দুর্যোগে বিপর্যস্ত ফেনী, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হাজারো মানুষ

ফেনীতে বন্যা
ফেনীতে বন্যা  © টিডিসি

ফেনীতে গত তিন দিনের টানা ভারী বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলের ফলে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর তীরবর্তী অন্তত ২০টি স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গেছে। এর প্রভাবে সীমান্তঘেঁষা ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন হাজারো মানুষ।

বন্যার ফলে স্থানীয় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। অনেক সড়ক জলমগ্ন হয়ে যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। এর পাশাপাশি বিদ্যুৎ সংযোগ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় দুর্গত মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, পরশুরামের ১২টি ও ফুলগাজী উপজেলায় ৮টিসহ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের মোট ২০টি স্থানে ভেঙে গেছে। তারমধ্যে মুহুরী নদীর ১০টি, কহুয়া নদীর ৬টি ও সিলোনিয়া নদীর ৪টি অংশে ভাঙনে অন্তত ৩৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সময় বাড়ার সঙ্গে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।

ফুলগাজী উপজেলার দৌলতপুর এলাকার বাসিন্দা খাদিজা বেগম বলেন, গেল বছরের বন্যার কষ্ট এখনও ভুলতে পারিনি। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আবারও সেই একই দুর্ভোগ। চারদিক পানি আর পানি। ঘরের সবকিছু চৌকি, কাপড়চোপড়, চাল-ডাল সব ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন কই গিয়ে বসে থাকি! এ অঞ্চলে জুলাই-আগস্ট এলেই মুহুরী নদীর পানি বেড়ে বাঁধ ভেঙে যায় এটা এখন যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। আমরা যারা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে থাকি, তাদের কষ্ট যেন দেখার কেউ নেই। মাঝেমধ্যে মনে হয়, এই জায়গায় জন্ম নিয়ে বুঝি ভুল করেছি।

উত্তর শ্রীপুর এলাকার বাসিন্দা আজহার উদ্দিন বলেন, বাঁধ ভেঙে যে জায়গায় পানি ঢুকছে, সেখানে তীব্র স্রোত চলছে। প্রতি ঘণ্টায় নতুন নতুন এলাকা ডুবে যাচ্ছে। মানুষ এখন ঘর ছেড়ে উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিচ্ছে। গেল বছরের মতো এবারও বিদ্যুৎ নেই, মোবাইল নেটওয়ার্কও বারবার বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে কারো সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। সরকার বা রাজনৈতিক দল বদলায়, কিন্তু আমাদের কপাল বদলায় না। আমরা কেবল দুর্যোগ আর দুর্ভোগই দেখে যাচ্ছি।

একই উপজেলার উত্তর শ্রীপুর নাপিতকোনা এলাকার বাসিন্দা আলী আশ্রাফ খন্দকার বলেন, অনেক কষ্ট করে পরিবার নিয়ে থাকার জন্য একটা ছোট ঘর বানাইছিলাম। এখন সেই ঘরটাও আর রইল না বাঁধ ভাঙার পানিতে সব ভেসে গেছে। কোথায় যাব, কিছুই বুঝতেছি না।

এদিকে, বন্যা পরিস্থিতির কারণে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) অনুষ্ঠাতব্য এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। বুধবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করে কুমিল্লা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর রুনা নাছরীন। 

বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, শুধু ১০ জুলাইয়ের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। অন্য পরীক্ষাগুলো নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ীই অনুষ্ঠিত হবে। স্থগিত হওয়া পরীক্ষার নতুন সময়সূচি পরবর্তী সময়ে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, রাত ৯টার দিকে নদীর পানি বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। সময়ের সঙ্গে নদীর পানি কমেছে। ভাঙন স্থান দিয়ে পানি ঢুকে নিম্নাঞ্চলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পানি কমার পরেই বাঁধ মেরামতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে  বলেন, জেলায় টানা তিন দিন ধরে মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বুধবার (৯ জুলাই) রাত ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৭৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। কাল বৃহস্পতিবারও জেলাজুড়ে হালকা বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ ব্যাপারে ফেনীর জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, পরশুরাম, ফুলগাজী ও ফেনী সদর উপজেলার আংশিক অংশে প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার মানুষ দুর্যোগে আক্রান্ত হয়েছে। ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে দেড় হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। জেলার ছয় উপজেলায় ত্রাণ কার্যক্রমের জন্য সাড়ে ১৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত বছরের আগস্টে ফেনীতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ২৯ জনের প্রাণহানি ঘটে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় সড়ক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ প্রায় সব খাত, যার ক্ষতির পরিমাণ শত কোটি টাকারও বেশি। গ্রাম ছাড়িয়ে ডুবে যায় জেলা শহর, পানিবন্দি হন ১০ লাখের বেশি মানুষ। দুর্গতদের সহায়তায় এগিয়ে আসে দেশব্যাপী মানুষ।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence