এশিয়ার তরুণ সফল উদ্যোক্তা যারা

বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতা এমন যে অধিকাংশ মানুষ তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ খুঁজে পায়না। আর এ পরিস্থিতিকে তরুণ উদ্যোক্তা হওয়া দরকার। একজন উদ্যোক্তা হওয়ার প্রধান শর্ত হচ্ছে আত্মবিশ্বাস, মানসিক স্থিতিশীলতা, প্রচেষ্টা, একটি নির্দিষ্ট লিখিত উদ্দেশ্য এবং তার গঠনপ্রণালী।

উদ্যোক্তা হওয়ার বিশেষ কোনও মুহূর্ত নেই, নেই কোনও কাল। একজন ব্যক্তি যেকোনো সময় নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। ২০১৮ সালে ব্লুমবা র্গ এবং ফোর্বসের রিয়েল ‘লাইফ এশিয়ান এন্ট্রিপ্রিনিয়র’ এর তালিকায় স্থান পাওয়া ৬ জন সফল এশিয়ান তরুণ উদ্যোক্তাদের নিয়ে আলোচনা করা হল-

আজকের নিবন্ধে আমরা এমন ৬ জন সফল এশিয়ান তরুণ উদ্যোক্তাদের নিয়ে আলোচনা করব যারা ২০১৮ সালে ব্লুমবার্গ এবং ফোর্বসের রিয়েল ‘লাইফ এশিয়ান এন্ট্রিপ্রিনিয়র’ এর তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন। চলুন তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই-

১. লি উইউই (Li Weiwei)
ইন্টারন্যাশনাল ব্রাউজার এবং মোবাইল গেমস ডেভেলাপার কোম্পানি ‘থার্টি সেভেন গেমস’ (37 games) এর প্রতিষ্ঠাতা, চায়না
বয়স: ৪১
আনুমানিক নেট মূল্য: ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার

লি উই উই চায়নার গেম ডেভেলপার ইন্ডাস্ট্রির একজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি। লি হংকং এর চেয়ুং কং গ্রাজুয়েট স্কুল অফ বিজনেসের একজন প্রাক্তন ছাত্র। তার প্রতিষ্ঠিত থার্টি সেভেন গেমস (37 games) কোম্পানিটি বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় ক্রমবর্ধমান ব্রাউজার গেইম কোম্পানি। গত বছর এ প্রতিষ্ঠানটির আয় ছিল ৬ বিলিয়ন ইউয়ান (প্রায় ৮৮০ মিলিয়ন ডলার)।

থার্টি সেভেন গেমসের (37 games) সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্রাউজার গেমগুলোর মধ্যে একটি হল ইংরেজি ভার্সনের ‘ গার্ডিয়ানস অফ ডিভ্যানটি ’ (Guardians of Divinity)। লি তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠান চালু করার পূর্বে অনেক চীনা প্রযুক্তি কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন। ২০১১ সালে থার্টি সেভেন গেমস (37 games) প্রতিষ্ঠার আগে একবার তিনি আর এন্ড ডি (R&D) কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

২. ট্যান মিন লিয়াং (Tan Min Liang)
গেইমিং ডিভাইস কোম্পানি ‘রেজার’ এর প্রতিষ্ঠাতা, সিঙ্গাপুর
বয়স: ৪০
আনুমানিক নেট মূল্য: ১.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার

ট্যান মিন লিয়াং গেমিং শিল্পে অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন ব্যক্তি। তার প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি রেজার ২০০৫ সাল থেকে ল্যাপটপ, মিউস এবং সাউন্ডবারের মতো সেরা গেমিং ডিভাইসগুলো তৈরি করছে।

গত বছর রজারের আয় ছিল প্রায় ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আইনজীবী ট্যান বর্তমানে সিঙ্গাপুরের সর্বকনিষ্ঠ স্ব-প্রতিষ্ঠিত কোটিপতি।

৩. বিজয় শেখর শর্মা (Vijay Shekhar Sharma)
ই-কমার্স পেমেন্ট সিস্টেম এবং ডিজিটাল ওয়ালেট কোম্পানি ‘পেটিএম’ এর (Paytm) প্রতিষ্ঠাতা, ইন্ডিয়া
বয়স: ৪০
আনুমানিক নেট মূল্য: ১.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার

বিজয় শেখর শর্মা ভারতের তরুণ কোটিপতিদের মধ্যে একজন। ২০১১ সালে তিনি পেটিএম প্রতিষ্ঠা করেন। পেটিএম এর পূর্ণ অর্থ পে থ্রো মোবাইল (Pay Through Mobile)। বিজয় যখন কলেজে ছিলেন, তখন তার প্রথম কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম স্টার্টআপ এক্সএস কর্পস প্রতিষ্ঠা করেন, যা তিনি ১৯৯৯ সালে বিক্রি করে দেন।
Share

বর্তমানে ‘পেটিএম’ এর প্রায় ২৫০ মিলিয়ন নিবন্ধিত ব্যবহারকারী রয়েছে এবং এর মাধ্যমে প্রতিদিন সাত লক্ষ লেনদেন পরিচালনা করা হয়। পেটিএম অ্যাপ ছাড়াও পেটিএম পেমেন্টস ব্যাংক এবং পেটিএম মল নামক একটি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম রয়েছে।

৪. কিম ডেই-ইল (Kim Dei-il)
গেম ডেভালাপিং প্রতিষ্ঠান ‘পার্ল অ্যাবিস’ এর প্রতিষ্ঠাতা, সাউথ কোরিয়া।
বয়স: ৩৮
আনুমানিক নেট মূল্য: ১.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার

কিম ডেই-ইল একজন কলেজ ড্রপআউট ছিলেন। তবে ছোটবেলা থেকে কিম ডেই-ইলের স্বপ্ন ছিল, তিনি একজন গেম ডেভেলাপার হবেন। ২০১০ সালে তিনি ‘পার্ল অ্যাবিস’ প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৫ সালে কিম ডেই-ইল এ প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে সফল গেম ব্ল্যাক ডেজার্ট চালু করেন।

ব্ল্যাক ডেজার্ট এর প্রথম অনলাইন সংস্করণ মুক্তি পাবার পর, এ গেমের আয় প্রায় ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছে যায়। এ আয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ বিদেশ থেকে আসে। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ব্ল্যাক ডেজার্ট গেমের মোবাইল ভার্সন চালু করা হয়েছে। বর্তমানে এ গেমটির ৮.৫ মিলিয়ন নিবন্ধিত ব্যবহারকারী রয়েছে। গত বছর ‘পার্ল অ্যাবিস’ এর আয় ছিল প্রায় ৯৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (৮৩.৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)।

৫. ফ্রাঙ্ক ওয়াং (Frank Wang)
ড্রোন প্রস্ততকারক প্রতিষ্ঠান ডিজেআই এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও, চীন।
বয়স: ৩৭
আনুমানিক নেট মূল্য: ৯.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার

ফ্রাঙ্ক ওয়াং ড্রোন শিল্পের প্রথম কোটিপতি। ফ্রাঙ্ক ওয়াং এর প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি ডিজেআই বিশ্বের সবচেয়ে বড় ড্রোন প্রস্ততকারক প্রতিষ্ঠান। গত বছর এ প্রতিষ্ঠানের আয় ছিল ২.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তিনি হংকং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি থেকে ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করেছেন।

ফ্রাঙ্ক ২০০৬ সালে এ কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং তিনি তার প্রথম ড্রোনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে বসেই তৈরি করেছিলেন। এ কোম্পানির সবচেয়ে বেশি বিক্রিকৃত ড্রোনটির নাম হচ্ছে ফ্যান্টম, যা ২০১৪ সালে বাজারে আসে।

৬. চেন ওয়ে (Cheng Wei)
রাইড শেয়ারিং কোম্পানি ‘দিদি চুক্সিং’ এর প্রতিষ্ঠাতা, চীন
বয়স: ৩৫
আনুমানিক নেট মূল্য: ১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার

‘দিদি চুক্সিং’ এর প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও চেং ওয়ে চীনের টেক ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম প্রভাবশালী নেতা। গতবছর চেং ওয়েই টাইম ম্যাগাজিনের টেক লিস্টের ২০জন প্রভাবশালী ব্যক্তি মধ্যে একজন নির্বাচিত হয়েছিলেন। ‘দিদি চুক্সিং’ বিশ্বের সবচেয়ে বড় মোবাইল ট্রান্সপোর্ট প্ল্যাটফর্মগুলোর মধ্যে একটি। এ প্রতিষ্ঠানটি ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

প্রতিষ্ঠিত হবার পর দিদি চুক্সিং এবং এর প্রধান প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠান কুয়িদি দাশের মধ্যে মার্জার (Merjer) অর্থ্যাৎ দুটি কোম্পানিকে একত্রিত করে ‘দিদি কুয়িদি’ নামে নতুন একটি রাইড শেয়ারিং কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়। যা পরবর্তীতে আবার নাম পরিবর্তন করে ‘দিদি চুক্সিং’ নামে পরিচিত লাভ করে। ২০১৬ সালে এ প্রতিষ্ঠানটি আবার উবারের সাথে চুক্তি বিনিময় করে এবং বর্তমানে চীনে উবারের সকল কার্যক্রম ‘দিদি চুক্সিং’ পরিচালনা করে থাকে। বর্তমানে চীনের ৪০০টির ও বেশি শহরে এই কোম্পানিটি সেবা প্রদান করে থাকে।


সর্বশেষ সংবাদ