চাকরিতে প্রবেশের বয়সবৃদ্ধি নিয়ে সুখবর নেই

হতাশায় চাকরিপ্রার্থীরা
হতাশায় চাকরিপ্রার্থীরা  © ফাইল ছবি

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর আন্দোলন দীর্ঘদিনের হলেও মেলেনি সমাধান। সমাধান না এলেও হাল ছাড়েনি চাকরিপ্রত্যাশীরা। দাবি আদায়ে নানা কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন তারা। তবে দাবি বাস্তবায়নে সরকারের কোনো উদ্যোগ এখনো চোখে পড়েনি। বরং সময় যত গড়াচ্ছে বয়সবৃদ্ধির দাবি ততই আড়ালে চলে যাচ্ছে।

দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পূর্ব থেকেই চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি নিয়ে আন্দোলন করে আসছেন চাকরিপ্রার্থীরা। করোনার কারণে দীর্ঘ ১৮ মাস চাকরির পরীক্ষা বন্ধ থাকায় এই দাবি আরও জোরালো হয়। সংক্রমণ কমার পর প্রার্থীরা বিষয়টি নিয়ে জোরালো আন্দোলন শুরু করলে সরকার করোনাকালীন ক্ষতি বিবেচনায় চাকরিপ্রার্থীদের বয়সে ২১ মাস ছাড় দেয়। তবে এটিকে চাকরি প্রত্যাশীদের সাথে প্রহসন বলে আখ্যা দিয়েছেন আন্দোলনরতরা।

সরকারের এমন সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে ফের আন্দোলনে নামেন চাকরিপ্রার্থীরা। সবশেষ চাকরিতে প্রবেশের বয়সবৃদ্ধির দাবিতে নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করেন তারা। পরে পুলিশের লাঠিচার্জে তাদের সেই কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যায়। নতুন করে আন্দোলনের আভাস মিললেও বিষয়টি নিয়ে সরকারের কোনো পরিকল্পনার কথা শোনা যায়নি।

আরও পড়ুন: বয়স শেষ, বিজ্ঞপ্তি নেই— অন্ধকার দেখছেন চাকরিপ্রার্থীরা

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, চাকরিতে প্রবেশের বয়সবৃদ্ধির বিষয়ে নতুন করে ভাবা হচ্ছে না। করোনার ক্ষতি বিবেচনায় প্রার্থীদের বয়সে ছাড় দেয়া হয়েছিল। নতুন করে এ বিষয়ে কোনো চিন্তাভাবনা সরকারের আছে বলে আমার জানা নেই।

চাকরির বয়সবৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনরতরা বলছেন, করোনায় শিক্ষার্থীদের প্রায় ২ বছর সময় জীবন থেকে অতিবাহিত হয়েছে। এই সময় চাকরির পরীক্ষাসহ সবকিছুই স্থগিত ছিল। নতুন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করায় আবারও চাকরির পরীক্ষাগুলো স্থগিত হতে শুরু করেছে। তাই করোনাকালীন সরকারের সকল প্রণোদনার পাশাপাশি মুজিববর্ষের ও স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির বছরে আমরা বেকার যুবকরা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নিকট ‘প্রণোদনা স্বরূপ’ সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।

তারা বলছেন, ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারেও চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছিল। তবে সরকার সেটি বাস্তবায়ন করছে না। নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লিখিত অনুযায়ী করোনাকালীন প্রণোদনা হিসেবে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি করা দরকার। করোনার কারণে যাদের বয়স শেষ হয়ে গেছে তাদের এই ক্ষতি সরকারকেই পূরণ করতে হবে।

শহীদুল ইসলাম নামে একজন বলেন, সরকার নির্বাচনের আগে বয়সসীমা যৌক্তিকভাবে বাড়াবে বলেছিল। এখন বলছে সম্ভব নয়। কিন্তু করোনার কারণে যাদের ক্ষতি হয়েছে তাদের কি হবে? করোনার কারণে অনেকেরই চাকরির বয়স শেষ হয়ে গেছে। যে ব্যাকডেটের কথা বরা হচ্ছে সেখানে মাত্র ২ শতাংশ চাকরিপ্রার্থীর উপকার হয়েছে। বাকি ৯৮ ভাগই ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তাই সরকারের উচিত করোনার ভয়াবহতা বিবেচনা করে চাকরিপ্রার্থীদের চাকরিতে প্রবেশের বয়স বৃদ্ধি করা।

আরও পড়ুন: চাকরিতে প্রবেশের বয়স বৃদ্ধি করলে দেশের জন্যই মঙ্গলজনক হবে

মো. ইমতিয়াজ নামে একজন জানান, ১৯৯১ সালে শেষবার সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ২৭ থেকে বৃদ্ধি করে ৩০ করা হয়। তখন গড় আয়ু ছিলো ৫৭ বছর । এই ৩০ বছরে গড় আয়ু ১৬ বছর বৃদ্ধি পেয়ে ৭৩ বছর হলেও চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি পায়নি। ২০১১ সালে এসে অবসরের বয়সসীমা বেড়ে হয় ৫৯ আর মহান মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য হয় ৬০। অবসরের বয়স যেহেতু ২ বছর বৃদ্ধি পেয়েছে সেক্ষেত্রে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ২ বছর বৃদ্ধি করলে সেটাও আর সাংঘর্ষিক হয় না। সবকিছু বিবেচনায় চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি করা এখন সময়ের দাবি।

প্রার্থীদের এমন দাবির বিষয়ে জনপ্রশান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, চাকরিপ্রার্থীদের সমস্যার কথা বিবেচনায় নিয়েই আমরা দুই দফায় বয়সে ছাড় দিয়েছি। তবে স্থায়ীভাবে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানো যে কথা বরা হচ্ছে সেটি প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছার বিষয়। প্রধানমন্ত্রী চাইলে চাকরির বয়স স্থায়ীভাবে বৃদ্ধি করতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই।

এদিকে সেশনজট, করোনার ক্ষতি ও সরকারে নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সীমা বাড়ানোর দাবি যৌক্তিক বলে মনে করেন সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ কান।

আরও পড়ুন: ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৮টিতেই নেই ভিসি-ট্রেজারার

তার মতে, সেশনজটসহ নানা কারণে শিক্ষার্থীদের সরকারি চাকরিতে প্রবেশে জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়। সে ক্ষেত্রে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবি যৌক্তিক বলে মনে করি। এ বিষয়ে সরকারকে চিন্তা করতে হবে, কত বছর বয়স বাড়ানো যায়। আমি মনে করি, সবার জন্য ৩০ বছর থেকে ৩২ করাটা প্রাসঙ্গিক। আবার অবসরের বয়স যেহেতু ৫৯ সেহেতু চাকরিতে প্রবেশের পরে ২৫ বছর সার্ভিস পিরিয়ড নিশ্চিত করেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন।

চাকরিতে প্রবেশের বয়সবৃদ্ধি করলে দেশের জন্যই মঙ্গলজনক হবে বলে মনে করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রপ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি বিভাগের প্রফেসর ড. মু. আলী আসগর। তিনি বলেন, যুবসম্প্রদায়ের প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র ও সময় প্রসারিত করার উদ্দেশ্যে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩২ বা ৩৫ বছরে উন্নীত করা দরকার। আর একই সঙ্গে বয়োজ্যেষ্ঠ চাকুরীজীবিদের সেবা একটি ফলপ্রসু বয়স পর্যন্ত পেতে এবং নবীন প্রজন্মের জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে চাকরি থেকে অবসরের বয়স এক বছর বাড়িয়ে ৬০ বছর করাই বর্তমানে সময়োপযোগী।


সর্বশেষ সংবাদ