ভুলে ভরা জয়কলির ভর্তি প্রস্তুতির গাইড বই

জয়কলি পাবলিকেশন্স
জয়কলি পাবলিকেশন্স  © লোগো

‘জয়কলির একসেট বই পড়লে বুয়েট-মেডিকেল-বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স নিশ্চিত’, ‘এই এক বই দিয়েই বুয়েট, কুয়েট, চুয়েট এবং রুয়েটের ভর্তি প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব’— এমন স্লোগানে চমকপ্রদ প্রচারণা করে থাকে মেডিকেল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার গাইড বই প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান জয়কলি পাবলিকেশন্স। তাদের এই প্রচারণায় আস্থা রেখে অনেক ভর্তিচ্ছু ও চাকরিপ্রত্যাশীরা এই পাবলিকেশনের বইও বাজার থেকে সংগ্রহ করেন। তবে এসব বই নেওয়া পর তাদের বিরূপ মন্তব্য প্রকাশ করতে দেখা গেছে ভর্তিচ্ছু ও চাকরিপ্রত্যাশীদের।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, জয়কলি পাবলিকেশনন্সের প্রায় প্রতিটি বইয়েই অসংখ্য ভুল লক্ষ্য করা যায়। এসব ভুলের জন্য পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে গিয়ে তাদের বিভ্রান্তিতে পড়তে হচ্ছে। ফলে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাগুলোতে অংশ নিতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তও হচ্ছেন তারা।

তারা আরও জানান, জয়কলি প্রকাশিত প্রায় প্রতিটি বইয়ের বেশ কিছু এমসিকিউ প্রশ্নের ক্ষেত্রে সঠিক উত্তরে একটি এবং ব্যাখায় আরেকটি উত্তর দেয়া হয়েছে। ভর্তিচ্ছু ও চাকরিপ্রত্যাশীদের এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে জয়কলির বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ভর্তি প্রস্তুতির বাংলা বিচিত্রা, ইংরেজি বিচিত্রা, এবং বিজেএস প্রিলি ও লিখিত প্রশ্নব্যাংক বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বইটিতে অধিকাংশ মডেল টেস্টের সরবরাহকৃত উত্তরে ১-৩টি পর্যন্ত ভুল রয়েছে। বিজেএস প্রিলি ও লিখিত প্রশ্নব্যাংক বইটির ১৫৩ নম্বর পৃষ্ঠায় দুটো প্রশ্নসহ প্রায় ২০টি প্রশ্নে এ ধরণের ভুল রয়েছে।

জয়কলির ইংরেজি বিচিত্রা বইটিতেও অসংখ্য ভুল রয়েছে। এমনকি টপিকের শিরোনামেও ভুল পাওয়া গেছে। ইংরেজি বিচিত্রা বই বিশ্লেষণে দেখা গেছে, একেক প্রশ্নের উত্তর একেক জায়গায় একেক রকম দেওয়া হয়েছে। একই প্রশ্নের উত্তর দুই জায়গায় ভিন্নভাবে দেওয়া হয়েছে।

গণিত বিচিত্রা, পদার্থ বিচিত্রাসহ অন্যান্য গাইড বই বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যে প্রশ্নটি লেখা হয়েছে তার উত্তর ভুল দেওয়া হয়েছে।  কোনে কোনো ক্ষেত্রে একই প্রশ্নে পূর্বে একটি এবং পরবর্তীতে আরেকটি উত্তর দেয়া থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছুদের জন্য প্রস্তুতকরা গাইড জয়কলি হাইলাইটস-এ ভুলের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির প্রস্তুতি নেওয়া শাফিন আহমেদ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, জয়কলির চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন দেখে তাদের বিজ্ঞান ইউনিটের এক সেট বই কিনি৷ কিন্তু বই পড়ার পর দেখি অনেক উত্তরই মিলছে না; যেগুলো আমি নিশ্চিতভাবে জানি। পরে পাঠ্যবই এবং কোচিং-এর শিক্ষকদের কাছ থেকে নিশ্চিত হই আসলেই ভুল লিখেছেন তারা।’

এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সামান্য নম্বরের জন্যও অনেক সময় চান্স হয় না, সেখানে এমন ভুল রীতিমতো শিক্ষার্থীদের জন্য বিধ্বংসী বিষয়।

নাইমা সূচনা নামে অপর এক শিক্ষার্থী বলেন, আমি জয়কলির বাংলা বিচিত্রা এবং ইংরেজি বিচিত্রা কিনেছিলাম। কিন্তু দুটো বইতেই অসংখ্য ভুল। শেষে আমি অন্য বই কিনেছি। কারণ ভর্তি পরীক্ষায় ০.২৫ নম্বরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জয়কলির মার্কেটিং বিভাগের পরিচালক কমল দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ভুলের ঊর্ধ্বে কেউ না। অনেক কারণে ভুল থেকে যায়। আমাদের অনেক লোক কাজ করে। তাদের মধ্যে কেউ সঠিক বিষয়টি ভুল করে থাকেন। সেজন্য হয়তো এমন হয়েছে।

বিজিএস প্রিলির ১৫৩ পৃষ্ঠায় ২০টি প্রশ্নে ভুল থাকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, আমাদের অফিস বন্ধ হয়ে গেছে। যারা বইয়ের লেখক তারা এখন কেউ নেই। আপনি পরে কল দিলে আমরা সরাসরি লেখকদের সাথে আপনাকে যোগাযোগ করিয়ে দেবো।

ভর্তি প্রস্তুতির গাইড বইয়ে ভুল থাকা প্রসঙ্গে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সচিব মোসা. নাজমা আখতার বলেন, বাজারে নোট-গাইড অনেক আগেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ভর্তিচ্ছুদের এসব বই এড়িয়ে চলার আহবান থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে মূল বইয়ের বিকল্প নেই বলেও জানান তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