চবিতে হামলার প্রতিবাদে ঢাকায় সাবেক শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:১৫ PM , আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৪৯ PM
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীদের উপর স্থানীয়দের হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছেন ঢাকাস্থ সাবেক শিক্ষার্থীরা। একইসাথে বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তি, আহতদের সুচিকিৎসা এবং উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তারা।
আজ সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন থেকে এসব দাবি জানানো হয়। ‘ঢাকাস্থ সাবেক চবিয়ান’ ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে প্রধান বক্তা ছিলেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করা হয়েছে। তাদের কুপিয়ে গুরুতরভাবে জখম করা হয়েছে। দু-তিনজন শিক্ষার্থী মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন।
তারা বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে সংঘর্ষ চললেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আহ্বানে সাড়া দেয়নি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর মধ্য দিয়ে বোঝা যায়, তারা আগের চরিত্র বদলায়নি।
এ ঘটনায় ‘দেশের কর্তৃপক্ষ’ -এর প্রতি ক্ষোভ জানিয়ে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আইসিইউতে চিকিৎসাধীন দুজন ছাত্র যদি মারা যায়, এর দায় কে নিবে? আশ্চর্য্যের ব্যাপার, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ডেকেছে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আসেনি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মানে যদি পুলিশ বলেন, তাইলে পুলিশগুলো তো আগের মতোই আছে। পুলিশের মধ্যে কোনো উন্নতি হয়েছে বলে আমি দেখিনি।
তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুসকে আর্মিকে ফোন করতে হলো, এরপর আর্মি আসল। এটা কি দেশ? এই দেশ আমরা ১৩ মাসে তৈরি করলাম?
চাকসুর সাবেক এই জিএস বলেন, আমরা ১৫ বছর পালিয়ে পালিয়ে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। আমাদের খবর কী করে গোয়েন্দা বাহিনী পেত? আমরা রওনা হতাম ওই মোড় থেকে, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত যেতে পারতাম না। মাঝপথে পুলিশ আমাদের ধরে ফেলতে পারত। আমরা রাতে তিনটা বাড়ি ঘুরে আশ্রয় নিতাম, সেখানে পুলিশ প্রবেশ করতে পারত। আর এখন পতিত স্বৈরাচারের লোকেরা মিছিল বের করেছে, কোনো পুলিশ নাই।
আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় স্থানীয়দের বিরাট অবদান আছে। এখানে অনেকেই জমি দান করেছেন। সে কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরির ক্ষেত্রে স্থানীয়দের প্রাধান্য দেয়া হয়। ফলে স্থানীয়দের সাথে ক্যাম্পাসের একটা সুদৃঢ় বন্ধন তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে স্থানীয়রা বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আমাদের কাছে আসত। আমরা যখন তাদের কাছে যেতাম, যথেষ্ট আপ্যায়ন করত। কখনও কখনও বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস রক্তাক্ত হত। কিন্তু এবারে যে ঘটনাটি ঘটেছে, তা অতীতের সমস্ত ঘটনাকে ম্লান করে দিয়েছে।
চবির সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, এই সভ্য যুগে, ২০২৫ সালে এসে অতীতের মতো আঞ্চলিক, ঘৃণা ছড়ানো ও নৃশংসতার রাজনীতি দেখতে হচ্ছে, এটা অত্যন্ত আফসোসের বিষয়। এ ধরণের সংঘাত চলতে থাকলে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।
এ সময় বিচার বিভাগীয় তদন্ত, দোষীদের শাস্তি, আহতদের সুচিকিৎসা এবং দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।
মানববন্ধনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, চবির ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাহ আলম, সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন ফয়সল, এক্টিভিস্ট ড. ফয়জুল হক, সাংবাদিক ইউসুফ আরেফীন, ব্যারিস্টার আলি আক্কাস, এডভোকেট রায়হান সোবহান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। বেশ কিছু সাবেক শিক্ষার্থী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ৩০ আগস্ট রাত সাড়ে ১১টার দিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকায় এক ছাত্রীকে হেনস্তার জেরে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। রাতের ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল রবিবার (৩১ আগস্ট) সকাল থেকে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন। বেলা ১২টার দিকে দুই নম্বর গেট এলাকায় ফের সংঘর্ষ শুরু হয়। এরপর ঘটনাস্থলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য, প্রক্টর-সহ সহস্রাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১ সেপ্টেম্বর রাত ১২টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করেছে কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় চলতি সপ্তাহের সকল পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।