রাবি ছাত্র পরিচয়ে বন্ধুত্ব-প্রেম, অবশেষে ধরা
- রাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৩ জুলাই ২০২৩, ১০:৫২ PM , আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২৩, ১১:০০ PM
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের ছাত্র পরিচয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতেন। পরে টাকা ধার নিয়ে আর ফেরত দিতেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরিচয়ে প্রেমও করতেন। অবশেষে জানা গেল তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নন।
দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীসহ অনেকের কাছ থেকে টাকা ও মোবাইলসহ মূল্যবান সামগ্রী হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ফারহান আহমেদ (২০) বহিরাগত যুবককে আটক করা হয়েছে। আজ রবিবার (২৩ জুলাই) বিকেল ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি তাকে আটক করেন। পরে তাকে পুলিশে হাতে সোপর্দ করা হয়।
আটক ফারহান আহমেদের পিতার নাম আব্দুল খালেক। মাতার নাম হেনা বেগম। তিনি নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা থানার বাসিন্দা বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাবিতে অর্থনীতি বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের ছাত্র হিসাবে পরিচয় দিয়ে বন্ধুত্ব করে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের মুহিব্বুল্লাহ সৌরভ, মাহমুদুল হাসান, নাহিদুল ইসলাম, আশরাফুল হক আসিফ, সাখাওয়াত নাহিদ, নওসেদ নোমান, রাজুসহ কয়েকজনের সাথে। বন্ধুত্বের সুবাদে টাকা ধার নেয় রাজুর কাছ থেকে। যা পরে ফেরৎ দেয়নি। তার থাকার জায়গা নাই বলে আকুতি জানালে আশরাফুল হক আসিফ তাকে মেসে তুলে দেয়। পরবর্তীতে মেস ভাড়া না দিয়ে মূল্যবান সামগ্রী চুরি করে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। পরে খোঁজ-খবর নিয়েও পাওয়া যায়নি তাকে।
পরবর্তীতে গত ১৮ জুলাই হঠাৎ খেলার মাঠে সৌরভের সাথে দেখা হলে সে জানায় সব ভাড়া পরিশোধ করে দিয়েছে সে। কিন্তু পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায় সে কোনো টাকা-পয়সা পরিশোধ করেনি। আজ বিকাল ৫টা নাগাদ তাকে ক্যাম্পাসে দেখতে পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে টাকা দিতে অস্বীকার জানায় এবং তার পিতা মারা গেছে বলে জানায়। পরে তাকে প্রক্টর অফিসে ধরিয়ে দেওয়া হয়।
জানা যায়, প্রক্টর অফিস থেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। সে তার বাবার নাম আব্দুল বারিক ও মাতার নাম সায়েরা খাতুন বলে জানায়। পরবর্তীতে তার চাচাতো ভাইয়ের কাছে ফোন দিয়ে জানা যায় এসব তথ্য ভুল। এছাড়া তার বাবার মৃত্যুর সংবাদ ও নিছক মিথ্যা ছাড়া কিছুই না।
অন্য একটি সূত্র থেকে জানা যায়, সে পূর্বেও একটি মেসে উঠে সেখান থেকে টাকা-পয়সা না দিয়ে চলে যায়।
পুলিশ কর্মকর্তা তার মোবাইল ফোন চেক করে একাধিক নারীর সাথে সম্পর্কের ব্যাপারে নিশ্চিত হন। তানিয়া নামে তার এক প্রেমিকার সাথে কথা বলে জানা যায় সে রাবির অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র পরিচয়ে তার সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়ায়। প্রশাসনের সন্দেহ সে ভুয়া পরিচয়ে একাধিক নারীসহ বিভিন্ন মানুষের সাথে প্রতারণায় লিপ্ত। সর্বশেষ তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয় রাবি প্রশাসন।
প্রত্যেক্ষদর্শী আশরাফুল হক আসিফ বলেন, অর্থনীতি বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী পরিচয়ে আমার সাথে বন্ধুত্ব করে এই ছেলেটি। সে আমাকে বলে তার থাকার জায়গা নেই। তাই আমাকে একটি মেস খুঁজে দিতে বলে। অল্প দিনের পরিচয় হলেও তাকে আমি বিশ্বাস করে আমার বাসায় ২-৩ দিন রাখি। তারপর পরিচিত এক ভাইয়ের মেসে তুলে দেয়। কিন্তু কিছুদিন পর সে মেস থেকে মূল্যবান সামগ্রী চুরি করে পালিয়ে যায়। ফোনে কল করেও তাকে পাওয়া যায় না। মেসেঞ্জারে মেসেজ করেছি কিন্তু উত্তর দেয়নি। আজ তাকে দেখতে পেয়ে আমরা কয়েকজন মিলে প্রক্টর অফিসে ধরিয়ে দেয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. আবুল বাশার মো. সরোয়ার আলম বলেন, প্রতারণার দায়ে ফারহান আহমেদ নামের এক ছেলেকে কিছু শিক্ষার্থী ধরিয়ে দেয়। সে অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র বলে পরিচয় দেয়। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানতে পারি ছেলেটি নিজের এবং তার পরিবার সম্পর্কে মিথ্যা পরিচয় তুলে ধরেছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় তাকে আমরা পুলিশের হাতে তুলে দেয়।