ইপিএসের মাধ্যমে কম খরচে দক্ষিণ কোরিয়া, আগ্রহ বাড়ছে তরুণদের

দক্ষিণ কোরিয়ায় গমনরত ইপিএস কর্মীরা
দক্ষিণ কোরিয়ায় গমনরত ইপিএস কর্মীরা  © সংগৃহীত

উচ্চ আয় ও ভালো পরিবেশের কারণে সরকারিভাবে দক্ষিণ কোরিয়ায় যেতে আগ্রহ বাড়ছে তরুণ-তরুণীদের। এ ক্ষেত্রে এশিয়ার উন্নত দেশ দক্ষিণ কোরিয়ায় শ্রমশক্তি রপ্তানির সুযোগ বাড়ছে। বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের (বোয়েসেল) মাধ্যমে কয়েক ধাপে প্রার্থী নির্বাচনের পর, দক্ষিণ কোরিয়ায় যেতে পারেন দক্ষ কর্মীরা। মূলত স্বচ্ছতা, কম খরচ আর উচ্চ আয়ের সুযোগ থাকায় কোরিয়ার প্রতি এই আগ্রহ বাড়ছে। একজন কর্মীর বিমান ভাড়াসহ যেতে মোট খরচ পড়বে ১ লাখ ১০ হাজার ২০০ টাকা।

দক্ষিণ কোরিয়া ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে ২০০৭ সালে সম্পাদিত সমঝোতা চুক্তির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (বোয়েসেল) এবং কোরিয়া সরকারের পক্ষে হিউম্যান রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস অব কোরিয়া (এইচআরডি কোরিয়া) বর্তমানে কোরিয়ার অভিবাসন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।

প্রতিবছর এমপ্লয়মেন্ট পারমিট সিস্টেমের (ইপিএস) আওতায় বাংলাদেশি প্রার্থীদের অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে। কোরিয়া সরকার কর্তৃক নির্ধারিত কোটার চেয়ে রেজিস্ট্রেশনকৃত প্রার্থী বেশি হলে লটারির মাধ্যমে কোরীয় ভাষা পরীক্ষা অংশগ্রহণের জন্য প্রার্থী নির্বাচন করা হয়। প্রার্থীরা নির্ধারিত সময়ে কোরিয়া সরকার কর্তৃক কোরীয় ভাষা দক্ষতা অর্জন ও স্কিল টেস্টে অংশগ্রহণ করে দক্ষিণ কোরিয়ায় ৪ বছর ১০ মাসের জন্য উচ্চ বেতনে বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প কারখানায় চাকরি করার সুযোগ পায়। তবে ২০২৪ সাল থেকে একজন ই-৯ কর্মীর আইন মেনে ১০ বছর থাকার সুযোগ চালু হয়েছে।

বাংলাদেশি শ্রমিকদের সম্পূর্ণ সরকারিভাবে স্বল্প ব্যয়ে নির্ধারিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়ায় কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়। দুই সরকারের সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী বোয়েসেল ছাড়া অন্য কোনো জনশক্তি রফতানিকারী এজেন্ট বা মধ্যস্বত্বভোগী বা কোরীয় ভাষা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোরিয়ায় কর্মী পাঠানোর সুযোগ নেই।

ইপিএসের মূল উদ্দেশ্য
• স্বল্প ব্যয়ে নিরাপদ অভিবাসন।
• কোরিয়াসহ সব দেশের শ্রমিকের সমমর্যাদাকরণ।
• কোরীয় ভাষায়-দক্ষতা ও স্কিল টেস্টের মাধ্যমে যোগ্য কর্মী নির্বাচন করা।
• দক্ষিণ কোরিয়ায় নির্ধারিত সময়ে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও অর্থ অর্জন এবং নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনের পর জাতীয় উন্নয়নে দক্ষতা প্রয়োগের মাধ্যমে অবদান রাখ।

দক্ষিণ কোরিয়া গমনের যোগ্যতা
• বয়স ১৮-৩৯ হতে হবে।
• শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যূনতম এসএসসি/সমমানের ডিগ্রি।
• বৈধ মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট থাকতে হবে।
• কোরীয় ভাষা পড়া, লেখা ও বোঝার পারদর্শিতা এবং কোরীয় ভাষা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া।
• যাদের ফৌজদারি অপরাধে জেল বা অন্য কোনো শাস্তি হয়নি।
• যাদের কালার ভিশনে কোনো সমস্যা নেই।
• যারা দক্ষিণ কোরিয়ায় অবৈধভাবে অবস্থান করেনি।
• মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।

কোরীয় ভাষা পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রার্থীদের করণীয়
ক. প্রথম ধাপ আবেদনের তারিখ ও সময় ঘোষণা :
• প্রতি বছর নিবন্ধনের সময় ঘোষণা করা হয়।
• তারিখ ও সময় জাতীয় দৈনিক পত্রিকা, বোয়েসেলের ওয়েবসাইট ও ফেসবুকে প্রচার করা হয়।
• ওয়েবসাইটের ঠিকানা: www.boesl.gov.bd

খ. দ্বিতীয় ধাপ প্রার্থীদের অনলাইনে প্রাথমিক নিবন্ধন করার পদ্ধতি
• নির্ধারিত সময়ে বিকাশ পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে নিবন্ধন ফি ৫০০ টাকা পরিশোধ করতে হবে ও বিকাশ পেমেন্টের ট্রানজেকশন আইডি সংগ্রহ।
• নির্ধারিত ফরম অনুযায়ী পাসপোর্টকপিসহ আবেদন সম্পন্ন করা। বিকাশ পেমেন্ট ট্রানজেকশন আইডি নম্বর আবেদন ফরমে উল্লেখ করে বোয়েসেলের ওয়েবসাইটে প্রদান।
• নিবন্ধন সম্পন্ন হওয়ার পর কনফারমেশন ফরম প্রিন্ট করা।

গ. তৃতীয় ধাপ নিবন্ধন করা প্রার্থীদের লটারি:
• প্রাপ্ত সঠিক আবেদন থেকে লটারির মাধ্যমে প্রার্থী নির্বাচন।
• লটারিতে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের চূড়ান্ত নিবন্ধনের জন্য তারিখ ও সময় বোয়েসেলের ওয়েবসাইটে প্রকাশ।
• নির্ধারিত তারিখ ও সময়ে বোয়েসেল অফিসে ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে নির্ধারিত ২১০০ টাকা ফি জমা দিয়ে চূড়ান্তভাবে নিবন্ধন করা।

ঘ. চতুর্থ ধাপ প্রত্যেক প্রার্থীকে কোরীয় ভাষায় অংশগ্রহণ:
• নিজ উদ্যোগে কোরীয় ভাষা শিখতে হবে।
• বিভিন্ন জেলায় অবস্থিত সরকারি টিটিসিগুলোতে সুযোগ রয়েছে।
• যেকোনো বেসরকারি কোরীয় ভাষা প্রশিক্ষণ সেন্টার থেকে কোরীয় ভাষা শেখা যায়।

ঙ. পঞ্চম ধাপ চূড়ান্ত নিবন্ধন করা প্রার্থীদের কোরীয় ভাষা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ:
• প্রতিবছর এইচআরডি কোরিয়া কর্তৃক কোরীয় ভাষা পরীক্ষার তারিখ ও সময় ঘোষণা করা হয়।
• এইচআরডি কোরিয়া কোরীয় ভাষা পরীক্ষা গ্রহণ করে থাকে।
• কোরীয় ভাষা পরীক্ষার স্থান ও সময় বোয়েসেলের ওয়েবসাইটে প্রকশ করা হবে।

চ. ষষ্ঠ ধাপে কোরীয় ভাষা পরীক্ষা অংশগ্রহণকারীদের করণীয়:
• এইচআরডি কোরিয়া কোরীয় ভাষা পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করে থাকে। প্রার্থীকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
• কোরীয় ভাষা পরীক্ষার ফলাফল বোয়েসেলের ওয়েবসাইট ও ফেসবুকে প্রচার করা হবে।
• কোরীয় ভাষা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের এইচআরডি কোরিয়া কর্তৃক নির্ধারিত তারিখ ও সময়ে কম্পিটেন্সি টেস্ট ও স্কিল টেস্ট গ্রহণ করা হয়।

ছ. সপ্তম ধাপ উত্তীর্ণ প্রার্থীদের করণীয়:
• এইচআরডি কোরিয়া স্কিল টেস্টে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ফলাফল ঘোষণা করা, যাতে স্কিল টেস্টের চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ফলাফল জেলা ভিত্তিক সিভিল সার্জন কার্যালয়ে নির্ধারিত তারিখ ও সময়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন করার জন্য নোটিশ বোয়েসেলের ওয়েবসাইট ও ফেসবুকে প্রচার করা হয়।
• উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নিজ নিজ এজলার সিভিল সার্জনের মধ্যেমে নির্ধারিতে তারিখে স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন করতে হবে।
• বোয়েসেলে নির্ধারিত জব অ্যাপ্লিকেশন ফরমসহ পাসপোর্ট কপি ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ জমা করতে হয়।
• চূড়ান্ত উত্তীর্ণ প্রার্থীদের তথ্য জব রোস্টারের জন্য বোয়েসেল এইচআরডি কোরিয়ার ডাটাবেইজ সার্ভারে তথ্য প্রদান করে থাকে।
• বোয়েসেল কর্তৃক প্রদত্ত তথ্য এইচআরডি কোরিয়া যাচাই করে থাকে এবং পর্যায়ক্রমে জব রোস্টার সম্পন্ন করে।
• জব রোস্টারের মেয়াদ রোস্টারভুক্ত হওয়ার দিন থেকে প্রথম ধাপে এক বছর ও দ্বিতীয় ধাপে এক বছরসহ মোট দুই বছর।

জ. অষ্টম ধাপ রোস্টার করা প্রার্থীদের লেবার কন্ট্রাক্ট ইস্যুর পর করণীয়:
• কোরিয়াস্থ স্মল মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজের (এসএমই) চাহিদা মোতাবেক উত্তীর্ণ প্রার্থীদের কর্মী হিসেবে নিয়োগের জন্য কর্মসংস্থান ও শ্রম মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হয়।
• কোরিয়াস্থ কর্মসংস্থান ও শ্রম মন্ত্রণালয় এসএমই কর্তৃক কর্মী নিয়োগের চাহিদা যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন প্রদান করে থাকে।
• কোরিয়াস্থ কর্মসংস্থান ও শ্রম মন্ত্রণালয় বার্ষিক কোটা অনুযায়ী এসএমইর চাহিদার প্রেক্ষিতে রেন্ডম ভিত্তিতে জব রোস্টার থেকে লেবার কন্ট্রাক্ট প্রদান করে থাকে।
• বোয়েসেল ও এইচআরডি কোরিয়ার নির্ধারিত SPAS থেকে লেবার কন্ট্রাক্ট গ্রহণ ও অনুমোদন করে থাকে।

ঝ. নবম ধাপ লেবার কন্ট্রাক্ট প্রাপ্ত কর্মীদের করণীয়:
• লেবার কন্ট্রাক্ট প্রাপ্ত কর্মীদের বিকেটিটিসি'তে ৪৮ ঘণ্টার প্রিলিমিনারি প্রশিক্ষণ, যক্ষ্মা পরীক্ষা ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সংগ্রহের জন্য বোয়েসেল ওয়েবসাইটে নোটিশ প্রদান ও এসএমএস পাঠিয়ে থাকে ৷
• লেবার কন্ট্রাক্ট প্রাপ্ত কর্মীরা প্রিলিমিনারি প্রশিক্ষণ সম্পন্নের পর বোয়েসেল অফিসে মূল পাসপোর্ট, প্রশিক্ষণ সনদ, ভিসা ফরম, নির্ধারিত ই৯/ই১০/এইচ২ স্ট্যাটাস ফরম, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি ও ভিসা সংক্রান্ত সকল ডকুমেন্টস এবং বোয়েসেলের সার্ভিস চার্জ ২৩,১৮৪ (ভ্যাটসহ), বোয়েসেল ডাটাবেইজ ফি ২০০, ভিসা ফি ৫,১০০, বহির্গমন ফি ৩,৫০০, স্মার্ট কার্ড ফি ২৫০ এবং উৎসে আয়কর বাবদ ৮০০ টাকাসহ সর্বমোট ৩৩,০৩৪ টাকার পে-অর্ডার এবং ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ তহবিলে ১,১৪৫ টাকার পৃথক পে-অর্ডার দিতে হয়। এ ছাড়া রি-এন্ট্রি (কমিটেড/স্পেশাল সিবিটি) কর্মীদের পৃথক পে-অর্ডার প্রদানের প্রয়োজন নেই।
• কোরিয়াগামী জেনারেল কর্মীদের ফেরতযোগ্য এক লাখ টাকার পে-অর্ডার এবং কমিটেড/স্পেশাল সিবিটি কর্মীদের ফেরতযোগ্য তিন লাখ টাকার পে-অর্ডার বোয়েসেলকে দিতে হয়।

