রাজনৈতিক বিবেচনায় বাদ পড়া সহকারী জজ পরীক্ষায় সুপারিশপ্রাপ্তরা কি বঞ্চিতই থাকবেন!

চাকরিপ্রত্যাশী তরুণদের মধ্যে আইন বিষয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাই সুযোগ পান সহকারী জজ হিসেবে।
চাকরিপ্রত্যাশী তরুণদের মধ্যে আইন বিষয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাই সুযোগ পান সহকারী জজ হিসেবে।  © ফাইল ছবি

আওয়ামী সরকারের শাসনামলে রাজনৈতিক বিবেচনায় বাদ পড়া সহকারী জজ পরীক্ষায় সুপারিশপ্রাপ্তরা নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারির আবেদন জানিয়েছেন। এছাড়াও জ্যেষ্ঠতা, বকেয়া বেতন ও পদোন্নতিসহ বিভিন্ন দাবি জানিয়েছেন তারা। মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের (বিজেএস) বিভিন্ন পরীক্ষায় বাদ পড়া প্রার্থীরা এ আবেদন জানান। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর তারা এ আবেদন জানান।

চূড়ান্ত সুপারিশের পরও বিভিন্ন সময়ে বিজেএস থেকে বাদ পড়া প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন—১০ম বিজেএসের আবদুল্লাহ আল আমান, এস এম ইয়াসির আরাফাত, মো. আমিনুল হক ছিদ্দিকী, আবদুল্লাহ আল হাসিব, আহসান হাবীব। এছাড়াও বাদ পড়াদের মধ্যে রয়েছেন ১৩তম বিজেএসের উত্তীর্ণ প্রার্থী মো. মোস্তাফিজুর রহমান। আর ১৫তম বিজেএসে উত্তীর্ণদের মধ্যে মেহবুবা মিসৌরী ও আবুল হায়াত মুহাম্মদ তারেক আযমও রয়েছেন এ তালিকায়। 

এসব প্রার্থীরা বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ এবং সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার পরও রাজনৈতিক বিবেচনায় পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রতিবেদনে ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ বিবেচনায় নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হন।

আরও পড়ুন: সহকারি জজ নিয়োগ পরীক্ষা: প্রিলিমিনারি ও লিখিতের প্রস্তুতি যেভাবে নেবেন

নিয়োগ প্রত্যাশী প্রার্থীদের দাবি—নিয়োগ প্রদানে আগের ভেরিফিকেশন ইস্যুকে অজুহাত করে বিলম্ব করাচ্ছে। ইতিমধ্যে বিসিএস পরীক্ষায় বাদ পড়াদের নিয়োগ হয়ে গেছে জানিয়ে তাদের দাবি, বিজেএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এসব প্রার্থীদেরও কোনো ধরনের ভেরিফিকেশন ছাড়াই নিয়োগ হোক।স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ক্লিয়ারেন্স নিয়ে নিয়েও আপত্তি রয়েছে তাদের।

লিখিত আবেদনে প্রার্থীরা জানিয়েছেন—‘আমরা বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত ১০ম বিজেএস-২০১৫ এ অংশগ্রহণ করে বাছাই, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়ে বিগত ২০১৭ সালের ২৯ জানুয়ারি প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে সহকারী জজ পদের সাময়িকভাবে সুপারিশপ্রাপ্ত হই।’

‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় মন্ত্রণালয় কর্তৃক ১০ম বিজেএসের প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে আমাদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি। আমরা শুধুমাত্র বিরোধী মতের হওয়ায় আমরা বারংবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহে বিভিন্ন সময়ে আবেদন করেও গেজেটভুক্ত হতে ব্যর্থ হই । উপর্যুক্ত প্রজ্ঞাপন সমূহে আমাদের নাম অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে রিট (২২৭৪/২০১৯) আবেদন করি।’

আরও পড়ুন: আগে থেকেই আইনজীবী স্ত্রী, সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষায় চতুর্থ হলেন স্বামী

সুপ্রিম কোর্ট এই রিট আবেদনের উপর শুনানি পূর্বক বিগত ২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি মন্ত্রণালয়ে প্রদত্ত রুলটি এবসলুট করে রায় প্রদান করে আদেশের অনুলিপি প্রাপ্তির পরবর্তী ৬০ (ষাট) কর্মদিবসের মধ্যে দরখাস্তকারীগণকে নিয়োপত্র প্রদান করার জন্য নিদের্শ প্রদান করা হলেও প্রার্থীরা নিয়োগ পাননি বলে একই আবেদনে উল্লেখ করেছেন প্রার্থীরা। একই সাথে বঞ্চিত প্রার্থীরা জ্যেষ্ঠতা, বকেয়া বেতন ও পদোন্নতিসহ প্রজ্ঞাপন জারির নিমিত্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার আবেদন জানিয়েছেন তারা।

প্রসঙ্গত, তৃতীয় ও চতুর্থ বিজেএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের দুই থেকে চার মাসের মধ্যে যাচাই প্রতিবেদন শেষ হওয়ায় তখন কম সময়ে নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ হয়েছিল। এরপর থেকে পুলিশি যাচাই প্রতিবেদন ও অন্যান্য প্রক্রিয়ায় বাড়তে থাকে প্রার্থীদের অপেক্ষা। এর মধ্যে ১২তম বিজেএসে চূড়ান্ত ফল প্রকাশের ১০ মাস পর গেজেট হয়, ১৩তম বিজেএসে ১১ মাস পর গেজেট হয়, ১৪ ও ১৫তম বিজেএসে ৯ মাস পর গেজেট প্রকাশিত হয়।

এর আগে ১০ম বিজেএস পরীক্ষা গ্রহণের পর ওই ব্যাচের প্রার্থীরা নিয়োগ পান ২০১৮ সালে। আর ১৩তম বিজেএসের প্রার্থীরা ২০২১ এবং ১৫তম বিজেএসের প্রার্থীরা বিগত ২০২৩ সালে নিয়োগ পান।


সর্বশেষ সংবাদ