ঢাবি গ্রন্থাগারের পাশেই বহিরাগতদের গাড়ি পার্কিং, নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ প্রশাসন
- জুবায়ের হোসাইন, ঢাবি
- প্রকাশ: ২৬ মে ২০২৪, ০৩:৩৭ PM , আপডেট: ২৬ মে ২০২৪, ১০:১৭ PM
গ্রন্থাগার পড়াশোনার স্থান। এখানে জ্ঞান আহরণের উদ্দেশ্যেই প্রবেশ করা হয়। তাই গ্রন্থাগার ও তার আশপাশে নীরব পরিবেশ থাকাটা স্বাভাবিক। তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার (সেন্ট্রাল লাইব্রেরি)। বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো শিক্ষার্থীর জ্ঞান আহরণের এই জায়গাতে একটি বড় সমস্যা হলো শব্দ দূষণ। কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ও কেন্দ্রীয় মসজিদের মধ্যবর্তী রাস্তা দিয়ে অবাধে প্রতিনিয়তই চলছে বহিরাগত প্রাইভেট কার, সিএনজি ও রিকশা। সারাক্ষণ এসব যানের হর্ন বাজতেই থাকে।
এছাড়া গ্রন্থাগারের উত্তর পাশেই রয়েছে বহিরাগতদের গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা। ক্যাম্পাসে কিংবা ক্যাম্পাসের আশপাশে কোনো কাজে আসলে ওখানেই বহিরাগতরা পার্কিং করে তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি। সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতিও নেন না তারা। সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছে, ক্যাম্পাসের পরিবেশ নিয়ে নজর নেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। এজন্য ভোগান্তি যেন তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ও কেন্দ্রীয় মসজিদের মধ্যবর্তী রাস্তা দিয়ে সবসময় গাড়ি চলাচল করতে থাকে। মাঝে মাঝে জ্যাম লেগে যায় এবং হাঁটাচলা করার জায়গাও থাকে না। এসব গাড়ির বেশির ভাগ গাড়িই বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো যুক্ত না। কিন্তু তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে বিভিন্ন জায়গা চলাচল করছে। কয়েকজন চালকের সাথে কথা বলে এ ব্যাপারটি নিশ্চিত হয়েছে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস।
এছাড়াও কেন্দ্রীয় মসজিদের ঠিক সামনে ও লাইব্রেরির পাশের খালি জায়গাটি যেন পরিণত হয়েছে গ্যারেজে। সকাল থেকে রাত অবধি একাধিক গাড়ি এখানে পার্কিং করে রাখা হয়, যার প্রতিটি গাড়িই বাইরে থেকে আসা। কিছু গাড়ি এমনও রয়েছে মালিক ক্যাম্পাসের বাইরে কাজ করছে, আর চালক ঢাবির লাইব্রেরির পাশে গাড়ি পার্কিং করে বসে আছে। এমনকি লাইব্রেরির যে জরুরি বহির্গমন গেট, যেকোনো দুর্ঘটনায় যেই গেটটি শিক্ষার্থীরা ব্যবহার করবে তার সামনেও করা হচ্ছে গাড়ি পার্কিং। যার ফলে গেটটির প্রধান দরজা ব্যতীত অনেকটা গাড়ি দিয়ে আরেকটা দরজা তৈরি হয়েছে।
সেখানে পার্কিং করা একটি গাগির চালক কবির জানান, গাড়ির মালিক একজন ব্যবসায়ী। তিনি কেন এখানে এসেছেন তা তিনি জানেন না।
তার দাবি, তাকে সামনে নামিয়ে দিয়ে এসে এখানে পার্কিং দেখে তিনিও পার্কিং করেছি। কেউ তাকে এখানে পার্কিং করতে বলেনি আর তিনি জানিও না যে এটার পাশে লাইব্রেরি।
ঢাবির মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মারুফ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থাকবে নীরব। কিন্তু এখানে সে পরিবেশটা নেই। লাইব্রেরির পাশের এই রাস্তাটা দিয়ে সারাদিন গাড়ি চলে। হর্নের শব্দে টিকা যায় না পড়া তো দূরের কথা। তাও বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি হলে চলে বেশির ভাগই বাইরের গাড়ি। কাটাবনের রাস্তায় জ্যাম থাকায় তারা এই পাশ দিয়ে শর্টকাটে যায়। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো নজর এদিকে নেই বললেই চলে।
আরেক শিক্ষার্থী ফয়সাল বলেন, লাইব্রেরিতে আমাদের আসলে ভেতরে যেমন সিট সংকট বাইরেও তেমন অব্যবস্থাপনা। পৃথিবীতে কোনো লাইব্রেরি নাই যেখানে পাশের রাস্তাগুলোতে হর্ন বাজে। মেট্রোরেলের শব্দ, নেই কোনো সাইকেল স্ট্যান্ড যার কারণে লাইব্রেরির দেয়াল ঘেঁষে সাইকেল রাখা হয় চুরির ভয়ে, মাঝে মাঝে ভেতর থেকে ব্যাগ চুরি হয়ে যায়, পাশেই বহিরাগত গাড়ি পার্কিং, ফায়ার এক্সিট বন্ধ করে ফেলেছে তারা। আসলে আমাদের অব্যবস্থাপনার শেষ নেই। আবার সমাধানও নেই। চলছে এভাবে আর এভাবেই চলবে। জেনারেশন আসবে জেনারেশন যাবে কিন্তু কোনো পরিবর্তন আসবে না।
জানতে চাইলে ঢাবির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির লাইব্রেরিয়ান অধ্যাপক ড. নাসিরউদ্দিন মুন্সী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা দেখেছি এখানে বহিরাগত প্রচুর গাড়ি পার্কিং হয়। ইমারজেন্সি গেটের সামনেও গাড়ি রয়েছে এখনও। এটার একটা প্রতিকার দরকার। আমি চেয়েছিলাম মসজিদ ও লাইব্রেরির মধ্যবর্তী যে রাস্তা, তার পাশ দিয়ে লাইব্রেরির পাশে যে ফাঁকা জায়গায় গাড়ি পার্কিং করা হয় সেখানে আমরা একটা ব্যারিকেড দিবো যাতে গাড়ি ঢুকতে না পারে। এজন্য আমি ইঞ্জিনিয়ার বরাবর একটি চিঠিও দিয়েছিলাম। তবে এটাতো দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া যার ফলে দ্রুত সময়ের মধ্যে করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে এস্টেট অফিস বা প্রক্টর অফিস যদি কোনো বিজ্ঞপ্তি দেয় তাহলে আমাদের জন্য কাজটা একটু সুবিধা হয়। তাহলে একটু হলেও গাড়ি পার্কিং বন্ধ হবে ।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাকসুদুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা এ ব্যাপারে অবগত আছি। মসজিদ ও লাইব্রেরির পার্শ্ববর্তী রাস্তাটিতে সব সময় গাড়ি চলাচল করতে থাকে। যার ফলে এখানে প্রচুর শব্দ তৈরি হয় এবং গাড়িগুলোও বাইরের। এরা বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে আর গাড়ি পার্কিং করে এখানে। আমরা প্রচুর ধরেছি মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দিয়েছি। এই শব্দের কারণে লাইব্রেরিতে শিক্ষার্থীদের সমস্যা হয়। পাশাপাশি এটাও জেনেছি যে লাইব্রেরির পাশে যে গাড়ি পার্কিং করা হচ্ছে সেগুলো বেশিরভাগই বহিরাগত গাড়ি।
“আমি মাঝে মাঝেই আমাদের মোবাইল টিমকে পাঠাই। চালকদেরকে বুঝিয়ে বলি পাশাপাশি লাইসেন্সের একটা কপি আমরা রেখে দেই এবং বলে দেই পরবর্তীতে আসলে মামলা দেয়া হবে। কিন্তু দেখা যায়, প্রত্যেকদিন আলাদা আলাদা গাড়ি আসছে যার ফলে এই সমস্যাটা সহজে সমাধান করা যাচ্ছে না। লাইব্রেরিয়ান স্যারের কি প্ল্যান সেটি এখনো তিনি আমার সাথে শেয়ার করেন নি। ব্যারিকেড দেওয়ার বিষয়টি সত্য হলে এটিই হবে উত্তম সমাধান।”