ঞ. দশম ধাপ সিসিভিআই (ভিসা) প্রাপ্ত কর্মীদের করণীয়:
• বোয়েসেল সিসিভিআই প্রাপ্ত কর্মীদের ভিসা স্ট্যাম্পিং করার জন্য ঢাকাস্থ কোরিয়া দূতাবাসে পাসপোর্ট জমা করে।
• ভিসা ও এইচআরডি কোরিয়া থেকে ফ্লাইটের তালিকা প্রাপ্তি সাপেক্ষে ফ্লাইটের জন্য নির্ধারিত এয়ারলাইন্সে টিকিটের জন্য বোয়েসেল বুকিং দিয়ে থাকে।
• সংশ্লিষ্ট কর্মীদের জ্ঞাতার্থে ফ্লাইটের তারিখ, টিটিটের টাকা জমা সংক্রান্ত ও বোয়েসেল কর্তৃক তিন দিনের কোরীয় ভাষা ও কালচার প্রশিক্ষণ এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার জন্য বোয়েসেলের ওয়েবসাইটে প্রচার ও এসএমএস প্রেরণ করা হয়।
• বোয়েসেলের তথ্যের ভিত্তিতে কর্মীকে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্স অফিসে উপস্থিত হয়ে টিটিটের নির্ধারিত অর্থ জমা দিতে হবে।
• দক্ষিণ কোরিয়া গমনের আগে বোয়েসেল কর্তৃক নির্ধারিত তিন দিনের কোরীয় ভাষা ও কালচার প্রশিক্ষণ উপস্থিত হয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে।
• দক্ষিণ কোরিয়া গমনের আগে বোয়েসেল কর্তৃক আট ঘণ্টার আচরণ পরিবর্তন প্রেরণা প্রশিক্ষণ সম্পন্নের পর সংশ্লিষ্ট কর্মীকে পাসপোর্ট ও টিকিট বিতরণ করা হয়।
• বোয়েসেলের প্রতিনিধি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উপস্থিত হয়ে দক্ষিণ কোরিয়াগামী কর্মীদের বিদায় জানায়।
• বোয়েসেল কর্তৃক কোরিয়া গমনরত কর্মীদের এইচআরডি কোরিয়া, কোরিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস ও কোরিয়াস্থ নিয়োগকারী কোম্পানি বিমানবন্দর থেকে গ্রহণ করে প্রশিক্ষণ ও মেডিকেলের উদ্দেশ্যে কর্মীদের KBIZ Training Center-এ নিয়ে যায়। প্রশিক্ষণ শেষে তারা চাকরিতে যোগদান করে।
• নিয়োগপ্রাপ্তকর্মী EPS-এর ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে যেকোনো সময় তার চাকরি সংক্রান্ত তথ্য নিজেই জানার সুযোগ রয়েছে।
• কোরিয়ায় চাকরিতে যোগদানের পর কর্মীরা প্রাথমিকভাবে তিন বছর এরপর আরও এক বছর মাস চাকরি করতে পারবে। বৈধভাবে উক্ত চাকরি সম্পন্ন করলে পুনরায় কোরিয়া যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ায় পুনরায় চাকরি (রি-এন্ট্রি) প্রাপ্তির সুযোগ
MoU-এর শর্তানুযায়ী বিদেশি শ্রমিকরা কোরিয়াতে ৪ বছর ১০ মাস চাকরি সম্পন্ন শেষে নিজ নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। এ পদ্ধতিতে কোরিয়ার মালিকরা একদিকে যেমন দক্ষ শ্রমিক হারাচ্ছিল, অপরদিকে বিদেশি শ্রমিকদের অবৈধভাবে কোরিয়া অবস্থানের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছিল। সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে কোরিয়া সরকার ২০১২ সাল থেকে মালিক ও শ্রমিকদের স্বার্থে কোরিয়া ভাষায় দক্ষ এবং কোরিয়ায় কর্মে অভিজ্ঞতা আছে, এমন কর্মীদের রি-এন্ট্রি সিস্টেম চালু করেছে। প্রথমবার কোরিয়াগামী কর্মীরা কোরিয়ায় ৪ বছর ১০ মাস চাকরি করার পর দ্বিতীয়বারের জন্য পুনরায় কোরিয়াতে রি-এন্ট্রির সুযোগ পায় এবং আরও ৪ বছর ১০ মাস চাকরি করতে পারে।

রি-এন্ট্রি নিম্নবর্ণিত দুই ভাবে হয়ে থাকে
কমিটেড: যারা কোরিয়ায় চাকরি পরিবর্তন না করে বৈধভাবে ৪ বছর ১০ মাস চাকরির প্রথম মেয়াদ সম্পন্ন করেছে, যেসব কর্মী দেশে ফেরত আসার আগে সর্বশেষ কোম্পানি হতে নতুন জব কন্ট্রাক্ট পেল, সে কমিটেড কর্মী হিসেবে বিবেচিত হয় এবং দেশে এসে তিন মাস ছুটি উপভোগ করার পর পুনরায় দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য কোরিয়ায় গমন করে। এসব কর্মীর পুনরায় কোরিয়া ভাষায় পরীক্ষা দিতে হয় না।

স্পেশাল সিবিটি: যারা কোরিয়ায় বৈধভাবে চাকরি পরিবর্তন করেছে এবং সর্বশেষ কোম্পানিতে ন্যূনতম এক বছর কাজ সম্পন্ন করেছে এবং তারা ৪ বছর ১০ মাস চাকরির করার পর দেশে ফেরত এসেছে, শুধু তারাই স্পেশাল সিবিটিতে অংশগ্রহণের যোগ্য বিবেচিত হয়। এসব কর্মীরা কোরিয়া থেকে দেশে ফেরত এসে বিনা লটারিতে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে সিবিটিতে অংশগ্রহণ করে এবং এদের মধ্যে যারা সিবিটি পাস করে, তারা সরাসরি জব রোস্টারে অন্তর্ভুক্ত হয়। অতঃপর জব অফার প্রাপ্তি সাপেক্ষে পুনরায কোরিয়ায় যেতে পারে।

দক্ষিণ কোরিয়াগামীদের অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন ও ভাষা পরীক্ষা থেকে শুরু করে দক্ষিণ কোরিয়া গমন পর্যন্ত প্রতিটি কার্যক্রম অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে হয়ে থাকে। এ পদ্ধতিতে কোনো ব্যক্তি বা বোয়েসেল কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ করার কোনো সুযোগ নেই।

উল্লেখ্য, দক্ষিণ কোরিয়ায় চাকরির জন্য রোস্টারভুক্ত হওয়াই কোরিয়ায় চাকরির নিশ্চয়তা বহন করে না। বোয়েসেল এবং HRD-Korea কোনও প্রার্থীকে চাকরি দিতে পারে না, চাকরি পাওয়ার জন্য এ প্রতিষ্ঠান দুটি প্রার্থী এবং চাকরিদাতার মধ্যে সংযোগ স্থাপন করতে সহায়তা করে। কোরিয়ায় চাকরি দাতা হচ্ছে সেখানকার ছোট ছোট বেসরকারি কোম্পানি। কোনো কোম্পানি কোনো কর্মীকে জব অফার দিলেই কেবল তিনি দক্ষিণ কোরিয়ায় চাকরি পাবেন।

কোরিয়া ভাষা পরীক্ষা পাশের সার্টিফিকেটের মেয়াদ দুই বছর বহাল থাকে এবং যেকোনো কর্মীর রোস্টারের মেয়াদ এক বছর। এ মেয়াদ কালের মধ্যে কোনো চাকরিদাতা কোম্পানি কোনো প্রার্থীকে জব অফার না দিলে তার কোরিয়া যাওয়ার সুযোগ নেই। তার নাম রোস্টার থেকে বাদ হয়ে যাবে। তবে প্রার্থীর বয়স ৩৯ বছরের মধ্যে থাকলে তিনি পুনরায় অনলাইন রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে লটারিতে নাম আসলে এবং কোরীয় ভাষা পরীক্ষা পাস করে আবার রোস্টারভুক্ত হতে পারবেন।


সর্বশেষ সংবাদ