামও কম। বর্ষার সময়ে উৎপাদন কম হয়। সবজির গাছ বিভিন্ন কারণে মারা যায় তাই দামও বেড়ে যায়। এখন দেখার বিষয় কি কারণে দাম বেড়ে যাচ্ছে। যদি উৎপাদনের কমের কারণে দাম বেড়ে যায় সেটি এক রকম আর ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে মূল্যবৃদ্ধি করে সেটি ভিন্ন রকম। সবজির বড় বড় আড়তগুলো অভিযান চালানো হবে। অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।