কেনেডি স্মৃতিবিজড়িত ঢাবির সেই বটগাছ পরিদর্শনে যুক্তরাষ্ট্রের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত
- আজাদ নাকির
- প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২২, ০৮:৫১ PM , আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২২, ০৮:৪৬ PM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কলা ভবনের সামনে অপরাজেয় বাংলার পাশেই রয়েছে বিশাল একটি বটগাছ। ঐতিহাসিক এ বটগাছের জায়গাটি ঢাবি শিক্ষার্থীদের নিকট বটতলা নামেই বেশি পরিচিত। প্রায় ৫০ বছর আগে মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড এম. কেনেডি এই বটগাছটি রোপন করেন। গাছটিকে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্বের স্থায়ী প্রতীক হিসাবে মনে করা হয়। তাই দু’দেশের মধ্যে জোরদার বন্ধুত্বের সম্মানে যুক্তরাষ্ট্রের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এটি পরিদর্শন করেছেন।
বুধবার (১৬ মার্চ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলার ঐতিহাসিক এই বটগাছটি পরিদর্শন করেছেন তিনি।
এ সময় তার সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় কেউ কেউ রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বটতলায় ছবিও তুলেছেন।
আরও পড়ুন: বিচ্ছেদ নিয়ে মুখ খুলেছেন ক্যামিলা ক্যাবেলো
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে, বাংলাদেশে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের ভেরিফাইড পেজ থেকে দুটি ছবি যুক্ত করে একটি পোস্ট করা হয়েছে। এতে রাষ্ট্রদূতকে যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ গাছটি পরিদর্শনের পরামর্শ দিয়েছিলেন তাদের ধন্যবাদ জানানো হয়েছে।
গাছটি পরিদর্শনের বিষয়ে ঢাবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের উদ্যোগে রাষ্ট্রদূত ব্যক্তিগত সফরে বটগাছটি পরিদর্শনে এসেছিলেন। কেননা এর সঙ্গে তাদের একটা ঐতিহাসিক সম্পর্ক ও যোগাযোগ রয়েছে। বর্তমান বটগাছটি আমেরিকার সিনেটর এডওয়ার্ড এম. কেনেডি ১৯৭২ সালে রোপন করেছিলেন। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দু ছিল গাছটি। এ কারণেই পাকিস্তানি বাহিনী ২৫ মার্চের কালো রাতে গাছটিকেও উপড়ে ফেলেছিল।
আরও পড়ুন: হল খোলার পরেও খোলেনি ঢাবির ৪ হলের মেস
পরে রাষ্ট্রদূত চত্বরটি ঘুরে দেখেন। সেখানে বাংলায় লেখা বিভিন্ন রেকর্ডস শেয়ার করেছেন। তিনি কিছু কিছু বাংলা জানেন বলেও জানিয়েছেন ঢাবি প্রক্টর। এছাড়া ইতিহাসের এ বিষয়টি সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানেন কি না সে সম্পর্কেও খোঁজ নেন বলে জানান অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী।
এ বিষয়ে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান বলেছেন, এ রকম পরিদর্শনে সকল মার্কিন রাষ্ট্রদূতরাই আসেন। যিনি ইতিহাস জানেন তিনি আসেন। নিজ আগ্রহ থেকেই আসেন।
আরও পড়ুন: মুচলেকা দিলেই বঙ্গবন্ধুর ছাত্রত্ব টিকে থাকত ঢাবিতে
গাছটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে জবাবে তিনি বলেন, এখানে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রাম হত অর্থাৎ জায়গাটি আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। তাই বটতলায় প্রথম যে বটগাছটি ছিল সেটিকে ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অপাারেশেন সার্চ লাইটে ( দিনটিকে ইতিহাসে কালো রাত নামে অভিহিত করা হয়) উপড়ে ফেলে দেয়। এরপরই মি. কেনেডি স্বাধীন বাংলাদেশে আরেকটি বটগাছ রোপন করেছিলেন। আজকের বটতলায় কেনেডির লাগানো সেই গাছটিকেই দেখা যায়।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মলগ্ন থেকে নানা আন্দোলন-সংগ্রাম ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির সাক্ষী এ গাছটিকে ১৯৭২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি লাগানো হয়। যিনি গাছটি রোপন করেন সেই এডওয়ার্ড এম. কেনেডি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামের ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তার সরকার এ দেশের মানুষের পাশে না দাঁড়ালেও তিনি দাঁড়িয়েছিলেন। তখন তিনি এই এদেশে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পাকিস্তান সামরিক সরকারের বাধা পেয়ে তিনি ভারতে গিয়ে নিজের চোখে দেখেছিলেন লাখ লাখ উদ্বাস্তু বাঙালির দুঃখ দুর্দশার চিত্র। পরে দেশে ফিরে সবাইকে জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশে গণহত্যা চলছে। তার প্রতিবেদনের মাধ্যমে বিশ্ববাসী জানতে পেরেছিল যুদ্ধের প্রকৃত খবরাখবর।