রাবির ডাইনিং-ক্যান্টিনে মানহীন ও পঁচা খাবার, পেটের পীড়ায় ভুগছে শিক্ষার্থীরা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২১, ০৪:২৮ PM , আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২১, ০৪:২৮ PM
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আবাসিক হলগুলোর ডাইনিং ও ক্যান্টিনে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার না দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। একদিকে যেমন রান্নাঘরে ধুলাবালি ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, অন্যদিকে মানহীন ও একই খাবার প্রতিদিন দেয়ায় ডাইনিং-ক্যান্টিনে খাবারের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন আবাসিক শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, অপুষ্টিকর, পঁচা ও দুপুরের খাবার রাতের খাবারে মিশিয়ে দেয়া হচ্ছে, যা বাধ্য হয়েই খাচ্ছেন তারা। নিম্নমানের খাবার খেয়ে ক্ষুধামন্দা ও চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের চিকিৎসকরা বলছেন, এ ধরনের অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে শিক্ষার্থীরা আমাশয়, ডায়রিয়া, হ্যাপাটাইটিস, জন্ডিস, এলার্জিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এছাড়া পেটের সমস্যা নিয়ে অনেক শিক্ষার্থী চিকিৎসা নিতে আসছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো ঘুরে দেখা গেছে, হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের খাবারের জন্য হলের ডাইনিং ও ক্যান্টিনের ওপর ভরসা করতে হয়। সে ডাইনিং-ক্যান্টিনগুলোর রান্নাঘরে ময়লা-আবর্জনায় ভরপুর। যেখানে অস্বাস্থ্যকর ও ধুলাবালির মধ্যে খাবার রান্না ও পরিবেশন করতে দেখা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ছাত্রদের জন্য ১১টি ও ছাত্রীদের জন্য ৬টিসহ মোট ১৭টি হল রয়েছে। এসব হলে প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছেন। হলের আবাসিক শিক্ষার্থীসহ বাইরে থাকা শিক্ষার্থীদের অনেকেই হলের ডাইনিং-ক্যান্টিনে নিয়মিত খাবার খেয়ে থাকেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসানের বলেন, ‘হলের ডাইনিংয়ে একই খাবার প্রতিদিন দিচ্ছে। পেঁপে ও আলুর সঙ্গে মাছ অথবা ব্রয়লার মুরগি প্রতিদিন খেতে হচ্ছে; সাথে পানির মতো ডাল। এরপর যদি ক্যান্টিনে খেতে যাই সেখানে দাম অতিরিক্ত নেয়। কিন্তু খাবারের মান তত উন্নত না। মূলত বাধ্য হয়েই খাচ্ছি। মাঝে মধ্যে পেটে সমস্যা হয়, অসুস্থ হই।’
তিনি আনও বলেন, ‘ডাইনিং ও ক্যান্টিন দুইটাতেই ধুলাবালি, ময়লা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সব সময় দেখা যায়। কয়েকদিন খাবারে মাছি ও পোকামাকড় পেয়েছি, তখন খাবার রেখে চলে আসতে হয়েছে।’
শহীদ জিয়াউর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আবু হানিফ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের ভালো স্বাস্থ্য ও সুস্থতা নিয়ে মোটেই চিন্তা করছে না। যদি তারা চিন্তা করত তাহলে হলে এই ধরনের বাজে, অস্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হতো না আমাদের।’
এ ছাড়া কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দুপুরের খাবার রাতের খাবারে মিশিয়ে দেয়ার অভিযোগ করে মতিহার হলের আবাসিক শিক্ষার্থী জুয়েল মামুন বলেন, ‘কর্মচারীরা কম করে তরকারি দিয়ে দুপুরের খাবার রাতের খাবারে মিশিয়ে দেয়। এটা করে তারা অতিরিক্ত আয়ের চেষ্টা করেন।
‘সেই সাথে হলের রান্নাঘর থাকে ময়লায় পরিপূর্ণ। খাবারে পচা আলু, চালে পাথর, রান্না করার অপরিচ্ছন্ন হাঁড়ি-পাতিল ছাড়াও প্রতিদিন একই পদের খাবারে আমরা খাই।’
মুন্নুজান হলের শিক্ষার্থী ফাতেমা খাতুন বলেন, ‘হলের খাবার খুবই বাজে। পুই শাক, পেঁপে আর আলু এই তিন ধরনের খাবার প্রতিদিন দিচ্ছে। বাধ্য হয়েই খাচ্ছি। দুই দিনের বেশি খাওয়া যায় না। খেলেই অসুস্থ হতে হয়। আর হলের ডাইনিং ও ক্যান্টিনের একটিও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নয়, খুবই নোংরা।’।
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ‘খাবারের এই অভিযোগগুলো নিয়ে আলোচনা চলছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে বিষয়গুলো সমাধান হবে বলে আশা করছি।’
২০ নভেম্বর অস্বাস্থ্যকর ও নিম্নমানের খাবার নিয়ে আন্দোলন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের ছাত্রীরা।
তাদের অভিযোগ, হলের ডাইনিং ও ক্যান্টিন সব সময় অপরিষ্কার থাকে। খাবারে মশা ও মাছি থাকে; খাবার নিম্নমানের। বারবার এ নিয়ে হল প্রাধ্যক্ষকে লিখিত অভিযোগ করলেও কোনো পরিবর্তন আসেনি। এর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি হল কর্তৃপক্ষ।
৫ নভেম্বর হলের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ এনে তাপসী রাবেয়া হলের ছাত্রীরা আন্দোলনে নেমেছিল। সেখানেও খাবারের মান উন্নয়নের দাবি জানিয়েছে তারা।