গবেষণায় সাফল্য, বাকৃবির উদ্ভাবিত ছাগলে মিলবে দ্বিগুণ মাংস

ব্ল্যাক বেঙ্গল ও বোয়ারের সংকর জাত
ব্ল্যাক বেঙ্গল ও বোয়ারের সংকর জাত  © টিডিসি ফটো

বাংলাদেশে লাল মাংসের (রেড মিট) চাহিদা দিন দিন বাড়লেও উৎপাদন সেই তুলনায় যথেষ্ট নয়। বিশেষ করে ছাগলের মাংসের চাহিদা অনেক বেশি, কিন্তু সরবরাহ কম। প্রচলিত ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল দিয়ে এই ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে বিকল্প খোঁজার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক বোয়ার জাতের পাঠার সঙ্গে দেশীয় ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগীর সংকরায়ণ ঘটিয়ে একটি নতুন সংকর জাত উদ্ভাবন করেছেন।

গবেষণার ফলাফল আন্তর্জাতিক জার্নাল অব অ্যানিমেল রিসার্চে প্রকাশিত হয়েছে। অধ্যাপক ড. মো. রুহুল আমিনের নেতৃত্বে এই গবেষণা পরিচালিত হয় এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী খালিদ সাইফুল্লাহ ছিলেন সহযোগী গবেষক। "ডেভেলপমেন্ট অব মিট টাইপ ক্রস ব্রিড ইউজিং বোয়ার এন্ড ব্ল্যাক বেঙ্গল গোট" শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে এ জাত নিয়ে কাজ করা হয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, সংকর জাতের ছাগল জন্মের সময় গড় ওজন প্রায় ২ কেজি, যেখানে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের বাচ্চার গড় ওজন মাত্র ৮০০ গ্রাম। এই সংকর জাতটি দেখতে আকর্ষণীয়, রং সাদা-বাদামী বা কালো। সংকর জাতের এই ছাগল দৈনিক ওজন বৃদ্ধি প্রায় ১০০ গ্রাম। 

নতুন জাতের ছাগল ১ বছরে ২৫ কেজি পর্যন্ত ওজনের হতে পারে। ব্ল্যাক বেঙ্গলের মতো একই পরিমাণ খাবার দিয়েই এই সংকর জাত থেকে দ্বিগুণ মাংস উৎপাদনে সক্ষম। অধ্যাপক ড. রুহুল আমিন জানান, একটি ব্ল্যাক বেঙ্গল খাসীর ১ বছর বয়সে ৮-১০ কেজি ওজন হয়, কিন্তু বোয়ার ও ব্ল্যাক বেঙ্গলের সংকর জাতটির ১ বছরে ২৫ কেজিরও বেশি ওজন হয়। এছাড়া, স্ত্রী ও পুরুষ উভয়ের ওজনে উল্লেখযোগ্য কোনো পার্থক্য পাওয়া যায়নি।

গবেষকরা আরও বলেন, বোয়ার জাতের ছাগলের উৎপত্তি দক্ষিণ আফ্রিকায়, এটি মাংস উৎপাদনে বিশ্বখ্যাত। যদিও বাংলাদেশের জলবায়ুর সঙ্গে পুরোপুরি মানানসই নয়, ব্ল্যাক বেঙ্গল ও বোয়ারের সংকরায়ণের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। বোয়ার জাতের ছাগল তার ওজনের ৫৫ শতাংশ মাংস দেয়, যেখানে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল দেয় ৪৫ শতাংশ। নতুন জাতের ছাগলের মাংসে চর্বির পরিমাণও কম, ফলে হৃদরোগের ঝুঁকিও কমে।

ড. রুহুল আমিন বলেন, বোয়ার জাতের ছাগলের খাবার ও যত্নের পরিমাণ বেশি হওয়ায়, এদেশের খামার ব্যবস্থাপনায় এটি উপযোগী নাও হতে পারে। তবে বোয়ার ও ব্ল্যাক বেঙ্গলের সংকর জাত উৎপাদন করলে এসব সীমাবদ্ধতা এড়ানো সম্ভব। কারণ মা ব্ল্যাক বেঙ্গল হওয়ায় প্রতিবারে প্রসবকৃত বাচ্চার সংখ্যা কম-বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। তিনি আরও জানান, ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগীর সাথে বোয়ার পাঠার প্রজননের মাধ্যমে সংকর জাত উৎপাদন করলে খামারিরা অধিক লাভবান হবেন।

নতুন জাতের ছাগল উদ্ভাবন দেশের মাংসের ঘাটতি পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এটি শুধু কৃষকদের জন্য লাভজনক নয়, বরং ভোক্তার কাছে মানসম্মত মাংস সরবরাহেও সহায়ক। গবেষকরা আশা করছেন, সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতার মাধ্যমে এই সংকর জাতের ছাগল সারা দেশে ছড়ানো সম্ভব হবে।

গবেষণা সহযোগী খালিদ সাইফুল্লাহ বলেন, আমাদের লক্ষ্য হলো কম খরচে ভোক্তার কাছে গুণগত মাংস পৌঁছে দেওয়া। খামারিরা এই জাত পালন করে একই খাবার ও পরিচর্যায় দ্বিগুণ মাংস উৎপাদন করতে পারবেন। মাঠ পর্যায়ের পরীক্ষায় আমরা আশাব্যঞ্জক ফলাফল পেয়েছি।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence