চাকরির পরীক্ষার জট খুলছে সামনের মাসেই

  © ফাইল ফটো

সিরাজগঞ্জের মারুফা আক্তার মিম। গ্রাজুয়েশন শেষ করার পর থেকেই একটি সরকারি চাকরির জন্য হন্য হয়ে ঘুরছেন। রাজধানীর একটি চাকরি প্রস্তুতির কোচিং সেন্টারে কোচিং করার মধ্যেই দেশে করোনার প্রকোপ শুরু হয়। ফিরে আসতে হয় গ্রামে। বাড়িতে এসে তিনি এখন চাতক পাখির মতো পত্রিকার পাতা ওল্টান। তবুও কোথাও কোনো চাকরির বিজ্ঞপ্তি চোখে পড়ে না তার।

দেশে করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ার পর সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানেই লোক নিয়োগ বন্ধ হয়ে যায়। তবে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় আবারও পুরোনো রূপে ফিরতে শুরু করেছে চাকরির বাজার। স্থগিত হওয়া প্রায় সব পরীক্ষাই আগামী অক্টোবর মাস থেকে শুরু হতে যাচ্ছে।

জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় ইতোমধ্যে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) আওতায় সরকারি মাধ্যমে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া স্থগিত হওয়া ৭টি ব্যাংকে নিয়োগ পরীক্ষার জন্য আগামী ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে অ্যাডমিট কার্ড ডাউনলোড করতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিও আগামী অক্টোবরে প্রকাশিত হবে। ফলে চাকরিপ্রত্যাশীদের মাঝে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে।

অপরদিকে কভিড-১৯ এর শুরু থেকেই দেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে ধস নেমেছে। প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও কর্মী ছাটাইয়ের খবরে হতাশ হয়েছেন লাখ লাখ বেকার তরুণ-তরুণীরা। কর্মী ছাটাইয়ের তালিকা থেকে বাদ যায়নি দেশের প্রথম সারির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে প্রথম সারির গণমাধ্যমও। ফলে যারা সরকারি চাকরির পেছনে না ঘুরে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিজের ক্যারিয়ার গড়ার কথা ভেবেছিলেন তারা চরম হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েন।

এ বিষয়ে মারুফা আক্তার মিম বলেন, ‘বাবা-মার ইচ্ছা পূরণ করতে আমার একটি সরকারি চাকরির খুব প্রয়োজন। করোনার কারণে গত পাঁচমাস কোনো নিয়োগ পরীক্ষা হয়নি। ৪১তম বিসিএসের ফরম তুলেছি প্রায় বছর খানেক আগে। এখনো প্রিলিমিনারি পরীক্ষাই দিতে পারিনি। ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষাও স্থগিত। তবে আগামী মাস থেকে চাকরির পরীক্ষাগুলো শুরু হবে জেনে ভালো লাগছে।’

বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে মাস্টার্স শেষ করেছেন মিম। তিনি বলেন, ‘আমি ২০১৭ সালে মাস্টার্স শেষ করেছি। এরপর থেকে চাকরির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছি। অনেক জায়গায় চেষ্টা করেও চাকরি হচ্ছে না। তার ওপর করোনা পরিস্থিতির কারণে সব থমকে গেছে। এদিকে চাকরির বয়সটাও শেষ হয়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে ভীষণ দুশ্চিন্তার মধ্যে সময় পার করতে হচ্ছে। তবে চাকরির পরীক্ষাগুলো শুরু হলে হয়তো পরিস্থিতি কিছুটা বদলে যাবে।’

জানা গেছে, করোনা কারণে পিএসসির ৪১তম বিসিএসের প্রিলি পরীক্ষা ছাড়াও ৪০তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল আটকে গেছে। এছাড়া খাদ্য অধিদপ্তর ও দুদকের পরীক্ষা, ব্যাংকের পরীক্ষা, ব্যান্সডকের লিখিত পরীক্ষা, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, তুলা উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ বেশ কয়েকটি নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত রয়েছে।

এদিকে চাকরির খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, কভিড-১৯ এর ফলে দীর্ঘ প্রায় ৫ মাস চাকরির বাজার বন্ধ থাকায় সার্বিক কর্মসংস্থানে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। যদিও আস্তে আস্তে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে; তবুও কর্মসংস্থান সহজে পূর্বের জায়গায় ফিরবে না।

তবে দক্ষ তরুণদের জন্য চাকরির নতুন ক্ষেত্র বাড়বে বলে মনে করেন তারা। দ্রুত চাকরির পরীক্ষাগুলো নেয়ার দাবিও জানিয়েছেন তারা। অবশ্য এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, করোনার কারণে নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এখন ধীরে ধীরে এগুলো শুরু হবে।

অচলাবস্থা কাটাতে স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড শুরুও করেছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। অবশ্য করোনার কারণে এখনো পরীক্ষা নিতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি। তবে পিএসসি’র চেয়ারম্যান ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, অফিস খোলার পর সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে পিএসসি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই নিয়োগ সংক্রান্ত কার্যক্রম পুরোদমে চলবে।

জানা গেছে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরেরে অফিস সহায়ক, কনস্টেবলসহ কয়েকটি পদের আবেদনপত্র গ্রহণ করা হয়েছে। তবে করোনার কারণে পরীক্ষা বা নিয়োগ কার্যক্রম চালাতে পারছে না অধিদফতর। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সেগুলোর কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। ধারাবাহিকভাবে এসব নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনেও (পিকেএসএফ) বিভিন্ন শূন্যপদে জনবল নিয়োগ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

সারাদেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় সাড়ে ২২ হাজার সহকারী শিক্ষকের পদও শূন্য রয়েছে। এই পদে নিয়োগের জন্য আবেদনপত্র চাইবে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। তালিকা তৈরির কাজ ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। এখন যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। নভেম্বরের মধ্যে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে এনটিআরসিএ’র চেয়ারম্যান আকরাম হোসেন সম্প্রতি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন, সাড়ে ২২ হাজার সহকারী শিক্ষকের শুন্যপদের তালিকা পেয়েছি। এসব তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। তালিকা চূড়ান্ত করে নিবন্ধিত প্রার্থীদের কাছ থেকে আবেদন চেয়ে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।

অপরদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ‘সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর’-সহ চারটি পদের মৌখিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। গত ২০ আগস্ট এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।


সর্বশেষ সংবাদ