আগামী বছর থেকে এক পরীক্ষায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি: শিক্ষামন্ত্রী

  © টিডিসি ফটো

আগামী বছর থেকে ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে একটি জাতীয় মেধাতালিকা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। আজ বুধবার (১৫ মার্চ) কুষ্টিয়ার দৌলতপুর কলেজ মাঠে এই বিজ্ঞান মেলায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে বিজ্ঞান মেলার উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আ. কা. ম. সরওয়ার জাহান (বাদশাহ্)। 

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্বে যেভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা হয়, একই আদলে গুচ্ছ পদ্ধতিতে আগামী বছর মাত্র একটি পরীক্ষার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া চালুর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে একটি ভর্তি পরীক্ষা হবে। শিক্ষার্থীদের প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে একটি জাতীয় মেধাতালিকা করে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। এর ফলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের হয়রানি কমবে, ব্যয়ও কমবে।

ডা. দীপু মনি বলেন, র‌্যাগিং সামাজিক সমস্যা। সমন্বিত উদ্যোগের বিরুদ্ধে একটি সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। এজন্য তিনি গণমাধ্যমের সহযোগিতা কামনা করেন।  পরে তিনি বিজ্ঞান মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃক বিজ্ঞান মেলার আয়োজন সত্যিই প্রশংসনীয়। কী করে বিজ্ঞান আমাদের জীবন পাল্টে দেয়, সেটি প্রত্যক্ষ করছি প্রতিনিয়ত। মানবিক মানুষ তৈরি করে দিতে পারে বিজ্ঞানমনস্কতা। একটা সময় ছিল মুখস্ত বিদ্যা। তারপরে ছিল পরীক্ষা আর পরীক্ষা। এই পুরো বিষয়টিকে বদলে ফেলা হয়েছে। এখন হচ্ছে পড়ে পড়ে শিখবে, বাস্তবতার আলোকে শিখবে। প্রযুক্তিকে আত্মস্থ করতে হবে। বিশ্বে ভালোভাবে টিকে থাকতে হলে প্রযুক্তির বিকল্প নেই। স্মার্ট মানুষ মানেই মানবিক ও দক্ষ মানুষ।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সততার পক্ষে, যৌক্তিকতার পক্ষে তোমাকে থাকতে হবে। তোমাকে শিখে নিতে হবে- কী করে শিখতে হয়। তাহলেই তুমি সকল পরিস্থিতি মোকাবেলা করার সক্ষমতা অর্জন করতে পারবে। প্রযুক্তিকে ভয় করা যাবে না।’ শিক্ষকদের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষকদের ভূমিকা হবে পথপ্রদর্শকের। শিক্ষার্থীদের হাতে ধরে শিখাতে হবে। আপনারা মানুষ গড়ার কারিগর। এই সমাজ আপনাদের যে সম্মান দেয়, তা আর কাউকে দেয় না। শিক্ষার্থীরা যেন দায়িত্বশীল ও কর্তব্যপরায়ণ মানুষ হয়, মানবিক মানুষ হয়- সেই শিক্ষা তাদের দিতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান বলেন, ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু যে সংবিধান রচনা করেছিলেন পৃথিবীর ইতিহাসে তা ছিল ব্যতিক্রমী, আধুনিক ও উদার। বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব কর্মসূচি এবং চার মূলনীতি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের ইতিহাসে বিজ্ঞান চেতনার এক অপূর্ব দেশ হতো। কিন্তু আমাদের দূর্ভাগ্য ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হারিয়েছি। এরপর আমাদের অনেক পথ পাড়ি দিতে হয়েছে অগণতান্ত্রিক এবং সামরিক শাসনের যাঁতাকলের মধ্য দিয়ে। তবুও ৭ই মার্চের সেই তেজোদীপ্ত ভাষণ বাঙালি বুকে-প্রাণে আগলে রেখেছে। সে কারণেই বঙ্গবন্ধু কন্যার হাত ধরে অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়েছে। সেই পুনঃপ্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশে বিজ্ঞান চর্চা, আধুনিকতা এবং জঙ্গিবাদমুক্ত সামাজিক সংস্কার আবশ্যক। এ কারণেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস অবশ্যপাঠ্য করেছে। ঠিক তেমনি চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে আইসিটি এবং সফ্ট স্কিল অবশ্যপাঠ্য করা হয়েছে। একইসঙ্গে সারাদেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসাম্প্রদায়িক, উদার, গণতান্ত্রিক এবং বিজ্ঞানমনস্ক চেতনা ছড়িয়ে দেয়ার জন্য এই বিজ্ঞান মেলার আয়োজন করেছি। এই মেলার উদ্দেশ্য হচ্ছে- প্রতিটি শিক্ষার্থীর চিন্তনে, মননে, চেতনায় বিজ্ঞানের পরশ পৌঁছে দেয়া। আমাদের সন্তানেরা শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি চর্চার পাশাপাশি বিজ্ঞান ভাবনায় আধুনিক হয়ে উঠুক। মূলত, আজকের আয়োজন বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ এবং বাংলাদেশ মানসকাঠামো বিনির্মাণের প্রয়াস।’

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে উপাচার্য ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘তোমরা বিজ্ঞান চেতনায়, শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার মধ্য দিয়ে নিজেদের প্রস্তুত করো। বাংলাদেশ অল্প কিছু দিনের মধ্যে যে নতুন উচ্চতায় যাবে, সেখানে তুমি গৌরব করে আত্মমর্যাদার সঙ্গে বলবে- আমি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার সন্তান। আমি জানি তোমাদের বঞ্চনাবোধ আছে। না পাওয়ার কষ্ট আছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীকে বলবো- তোমরা নিয়মিত অধ্যয়ন করবে, কঠোর পরিশ্রম করবে- দেখবে  জীবনের দৌঁড়ে তুমি এগিয়ে গেছ। জীবনের সেই দৌঁড় হবে শুদ্ধ, সুন্দর ও নৈতিকতা সম্পন্ন আদর্শ মানুষ হওয়ার। আমরা বিশ্বাস করি, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বিজ্ঞানমনস্ক বাংলাদেশ তৈরি হবে, যেখানে থাকবে সৃজনশীলতা। জঙ্গিবাদ, মাদকতা, অপসংস্কৃতি- এ সবকিছু আমরা শুভ ও সুন্দর দিয়ে বিনাশ করবো।’ 

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল-হোসেনের সঞ্চালনায় বিজ্ঞান মেলায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য স্থপতি প্রফেসর ড. নিজামউদ্দিন আহমেদ, আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. ফকির রফিকুল আলম, কলেজ মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন দপ্তরের পরিচালক রফিকুল আকবর, দৌলতপুর কলেজের অধ্যক্ষ মো. সাদিকুজ্জামান, আয়োজক কমিটির সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষবৃন্দ, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।  

তরুণদের মধ্যে বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ তৈরির লক্ষ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে এই প্রথমবারের মতো বিজ্ঞান মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত খুলনা বিভাগের বৃহত্তর কুষ্টিয়া অঞ্চলের ১৪টি কলেজ এই বিজ্ঞান মেলায় অংশগ্রহণ করে। কলেজগুলোর মধ্যে রয়েছে- কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ, কুমারখালী সরকারি কলেজ, ভেড়ামারা সরকারি কলেজ, ড. ফজলুল হক গার্লস কলেজ, এস এম জোহা কলেজ, গাংনী কলেজ, শোমসপুর আবু তালেব ডিগ্রি কলেজ, মেহেরপুর সরকারি কলেজ, কুষ্টিয়া সরকারি মহিলা কলেজ, পিপলস কলেজ, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ, মুজিবনগর সরকারি কলেজ, দৌলতপুর কলেজ, আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজ। 

বিজ্ঞান মেলায় শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান বিষয়ক সাধারণ জ্ঞান মূল্যায়নের উদ্দেশ্যে কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। মেলায় কলেজের শিক্ষার্থীদের বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং উদ্ভাবনী বিভিন্ন বিজ্ঞান-প্রকল্প নিজ নিজ স্টলে প্রদর্শন করা হয়। এছাড়া মেলায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবনী প্রকল্প প্রদর্শনের জন্য একটি স্টল ছিল। প্রকল্পগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- আইওটি ভিত্তিক স্মার্ট উপস্থিতি ব্যবস্থাপনা, খাদ্যদ্রব্যে অল্প খরচে ফরমালিন সনাক্তকরণ, ভাসমান ঘর তৈরিকরণ, আইওটি’র সাহায্যে কৃষি জমিতে পানি সেচ দেয়া, পলিথিন থেকে পেট্রোলিয়াম ও গ্যাস উৎপাদন, স্মার্ট ক্যাম্পাস প্রভৃতি। শিক্ষামন্ত্রী, উপাচার্যসহ বিজ্ঞান মেলায় আগত অতিথিবৃন্দ শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী বিভিন্ন প্রকল্প ঘুরে দেখেন। এসময় মেলায় অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।  

বিজ্ঞান মেলায় অংশগ্রহণকারী কলেজগুলোর অধ্যক্ষ ও বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষকবৃন্দের অংশগ্রহণে ‘বিজ্ঞান শিক্ষার মানোন্নয়নে করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. শরীফ এনামুল কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির ফেলো প্রফেসর ড. হাসিনা খান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহবুবুল আলম জোয়ার্দারসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানী ও গবেষক বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা সভায় বক্তব্য প্রদান করেন। অনুষ্ঠান শেষে বিজ্ঞান প্রকল্প প্রদর্শনী ও কুইজ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও উপাচার্য প্রফেসর ড. মশিউর রহমান।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence