সভা হয়েছে, ৩৪ ভিসির পদত্যাগের সিদ্ধান্ত হয়নি

সভা হয়েছে, ৩৪ ভিসির পদত্যাগের সিদ্ধান্ত হয়নি
সভা হয়েছে, ৩৪ ভিসির পদত্যাগের সিদ্ধান্ত হয়নি  © টিডিসি ফটো

শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের মুখে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ পদত্যাগ করলে বাকি ৩৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদেরও পদত্যাগের যে খবর ছড়িয়েছে তা সঠিক নয়। শাবিপ্রবির চলমান সংকট নিয়ে গেল ২০ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) একটি সভা হয়েছে। তবে এ সভায় কারো কোনো উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের একটি স্ট্যাটাসের উপর ভিত্তি করে ৩৪ ভিসির পদত্যাগের গুজব চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এ বিষয়ে সাংবাদিক সুপন রায়ের ওই স্ট্যাটাসের ভিত্তিতে কয়েক ঘণ্টা পর রাত ১২টা ২৯ মিনিটে ‘সুপন রায়: ৩৪ উপাচার্য এক হয়ে বললেন, দরকার হলে একযোগে পদত্যাগ করব!’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে আমাদের সময় ডটকম।

সাংবাদিক সুপন রায় ফেসবুকে এ স্ট্যাটাসটি দেন বৃহস্পতিবার রাত ৮টা ৫০ মিনিটে। এতে তিনি লিখেন, ‘৩৪ উপাচার্য এক হয়ে বললেন, দরকার হলে একযোগে পদত্যাগ করবেন! প্রচণ্ড অস্বস্তিতে আছেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সভায় আজ ৩৪ উপাচার্য একত্রে বসেছেন। বক্তব্য রেখেছেন ২২ জন। সম্মানজনক সমাধান জরুরি।’

আরও পড়ুন: শিক্ষামন্ত্রীর বৈঠকে শাবিপ্রবির আন্দোলন নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি

এদিকে, আজ শনিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে বৈঠকে বসেছিল ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধি দল। বৈঠকে ৩৪ ভিসির পদত্যাগ নিয়ে কথা বলেছেন শিক্ষামন্ত্রীও। দীপু মনিও ৩৪ ভিসির পদত্যাগের বিষয়টি সত্য নয় বলে নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভাপতি ও ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুর রহমানও এ বিষয়টি অসত্য বলেই জানিয়েছেন।

শাবিপ্রবি শিক্ষক প্রতিনিধি দলের বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী ৩৪ ভিসির পতদ্যাগের বিষয়ে বলেন, আমি এরকম কোনো কথা শুনিনি। দেখুন, এরকম পরিস্থিতি অনেক রকমেরই কথা হয়। অনেক কিছুও হয়। তবে এটাও ঠিক যে, একজন শিক্ষক যখন লাঞ্ছিত হন তখন সারা দেশের শিক্ষকরাও নিশ্চয় তারা ব্যথিত হন। তাদের সম্মানের জায়গাটা আছে।

আরও পড়ুন: ছাত্রলীগ থেকে উঠে এসে ২৭ বছরে প্যানেল মেয়র, জড়ালেন প্রশ্নফাঁসে

এ বিষয়ে শনিবার বিকেলে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, শাবিপ্রবির চলমান সঙ্কট নিয়ে আমাদের উপাচার্য পরিষদের একটি সভা হয়েছে। তবে এ সভায় কারো পদত্যাগের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ফেসবুকে যে কেউ তার মত করে লিখতে পারেন। এ ধরনের কথা সঠিক নয়।

এদিকে, বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা-সমালোচনার পর শনিবার রাতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুর রহমান ও পরিষদের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত একটি বিবৃতি দেয়া হয়েছে। সেখানেও ৩৪ ভিসির পদত্যাগের কোন তথ্য জানা যায়নি।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শাবিপ্রবির উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে গত ২০ জানুয়ারি বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের এক জরুরী সভা ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্ম জুমে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগণ উপস্থিত ছিলেন। এতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে উপাচার্যগণ মতবিনিময় করেন।

আরও পড়ুন: আন্দোলনে বহিরাগত কারও ইন্ধন আছে কিনা, সন্দেহ শিক্ষামন্ত্রীর

এতে আরও বলা হয়, ইতোমধ্যে বেগম সিরাজুন্নেছা চৌধুরী হলে একজন নতুন প্রাধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হলেও উপাচার্যসহ তাঁর পরিবারের সদস্যদের অবরুদ্ধ করে রাখার মাধ্যমে বর্তমানে যে জটিল পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে তা আমাদের কোনোভাবেই কাম্য নয়। নীতি বহির্ভূতভাবে ভিসির পদত্যাগের দাবীতে এখন ক্রমশ যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সৃষ্টি করা হচ্ছে তা সমগ্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করে তোলার মাধ্যমে দেশের উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ফেলার একটি চক্রান্তের অংশ বলেই প্রতিভাত হচ্ছে।

এদিকে, সংবাদিক সুপন রায় কোন উৎস থেকে ৩৪ ভিসির পদত্যাগের তথ্য পেয়েছেন সেটি জানতে তার সঙ্গে একাধিকরার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। মুঠোফোনে তার কোনো সংযোগ পাওয়া যায়নি। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বার্তা পাঠানো হয়েছে। এতেও তিনি কোন সাড়া দেননি।

গেল ২০ জানুয়ারি বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন এমন একাধিক উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলেছে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস। তাদের পক্ষ থেকেও বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. মুনাজ আহমেদ নূর বলেন, ভিসিদের একটি সভা হয়েছে। তবে এতে কারো পদত্যাগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। উপাচার্য পরিষদের এ বিষয়ে জানা নেই।


সর্বশেষ সংবাদ