বয়স শেষ, বিজ্ঞপ্তি নেই— অন্ধকার দেখছেন চাকরিপ্রার্থীরা

  © ফাইল ফটো

করোনাভাইরাস মহামারিতে বিপর্যস্ত ব্যবসা-বাণিজ্য, দেখা দিচ্ছে অর্থনৈতিক মন্দা। এই মহামারি বড় আঘাত হেনেছে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে। বাংলাদেশে ইতোমধ্যে চাকরি হারিয়েছেন বিপুল সংখ্যক মানুষ। বেতন ও কর্মী ছাটাই চলছে অনেক প্রতিষ্ঠানে। নতুন চাকরির বিজ্ঞপ্তিও নেই। বিসিএসসহ সরকারি বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষাও স্থগিত হয়ে গেছে। ফলে চাকরিপ্রার্থীরা দিশা খুঁজে পাচ্ছেন না। আর যাদের বয়স শেষ বা শিগগিরই শেষ হবে তারা সামনে অন্ধকার দেখছেন, বাড়ছে হতাশা।

করোনায় চাকরির বাজার থমকে যাওয়ায় উদ্বেগ বাড়ছে সব মহলে। চাকরির খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সার্বিক কর্মসংস্থানে করোনাভােইরাসের কারণে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও এ খাত সহজে আগের জায়গায় ফিরবে না। তবে দক্ষ তরুণদের চাকরি পেতে বেগ পেতে হবে না বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

কর্মসংস্থানের এই বিরুপ পরিস্থিতিতে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন চাকরিপ্রার্থীরা। তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এখন তাদের কিছুই করার নেই। তবে প্রধানমন্ত্রী নির্বাহী ক্ষমতাবলে নির্দেশ দিলে সেটি বাস্তবায়ন করা হবে। বেসরকারি ব্যাংক থেকেও সুখবর নেই। অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও কয়েকমাসের মধ্যে চাকরির বিজ্ঞপ্তি ছাড়া হবে না বলে ইতোমধ্যে জানিয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক বলেছেন, করোনাভাইরাসের কারণে বিসিএসের ফল ও পরীক্ষা স্থগিত রয়েছে। ৪১তম বিসিএস পরীক্ষা এইচএসসি পরীক্ষার পর নেওয়ার চিন্তা ছিল। সেই এইচএসসি পরীক্ষা নিয়েই অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এজন্য পরিস্থিতি ভালো না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক আরিফ হোসেন খান বলেন, করোনার কারণে জনতা ব্যাংকের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। একই ব্যাংকের আরেকটি প্রিলিমিনারি মার্চের শেষ দিকে হওয়ার কথা থাকলেও তা বন্ধ করতে হয়েছে। এই পরীক্ষায় ৬৩৩টি পদে লক্ষাধিক প্রার্থী আবেদন করেন বলে তিনি জানান।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত ফেব্রুয়ারি থেকেই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনেকটা বন্ধ। এখন যেগুলো হচ্ছে তার প্রায় সবই অভিজ্ঞদের জন্য। ফলে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন চাকরিপ্রার্থীরা। এই অবস্থায় যাদের বয়স শেষের দিকে তারা কোথায় যাবেন, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন চাকরিপ্রার্থীরা মনে করছেন, করোনার চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পড়তে যাচ্ছেন তারা।

চাকরিপ্রার্থী সত্য প্রিয় সরকার বলেন, দেশের লাখ লাখ চাকরি প্রত্যাশী চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা হারাচ্ছে। এটা করোনার চেয়ে ভয়াবহ। ব্যাংক, বিমা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে বেতন ছাঁটাই ও নিয়োগ বন্ধ। এ অবস্থায় বয়সসীমা না বাড়ালে ক্ষতিগ্রস্ত হবে তারা।

শহীদুল ইসলাম বলেন, সরকার নির্বাচনের আগে বয়সসীমা যৌক্তিকভাবে বাড়াবে বলেছিল। এখন বলছে সম্ভব নয়। কিন্তু করোনার কারণে যাদের ক্ষতি হচ্ছে তাদের কি হবে? অনেকের এই বছরই চাকরির বয়স শেষ হবে। তাদের নিয়ে সরকার কিছু বলছে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি। ইসমাঈল মুসা বলেন, সরকারের উচিত করোনার ভয়াবহতা বিবেচনা করে চাকরিপ্রার্থীদের চাকরিতে প্রবেশের বয়স বৃদ্ধি করা।

চলমান পরিস্থিতি নিয়ে চাকরির ওয়েব পোর্টাল বিডি জবসের প্রধান নির্বাহী ফাহিম মাশরুর বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে এপ্রিল ও মে মাসে ওয়েব পোর্টালে প্রায় ৮০ শতাংশ বিজ্ঞাপন কমেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ স্থগিত করেছে। যারা মৌখিক পরীক্ষার জন্য প্রার্থী বাছাই করেছিল, তাও বন্ধ করে দিয়েছে।’

সম্প্রতি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশে চাকরির বাজারে ধস নেমেছে। গত বছরের মার্চের তুলনায় চলতি বছরের মার্চে চাকরির বিজ্ঞাপন কমেছে ৩৫ শতাংশ। এপ্রিলে কমেছে ৮৭ শতাংশ। এছাড়া এপ্রিলে পোশাক ও শিক্ষা খাতে ৯৫ শতাংশ, উৎপাদনশিল্পে ৯২ শতাংশ, স্বাস্থ্য খাতে ৮১ শতাংশ কম চাকরির বিজ্ঞাপন দেখা গেছে। সম্ভাবনাময় তথ্যপ্রযুক্তি খাতেও বিজ্ঞাপন কমেছে ৮২ শতাংশ।

এদিকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনার কারণে বিশ্বে আগামী তিন মাসে সাড়ে ১৯ কোটি মানুষ চাকরি হারাতে যাচ্ছে। বর্তমানে মোট কর্মশক্তির ৮০ ভাগ কোনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর বড় একটি অংশ তরুণ-তরুণী।

চাকরির বাজারের এই সঙ্কট সমাধানের বিষয়ে রবি আজিয়াটা’র প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা ফয়সাল ইমতিয়াজ খান বলেন, নতুন চাকরিতে প্রবেশ করার আশায় যারা চিন্তায় আছেন, তাঁদের এটাই সময় নিজেকে প্রস্তুত করা। করোনা-পরবর্তী সময়ে সম্ভাবনাময় খাত হবে গেমিং, ডিজিটাল প্রোডাক্ট, গিগ ইকোনমি, মেন্টাল হেলথ, অনলাইন কোচিং সেন্টার, ডেটা সায়েন্স, ইনস্যুরেন্স, অল্টারনেটিভ এনার্জিসহ আরও অনেক কিছু। এই সময়গুলোর সদ্ব্যবহার করে উদ্যোক্তা হওয়া যায় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন সাংবাদিকদেরকে বলেছেন, চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ বছর অনুযায়ী নিয়োগ হবে। করোনার কারণে বৃদ্ধি করার এখতিয়ার আমাদের নেই। তা করতে গেলে সংবিধান লঙ্ঘন হবে। তবে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী ক্ষমতা আছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, করোনার মধ্যে যাদের বয়স পার হয়েছে, বিষয়টি বিবেচনা করতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব পাঠাবে মন্ত্রণালয়। আগামী সপ্তাহের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হবে। করোনা সঙ্কটের মধ্যে যারা বয়স হারিয়েছেন তাদের জন্য কী করা যায়, সেই চিন্তা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence