স্ত্রীর সাহায্যে পরিসংখ্যান ক্যাডারে ১ম কামাল

  © টিডিসি ফটো

একবার বন্ধুদের সাথে বেড়াতে যাওয়ার পথে, গ্রামের একটা বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজন বয়ষ্ক লোক আমার বন্ধুদেরকে জিজ্ঞাসা করছিলেন ‘আমাদের উপজেলায় যে সেরা ফলাফল করেছে, এই ছেলেটাই কি সেই কামাল?’ ছোটবেলার স্মৃতি এভাবে বলছিলেন ৩৬তম বিসিএস পরিসংখ্যান ক্যাডারে প্রথম স্থান অধিকারী মোহাম্মদ কামাল হোসেন। ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার ছোট্ট গ্রাম লক্ষ্মীপুরে জন্মেছেন কামাল। কৃষক বাবার কাছেই তার পড়াশোনার হাতেখড়ি।

আলগী বাজার আলিম মাদ্রাসা থেকে দাখিল পরীক্ষা দিয়েছেন। ইংরেজি ও গণিতের ভিত মজবুত হয়েছিল এই মাদ্রাসা থেকেই। চাঁদপুর পুরাণ বাজার কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছেন। তারপর ভর্তি হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় একাডেমিক কোচিং এ ক্লাস নিতেন, ব্যাচ পড়াতেন, টিউশনি করতেন। বিসিএস পরীক্ষায় সফল হতে তাকে এগুলো কাজে দিয়েছে।

যখন বিসিএস এর জন্য প্রস্তুতি শুরু করেন, তখন মাস্টার্স চলছিল। অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর ডিপার্টমেন্টের স্যারদের কাছ থেকে ক্যারিয়ার বিষয়ক পরামর্শ নিয়ে বিসিএস এর জন্য মাইন্ডসেট করেন। শুরু হয় প্রস্তুতি গ্রহণ। সমান্তরালভাবে মাস্টার্স, বিসিএস, টিউশন চলছিল। বিসিএসের প্রস্তুতিতে সময় বাড়াতে টিউশন কমানোর খুব বেশি সুযোগ ছিল না তার। দিনে চারটা, সপ্তাহে তিন দিন— এভাবে কমপক্ষে আটটা টিউশন সবসময় হাতে রাখতেন। এর পূর্বে টিউশন আরও বেশি ছিল। ভাবছেন এত কেন? পরিবারের সকলকে নিয়ে ঢাকায় থাকতেন। খরচ তো লাগবেই। ছাত্রজীবনেই বিয়ে করেছিলেন। বাবা-মা,অনার্স পড়ুয়া ছোটভাই, ছোটবোন, স্ত্রী সবার খরচ বহন করতে হতো। ছাত্রজীবনে বিয়ে করার সুফলও পেয়েছেন কামাল।

তার স্ত্রী বিসিএস পরীক্ষার্থী না হয়েও প্রায় বিসিএসের পড়া কামালকে শুনিয়ে শুনিয়ে পড়তেন। কামাল চোখ বন্ধ করে পড়া শুনে আয়ত্তে আনতেন। বিভিন্ন বই, শীট ইত্যাদি থেকে কামালের দাগিয়ে রাখা গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো রাত জেগে খাতায় লিখে নোট করে দেয়া, যেসব তথ্য বারবার ভুলে যেতেন, সেগুলো নিজে মুখস্ত রেখে কিছুক্ষণ পরপর কামালকে মনে করিয়ে দেয়া, বিভিন্ন বই থেকে বিভিন্ন তথ্য খুঁজে বের করে দেয়া কামালের স্ত্রীর নিয়মিত কাজ ছিল।

আর তিনি যা কিছু বুঝতেন না, তা সিনিয়র, জুনিয়র যে পারত, তার কাছে নির্দ্বিধায় শিখতে গিয়েছেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে হল না থাকায় সিনিয়র বা জুনিয়রদের সময়মত পাওয়া সহজ ছিলনা। সেক্ষেত্রে মোবাইল, ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ ইত্যাদির সাহায্যে অনেকের সাথে যোগাযোগ করে সমস্যার সমাধান করে নিয়েছেন। একটা খাতার নাম দিয়েছিলেন ‘মুখস্ত বিদ্যার খাতা’। যেসব তথ্য মনে থাকতে চাইত না, সেসব তথ্য ওই খাতায় ছোট করে লিখে রাখতেন।

তাছাড়া, অর্থনৈতিক সমীক্ষা থেকে প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের বাছাইকৃত কয়েকটি অনুচ্ছেদ, এসডিজি থেকে কিছু অভীষ্ট, বিখ্যাত ব্যক্তিদের আলোচিত কিছু উক্তি, সাম্প্রতিক অতি গুরুত্বপূর্ণ সমীক্ষার ফলাফলসমূহ একই খাতায় লিখে রেখেছিলেন। ব্যস্ততার কারণে প্রস্তুতির জন্য একধারে দীর্ঘ সময় না পেলেও, যখনই একটু সময় পেয়েছেন তা হাত ছাড়া করেননি কখনও। সেই প্রচেষ্টার ফলাফলও পেয়েছেন হাতেনাতে।

একই প্রস্তুতিতে ৩৬ তম বিসিএসে ক্যাডার, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রবেশনারি অফিসার হিসাবে এবং কৃষি ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার হিসাবে চাকরিতে নির্বাচিত হয়েছেন। যারা বিসিএস পরীক্ষা দিতে চায়,তাদের জন্য কামাল পরামর্শ দিয়ে বলেন,‘জীবনে কমপক্ষে বার বছরের পড়াশোনা শেষ করে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। এই বার বছরে আমরা যা শিখি, তা থেকেই বিসিএস এর বেশির ভাগ প্রশ্ন হয়। আর যারা ওই বার বছর ভালো করে পড়াশোনা করে আসে, তারাই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। বাকীরা আগেই ঝরে পড়ে।

এখন কাজটা হলো, সেই শিক্ষাটা ধরে রাখা এবং তার সাথে নতুন জ্ঞান যুক্ত করা। আমার পরামর্শ হলো, স্নাতক তৃতীয় বর্ষ পর্যন্ত বিসিএস এর সিলেবাস ধরে পড়াশোনা করার প্রয়োজন নেই। অ্যাকাডেমিক ফলাফল ভালো করা জরুরী। চাকরি, পদন্নোতিসহ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অ্যাকাডেমিক ফলাফল কাজে লাগে। তবে এই পর্যায়ে থাকা অবস্থায় আপনার অবশ্যই মৌলিক কিছু বিষয়ে ভালো হতে হবে। যেমন— কমপক্ষে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত যে কোনো শ্রেণীর শিক্ষার্থীকে ইংরেজি ও বাংলা পড়ানোর অভিজ্ঞতা না থাকলেও দক্ষতা থাকতে হবে। তবে অভিজ্ঞতা থাকাই ভালো। একইভাবে এই পর্যায়ের ভূগোল, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং ইতিহাস বিষয়েও সম্যক জ্ঞান থাকা জরুরী।

পাশাপাশি কমপক্ষে মাধ্যমিক পর্যন্ত যে কোনো শ্রেণীর শিক্ষার্থীকে গণিত এবং সাধারণ বিজ্ঞান পড়ানোর দক্ষতা থাকতে হবে। এছাড়াও একজন প্রথমসারির নাগরিক হিসেবে দেশের মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস-ঐতিহ্য, রাষ্ট্রের কাঠামো, সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ জানতে হবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অর্থনীতি এবং রাজনীতি সম্পর্কেও নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখতে হবে।

মাসিক এডিটোরিয়াল নিউজের মত মাসিক পত্রিকাগুলো নিয়মিত পড়লে দেশ বিদেশ সম্পর্কে জানা যায়। এছাড়া অনুবাদেও দক্ষ হওয়া যায়। অনার্স তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা শেষ করে অ্যাকাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যিকের ইংরেজি, বাংলা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, গণিত, ইতিহাস ইত্যাদির প্রয়োজনীয় বইসমূহ, লাল নীল দীপাবলি, কতো নদী সরোবর, টি জে ফিটিকেডস্ এর কমন মিস্টেকস্ ইন ইংলিশ, ভালো সিরিজের একসেট বিসিএস গাইড নিয়ে বিসিএস এর সিলেবাস ধরে পড়াশোনা শুরু করবেন। পড়াশোনায় নিয়মিত থাকবেন এবং ভাইভা পর্যন্ত লেগে থাকবেন।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence