যে ১০ বিদেশি ভাষা শিখলে ক্যারিয়ার গড়তে ভূমিকা রাখতে পারে

বিদেশি ভাষা
বিদেশি ভাষা  © সংগৃহীত

২১ শতকে বিদেশি ভাষা শিক্ষা একটি অপরিহার্য বিষয়। বিশ্বায়নের গতিশীলতায় বহুজাতি সংস্কৃতিগুলো পরস্পরের সাথে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে সম্প্রদায়গুলো অভ্যস্ত হয়ে উঠছে একে অপরের সাথে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগে। উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলো ভবিষ্যত বিশ্ব নেতাদের চিহ্নিত করার জন্য শিক্ষার্থীদের যাচাই-বাছাই করছে। নিয়োগকর্তারা এমন লোক খুঁজছে যারা বহির্বিশ্বের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। ফলে নির্দিষ্ট দেশের ভাষা আয়ত্ত্বের মাধ্যমে সে দেশে বৃহত্তর একাডেমিক অর্জনের পাশাপাশি চাকরি ক্ষেত্রেও মিলছে বিস্তর সুযোগ। তাই আজকে থাকছে উন্নত ক্যারিয়ারের জন্য সহায়ক তেমনি কয়েকটি প্রয়োজনীয় বিদেশি ভাষার কথা।

ম্যান্ডারিন চাইনিজ
গত দুই দশকে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে ম্যান্ডারিন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষায় পরিণত হয়েছে। উৎপাদন এবং রপ্তানি শিল্পে প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগের উদ্ভব হওয়ায় ম্যান্ডারিনে দক্ষতার চাহিদা বেড়েছে। এছাড়া অন্যান্য অভাবনীয় শিল্পের মধ্যে আছে ইঞ্জিনিয়ারিং, ফিনান্স এবং লজিস্টিকস।

ম্যান্ডারিন চাইনিজ চীন এবং তাইওয়ানের ৮০০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের মাতৃভাষা। এছাড়াও ভাষাটি ইন্দোনেশিয়া, হংকং, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ব্রুনাই, মঙ্গোলিয়া এবং ফিলিপাইনেও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। সেই সূত্রে সিভিতে ম্যান্ডারিন ভাষার সংযোজন যে কোন প্রার্থীর মান উন্নত করতে পারে।

বাংলাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউট এবং ঢাকা ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব-এ ম্যান্ডারিন চাইনিজ ভাষা শেখানো হয়।

জাপানিজ
১২০ মিলিয়নেরও বেশি জাপানিজ ভাষাভাষি মানুষের দেশ জাপান বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, ইলেকট্রনিক্স এবং অটোমোবাইল শিল্পের অত্যন্ত উন্নত স্তরের অধিষ্ঠিত। সুতরাং গ্যাজেট সম্পর্কিত যে কোন ব্যবসার জন্য জাপানি ভাষা শেখা অবধারিত। রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, ম্যানুফ্যাকচার অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এবং লজিস্টিকসে চাকরির সুযোগের জন্য প্রাসঙ্গিক শিল্প-মান দক্ষতার সাথে জাপানিজ ভাষা দক্ষতার অগ্রাধিকার দেয়া হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউট এবং থ্যানেক্স জাপানিজ স্কুল জাপানিজ ভাষা শেখার জন্য সেরা জায়গা।

জার্মান
ইউরোপকেন্দ্রিক ক্যারিয়ারে সাফল্যের চাবিকাঠি হচ্ছে জার্মান শেখা। জার্মান ১০০ মিলিয়নেরও বেশি লোকের কথিত ভাষা। এছাড়াও অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, হল্যান্ড, লিচেনস্টাইন, লুক্সেমবার্গ এবং সুইজারল্যান্ডেও ব্যাপকভাবে জার্মান বলা হয়। ইউরোপের অর্থনীতিতে চতুর্থ বৃহত্তম অবস্থানে রয়েছে জার্মানি। এখানে ফিনান্স, ইঞ্জিনিয়ারিং, ম্যানুফ্যাকচার, ডিজাইন বা ফার্মাসিউটিক্যাল্স ক্ষেত্রগুলোতে পেশাদারের চাহিদা প্রচুর।

বাংলাদেশে ইতোমধ্যে জার্মান শেখার বিস্তর সুযোগের সৃষ্টি হয়েছে। তন্মধ্যে সবচেয়ে উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউট এবং বাংলাদেশের জার্মান দূতাবাস স্বীকৃত গোথ ইন্সটিটিউট বাংলাদেশ।

