ঢাবিতে অনলাইনে যেভাবে নেওয়া হবে পরীক্ষা, নির্দেশিকা প্রকাশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ফটো

দেশে করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় সশরীরে পরীক্ষা নেওয়ার পরিবর্তে অনলাইনে নিতে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে নিদের্শনা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষ। তবে, আসন্ন কঠোর লকডাউনের মধ্যেই পরীক্ষা নেওয়া হবে কি-না, তা আজ রবিবার (২৭ জুন) একটি সভা করে সিদ্ধান্ত জানাবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

অনলাইনে কোন পদ্ধতি অনুসরণ করে পরীক্ষা নেওয়া হবে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশিকা ইতোমধ্যে ঢাবি উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল নির্দেশনা অনুযায়ী তৈরী করে, তা সংশ্লিষ্ট অনুষদ এবং বিভাগগুলোতে পাঠানো হয়েছে। এদিকে নির্দেশনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে।

এর আগে ১ জুন অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের বিশেষ সভার সিদ্ধান্ত ছিল স্নাতক বিভিন্ন বর্ষ এবং স্নাতকোত্তরের পরীক্ষা জুলাই থেকে সশরীরে শুরু হবে। যদি লকডাউন বা করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে, তাহলে পরীক্ষা অনলাইনে নেওয়া হবে।

এদিকে, কোভিড-১৯ সংক্রমণ ঠেকাতে আগামী বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) থেকে সারাদেশে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। এ অবস্থায় পরীক্ষা নেওয়া হবে কি-না, তা আজ জানা যাবে।

অনলাইন পরীক্ষা সংক্রান্ত নির্দেশিকায় যা বলা হয়েছে

ক) প্রস্তুতি পর্ব

১। পরীক্ষা নেওয়ার জন্য অনলাইন প্লাটফর্ম প্রস্তুতকরণ:

অনলাইনে ফাইনাল পরীক্ষা নেওয়ার জন্য গুগল ক্লাসরুম ব্যবহার করতে হবে। প্রতি সেমিস্টার/বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ক্লাসরুম খোলা হবে। সংশ্লিষ্ট সেমিস্টার/বর্ষের পরীক্ষা কমিটি গুগল ক্লাসরুম খুলবে এবং এক্ষেত্রে অবশ্যই ইনস্টিটিউশনাল ইমেইল আইডি ব্যবহার করতে হবে। শিক্ষার্থীদেরকে তাদের নিজ নিজ সেমিস্টার/বর্ষের জন্য তৈরি করা গুগল ক্লাসরুম এ পরীক্ষা শুরুর অন্তত তিন দিন আগে জয়েন করতে হবে। সকল পরীক্ষার্থী নির্ধারিত ক্লাসরুমে জয়েন করতে পেরেছে কি-না বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সেমিস্টার/বর্ষের পরীক্ষা কমিটি নিশ্চিত করবে।

প্রতিটি পরীক্ষার জন্য আলাদা অ্যাসাইনমেন্ট খোলা হবে। প্রদত্ত অ্যাসাইনমেন্ট-এ নির্ধারিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সংযুক্তি হিসেবে থাকবে, যা পরীক্ষা শুরুর পাঁচ মিনিট পূর্বে গুগল ক্লাসরুমে প্রকাশ করা হবে। পরীক্ষার্থীরা সংযুক্ত প্রশ্নপত্রটি নিজ কম্পিউটার/মোবাইলে ডাউনলোড করতে পারবে।

প্রত্যবেক্ষণের জন্য অনলাইন মিটিং প্লাটফর্ম জুম ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই BdREN থেকে দেওয়া জুমের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে হবে।

২। প্রশ্নপত্র প্রণয়ন সংক্রান্ত

i) পরীক্ষার নম্বর ও সময়

প্রচলিত পদ্ধতির অর্ধেক সময়ে এবং ফাইনাল পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত নম্বরের অর্ধেক নম্বরে পরীক্ষা নিতে হবে। ফল বিন্যাসের সময় নম্বর দ্বিগুণ করে পূর্ণ নম্বরে রূপান্তরিত হবে।

*দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত ১০ মিনিট সময় পাবে।

ii) প্রশ্নের ধরন সংক্রান্ত

প্রচলিত পদ্ধতিতে ফাইনাল পরীক্ষার জন্য যে ধরনের প্রশ্ন করা হয় (যেমন বর্ণনামূলক, বহুনির্বাচনী, সংক্ষিপ্ত ইত্যাদি) এক্ষেত্রেও একই ধরনের প্রশ্নই করা হবে। তবে বিভাগের একাডেমিক কমিটি চাইলে এর পরিবর্তন করতে পারবে। উভয় ক্ষেত্রেই বিভাগ থেকে সকল পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা শুরুর অন্তত এক সপ্তাহ পূর্বে প্রশ্নের ধরন সম্পর্কে অবহিত করতে হবে ।

৪। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের বিষয়ে করণীয়

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীগণ নিজ দায়িত্বে তার চেয়ে কম শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন একজন শ্রুতিলেখক নির্বাচন করতে পারবে। শ্রুতিলেখকের শিক্ষাগত যোগ্যতার সত্যায়িত প্রমাণপত্র, সংক্ষিপ্ত পরিচিতি, ছবি ও ফোন নম্বর পরীক্ষা শুরুর অন্তত সাত দিন আগে বিভাগ/ইনস্টিটিউট-এর চেয়ারম্যান/পরিচালক এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের ইমেইল-এ পাঠিয়ে দিতে হবে।

খ) পরীক্ষা অনুষ্ঠান

১। অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার সংক্রান্ত

জুমে জয়েন করার ক্ষেত্রে পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই নামের পরিবর্তে কেবলমাত্র পরীক্ষার রোল নম্বর ব্যবহার করতে হবে। যদি কোনো পরীক্ষার্থী এর ব্যত্যয় ঘটায় সেক্ষেত্রে প্রত্যবেক্ষকদের একজন তাকে রিনেম করে দিবেন। পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই পরীক্ষা শুরুর অন্তত ১৫ মিনিট আগে জুমে জয়েন করতে হবে। প্রতিটি পরীক্ষার অন্তত ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষা কমিটি গুগল ক্লাসরুমের স্ট্রিমে জুম-এর আইডি পাসওয়ার্ড এবং জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগ করার জন্য অন্তত তিনটি মোবাইল নম্বর পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে শেয়ার করবেন

পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই ভিডিও সচল রেখে দৃশ্যমান থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে।

২। উত্তরপত্র সংক্রান্ত

অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত উত্তরপত্র ব্যবহারের সুযোগ নেই বিধায় উত্তরপত্রের কাভার পৃষ্ঠার এডিটেবল সফটকপি পরীক্ষার্থীদেরকে পরীক্ষা শুরুর অন্তত একদিন আগে গুগল ক্লাসরুমের মাধ্যমে সরবরাহ করতে হবে। পরীক্ষা কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত পরীক্ষার খাতার অনুকরণে এই কাভার পৃষ্ঠা। প্রস্তুত করবেন। পরীক্ষার্থীগণ পরীক্ষা শুরুর পূর্বেই প্রয়োজনীয় তথ্য উক্ত সফটকপিতে পূরণ করে প্রিন্ট করবেন অথবা সেটি প্রিন্ট নিয়ে হাতে পুরণ করবেন অথবা প্রিন্টার না থাকলে A4 সাইজের সাদা কাগজে তার অনুলিপি প্রস্তুত করে রাখবেন। উত্তরপত্র স্ক্যান করার সময় এই পাতাটিকে প্রথম পাতা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

পরীক্ষার্থীরা A4 সাইজ কাগজে নিজ হাতে প্রশ্নের উত্তর লিখবে এবং উত্তরপত্রের প্রতি পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠা নম্বর এবং পরীক্ষার রোল নম্বর লিখতে হবে।

৫। উত্তরপত্র জমা দেওয়া সংক্রান্ত

পরীক্ষা শেষে পরীক্ষার্থীদেরকে তাদের উত্তরপত্র স্ক্যান করে/ছবি তুলে একটি সিঙ্গেল PDF ফাইল আকারে গুগল ক্লাসরুমের যে অ্যাসাইনমেন্ট-এর মাধ্যমে প্রশ্নপত্র বিতরণ করা হয়েছিল সেই একই অ্যাসাইনমেন্ট-এর বিপরীতে অ্যাটাচমেন্ট আকারে (কাভার পৃষ্ঠাসহ) পরীক্ষার সময় শেষ হওয়ার ১০ থেকে ৩০ মিনিট (বিভাগ/ইনস্টিটিউট কর্তৃক পূর্বনির্ধারিত) সময়ের মধ্যে জমা দিতে হবে। একজন পরীক্ষার্থী একটির বেশি ফাইল আপলোড করতে পারবে না। আপলোডকৃত ফাইলের নামকরণের ক্ষেত্রে প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে অবশ্যই একটি কমন ফরম্যাট ব্যবহার করতে হবে। তা না হলে পরবর্তীতে সকল ফাইল ডাউনলোড করে কোনো ফোল্ডারে সংরক্ষণ করার পর কোন পরীক্ষার্থী কোন ফাইল আপলোড করেছে তা নির্ণয় করা দুরূহ হয়ে পড়বে। ফাইলের নামের ফরম্যাট হতে হবে *কোর্স কোড_পরীক্ষার রোল নম্বর'। এই বিষয়টি অবশ্যই আগে থেকে পরীক্ষার্থীদের অবহিত করতে হবে (গুগল ক্লাসরুমের স্ট্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে) এবং পরীক্ষা শুরুর আগে প্রত্যবেক্ষকগণ পরীক্ষার্থীদের বিষয়ে আবার অবহিত করবেন।

উত্তরপত্রের স্ক্যানকৃত PDF ফাইলটি অ্যাসাইনমেন্ট-এর বিপরীতে অ্যাটাচ করা হয়ে গেলে অ্যাসাইনমেন্টটি টার্ন ইন' করার বিষয়ে প্রত্যবেক্ষকগণ বারবার সতর্ক করবেন। উত্তরপত্র জমা দেয়ার নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হওয়ার পর প্রত্যবেক্ষকগণ সকল পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্র জমা দেয়া এবং টার্ন-ইন করার বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। এটি নিশ্চিত হওয়ার পরই একজন পরীক্ষার্থী জুম-মিটিং ত্যাগ করতে পারবেন। বিশেষ পরিস্থিতিতে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে গুগল ক্লাসরুমে উত্তরপত্র জমা না নিয়ে পরীক্ষা কমিটি কর্তৃক প্রদত্ত কোনো একটি ইনস্টিটিউশনাল ইমেইল আইডিতেও পরীক্ষার্থী উত্তরপত্র ইমেইলে অ্যাটাচমেন্ট আকারে প্রেরণ করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই পরীক্ষা কমিটির উপস্থিত সদস্যের অনুমতির প্রয়োজন হবে।

৬। মৌখিক পরীক্ষা সংক্রান্ত

মৌখিক পরীক্ষা অনলাইনে জুম প্লাটফর্ম ব্যবহার করে নেওয়া যাবে ।

৭। ব্যবহারিক পরীক্ষা সংক্রান্ত

যেসব বিভাগ/ইনস্টিটিউট-এ ব্যবহারিক কোর্স রয়েছে সেসব ক্ষেত্রে পরীক্ষার্থীর সশরীর উপস্থিতি আবশ্যক না হলে

অনলাইনে ব্যবহারিক পরীক্ষা গ্রহণ করা যেতে পারে।

১। যান্ত্রিক ত্রুটির ক্ষেত্রে করণীয়

বৈদ্যুতিক বা যান্ত্রিক ত্রুটি অথবা ইন্টারনেট সংশ্লিষ্ট প্রতিবন্ধকতার কারণে কোনো পরীক্ষার্থী পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে জুম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে অথবা উত্তরপত্র নির্ধারিত সময়ে আপলোড করতে ব্যর্থ হলে তাকে অনধিক পাঁচ মিনিটের মধ্যে মোবাইল ফোনে প্রত্যবেক্ষককে অবহিত করতে হবে।

২। পুনঃপরীক্ষা গ্রহণ সংক্রান্ত

বৈদ্যুতিক বা যান্ত্রিক ত্রুটি অথবা ইন্টারনেট সংশ্লিষ্ট প্রতিবন্ধকতার কারণে কোনো পরীক্ষার্থী পরীক্ষা সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হলে প্রত্যবেক্ষকের সুপারিশসহ পরীক্ষার্থীর লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী পুনঃপরীক্ষা নেওয়া হবে।

কোনো পরীক্ষার্থী যদি অনলাইন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করে সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত বিধি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

৩। অনলাইন কর্মশালা আয়োজন সংক্রান্ত

পরীক্ষা নেওয়া সংক্রান্ত উপরিউক্ত যাবতীয় কার্যক্রম গুগল ক্লাসরুম এবং জুমের মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য পরীক্ষা কমিটির সদস্য প্রত্যবেক্ষক এবং পরীক্ষার্থীদের জন্য অনলাইনে কর্মশালা আয়োজন বাঞ্ছনীয়। এই কর্মশালা বিভাগ/ইনস্টিটিউট অথবা অনুষদ পর্যায়ে হতে পারে।

শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে গুগল ক্লাসরুমে পরীক্ষা দেওয়া ও নেওয়ার কর্মকৌশল সংক্রান্ত দুটি ভিডিও টিউটোরিয়াল অচিরেই প্রকাশ করা হবে।

এই নির্দেশিকায় বলা নেই এমন কোনো সমস্যার উদ্ভব হলে পরীক্ষা কমিটি তার সমাধান দিতে পারবে।

নির্দেশিকাটি দেখতে এখোনে ক্লিক করুন


সর্বশেষ সংবাদ