তুর্কী
বিশ্ব জুড়ে আনুমানিক ৭৫ মিলিয়ন মানুষের মাতৃভাষা তুর্কি যা এটিকে বিশ্বের শীর্ষ ১৫টি সর্বাধিক কথ্য মাতৃভাষায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। তুরস্ক ছাড়াও, তুর্কি-ভাষী আছে বলকান, ককেশাস এবং পশ্চিম ইউরোপে। তুর্কি অভিবাসীদের বৃহত্তম অংশটি বাস করেন জার্মানিতে, যেখানে জার্মানির পরে তুর্কি দ্বিতীয় সর্বাধিক কথ্য ভাষা।

এখানে প্রযুক্তি, সাইবার নিরাপত্তা, এনার্জি, ট্যুরিজম, ফিন্যান্স, আইন, ব্যবসার মতো বৈচিত্র্যময় সেক্টরে অসংখ্য ক্যারিয়ারের সুযোগ বিদ্যমান। পাবলিক সেক্টরে কর্মজীবনে আগ্রহীদের জন্য কূটনীতি, বুদ্ধিমত্তা এবং সামরিক ক্ষেত্রগুলোতে সক্রিয়ভাবে নিয়োগের সুযোগ তৈরি হয়েছে। সেইসাথে শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি এবং ফেলোশিপেরও ব্যবস্থা আছে।

বাংলাদেশে তুর্কী শেখার নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউট।

স্প্যানিশ
বিশ্বব্যাপী ৪৮০ মিলিয়নেরও বেশি স্থানীয় ভাষাভাষীদের মধ্যে স্প্যানিশ ২১টি দেশের রাষ্ট্রিয় ভাষা। এটি মধ্য এবং দক্ষিণ আমেরিকার ক্রমবর্ধমান বাজারে কর্মসংস্থানের সুযোগের গেটওয়ে।

এখানে মানব সম্পদের সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে মিডিয়া, এবং ব্যাংকিংয়ে। পাশাপাশি চিকিৎসা, সামাজিক, শিক্ষা এবং বিপণনেও বেশ ভালো সুযোগ আছে।

শতকরা ৮৫ ভাগ আমেরিকান নিয়োগকর্তা স্প্যানিশকে সবচেয়ে বেশি চাহিদাযুক্ত বিদেশি ভাষা হিসাবে তালিকাভুক্ত করেছেন।

অনেকটা ইংরেজির মত হওয়ায় সহজে যে কেউ স্প্যানিশ রপ্ত করতে পারে। বাংলাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউট খন্ডকালীন ও দীর্ঘ মেয়াদে স্প্যানিশ ভাষা শেখা যায়।

কোরিয়ান
দক্ষিণ কোরিয়া হল বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তি। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক এবং আন্তর্জাতিক কোম্পানির চমৎকার মিলনমেলা এই দেশটি। এটি বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম রপ্তানিকারক এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম বৃহত্তম ব্যবসায়িক অংশীদার।

গত দশ বছরে কোরিয়া এশিয়ায় অধ্যায়নরত আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। কোরিয়ান-পপ, কোরিয়ান-ড্রামা এবং কোরিয়ান ফ্যাশনের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার সাথে উত্থান হয়েছে কোরিয়ান ওয়েভ-এর। এছাড়াও কোরিয়া ডিজিটাল প্রযুক্তি শিল্পের নেতৃস্থানীয় শক্তি এবং ইন্টারনেট-সংযুক্ত সমাজের সাথে সবচেয়ে উদ্ভাবনী দেশগুলোর মধ্যে একটি।

বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউট এবং বাংলাদেশ কোরিয়া টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার-এ কোরিয়ান শেখার সুযোগ আছে।

ফরাসি
বিশ্ব রাজনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং কূটনীতির পরিমণ্ডলে প্রবেশ করতে হলে বা আফ্রিকা ভিত্তিক শিল্পে কাজ করতে আগ্রহীদের জন্য ফরাসি ভাষা অবশ্যই প্রথম পছন্দ হতে হবে।

ফরাসি ভাষা ২৯টি দেশের মোট ২২০ মিলিয়নেরও বেশি লোকের কথ্য ভাষা। আফ্রিকাতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে এই ভাষাটির দ্রুত প্রসার লাভ করছে। কানাডাতেও এর ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়।

ফরাসি গুরুত্বপূর্ণ কতক কূটনৈতিক সংস্থা এবং গভর্নিং বডি যেমন জাতিসংঘ, উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থা (ন্যাটো), বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু), এবং ফুটবল ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ অ্যাসোসিয়েশন (ফিফা) দ্বারা গৃহীত ভাষা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউট এবং আলিয়ঁস ফ্রঁসেস প্রতিষ্ঠানগুলোতে ফরাসি ভাষা শেখা যেতে পারে।

আরবি
তৈল শিল্প, এনার্জি সেক্টর বা হাই-এন্ড কনস্ট্রাকশনের কর্মীদের জন্য আরবি ভাষা দক্ষতা আবশ্যক। বিশ্বের ২৭টি দেশে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন আরবি ভাষাভাষি লোক আছে। এই একটি ভাষা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ক্যারিয়ার তৈরির সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।

যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে মধ্যপ্রাচ্যের ব্যবসায়িক সম্পর্ক অত্যন্ত শক্তিশালী। তাই ইংরেজির পাশাপাশি আরবি ভাষা শিক্ষা হতে পারে উন্নত ক্যারিয়ারের সেরা মাধ্যম।

বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম মুসলিম দেশ বাংলাদেশে মসজিদ-মাদ্রাসার আধিক্য থাকায় প্রচুর সুযোগ আছে আরবি শেখার। ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউট ভালো মানের দুটি আরবি ভাষা শিক্ষা কেন্দ্র।

ইতালিয়ান
ইতালিয়ান ইতালিসহ সান মারিনো, সুইজারল্যান্ড এবং ভ্যাটিকানের রাষ্ট্রীয় ভাষা। এটি ৬৫ মিলিয়ন লোকের মাতৃভাষা। এছাড়াও বিশ্ব জুড়ে ইতালীয় অভিবাসী এবং তাদের বংশধরদের সংখ্যা প্রায় কয়েক মিলিয়ন।

ফ্যাশন, ডিজাইন, চারুকলা ও সংস্কৃতি, খাদ্য ও পানীয় উৎপাদন এবং বিতরণ, ফুটবল, বিলাসবহুল গাড়ি শিল্প, এমনকি ভ্যাটিকান ক্যারিয়ারের জন্য ইতালিয়ান শ্রেষ্ঠ ভাষা।

এখানে ইতালিয়ান ভাষা বলা সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে ফিয়াট, ফেরারি, ল্যাম্বোর্গিনি, ও আর্মানি’র মতো বিশ্ব বিখ্যাত ব্র্যান্ডগুলোতে।

বাংলাদেশে ইতালিয়ান ভাষা শেখা যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউট এবং ঢাকা ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব-এ।

রাশিয়ান
বিশ্বব্যাপী ২৫০ মিলিয়ন রাশিয়ান ভাষা ব্যবহারকারিদের মধ্যে বেশিরভাগই বাস করে রাশিয়ায়। বাকিরা সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র যেমন ইউক্রেন, লাটভিয়া এবং কাজাখাস্তানের বাসিন্দা।

রাশিয়ার ক্রমবিকশিত অর্থনীতির নেপথ্যে রয়েছে এর শক্তিশালী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, সরবরাহ, খনি এবং তৈল ও এনার্জি সেক্টর।

জার্মানির মতো রাশিয়াও বৈজ্ঞানিক এবং প্রযুক্তিগত পেশাগুলোতে জনপ্রিয়, তাই যে কোনও উদীয়মান বিজ্ঞানী বা প্রযুক্তিবিদের জন্য রাশিয়া স্বর্গ হতে পারে।

রাশিয়ান ভাষার জন্য উপযুক্ত জায়গা হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউট এবং রুশ বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি কেন্দ্র।

পারস্পরিক যোগাযোগের দক্ষতা শিক্ষা ক্ষেত্র থেকে শুরু করে প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রত্যাশিত বিষয়। আর এই দক্ষতার মূলে থাকে ভাষা। কেননা কোন গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের কাছাকাছি পৌঁছার সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম হলো তাদের মানুষগুলো যে ভাষায় কথা বলে তাদের সাথে সে ভাষাতেই কথা বলা। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে বিনা দ্বিধায় বিচরণের জন্য বিদেশি ভাষা শিক্ষা উৎকৃষ্ট হাতিয়ার। এর মাধ্যমেই কোন একটি নির্দিষ্ট দেশের মানুষ পুরোদস্তুর পরিণত হতে পারে বিশ্বের নাগরিকে।

সূত্র: ইউএনবি


সর্বশেষ সংবাদ