যৌতুক চেয়ে চবি ছাত্রীকে মারধর, কারাগারে র‍্যাব সদস্য

মেহেদী হাসান চৌধুরী
মেহেদী হাসান চৌধুরী  © সংগৃহীত

যৌতুকের দাবিতে ক্যাম্পাসে এসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) পড়ুয়া স্ত্রীকে মারধরের অভিযোগে করা মামলায় মেহেদী হাসান চৌধুরী নামে র‍্যাবের এক উপপরিদর্শককে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের মুখ্য বিচারিক আদালতের বিচারক কামরুন নাহার রুমি তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

আসামী ঢাকায় র‍্যাব-১ এ উপপরিদর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি কুমিল্লার লাঙ্গলকোট থানার পূর্ব জোদ্দা এলাকার বাসিন্দা। আর ভুক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের ছাত্রী ও কুমিল্লার কোতোয়ালি থানা এলাকার বাসিন্দা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা কোর্ট পরিদর্শক জাকির হোসাইন মাহমুদ।

আদালত সূত্রে জানা যায়, চবির ওই ছাত্রীর সঙ্গে ২০২১ সালের ২ জুলাই পারিবারিকভাবে মেহেদীর বিয়ে হয়। শুরুতে বিয়ের আগেরদিন মেহেদী ওই শিক্ষার্থীর পরিবার থেকে হলুদের খরচ বাবদ জোরপূর্বক ৪৫ হাজার টাকা যৌতুক আদায় করেন। বিয়ের ১১ দিন পর মেহেদীর সঙ্গে একাধিক নারীর অনৈতিক সম্পর্কের কথা জানতে পারেন ভুক্তভোগী। বিষয়টি সম্পর্কে স্বামীর কাছে জানতে চাইলে ক্ষুব্ধ হয়ে ভুক্তভোগীকে মারধর করেন মেহেদী।

পরবর্তীতে গাড়ি কেনার কথা বলে ভুক্তভোগীর বাবার বাড়ি থেকে ১০ লাখ টাকা যৌতুক এনে দেয়ার জন্য চাপ দেন। যৌতুক এনে দিতে অস্বীকার করলে স্ত্রীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন মেহেদী। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকবার সালিশি বৈঠক হলেও আসামি ও তার পরিবার সালিশের সিদ্ধান্ত অমান্য করেন।

সর্বশেষ গত বছরের ২ ডিসেম্বর কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের একাধিক কাউন্সিলরের উপস্থিতিতে বিষয়টি মিমাংসার চেষ্টা করলেও আসামি ও তার পরিবার তা মেনে নেয়নি। এরপর ওই ছাত্রী ফাইনাল পরীক্ষার জন্য ক্যাম্পাসে এসে হলে থাকা শুরু করেন। এরমধ্যে ১৯ ডিসেম্বর আসামি মেহেদী বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই ছাত্রীর বিভাগের অফিসে গিয়ে কর্তব্যরত কর্মকর্তাকে তার বিরুদ্ধে নানা মানহানিকর কথাবার্তা বলে স্টুডেন্ট ফাইল সংগ্রহের চেষ্টা করেন।

ওইদিন দুপুর আড়াইটার দিকে ভুক্তভোগীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের পাশের রাস্তায় ডেকে নেন। এসময় বাসা থেকে ১০ লাখ টাকা না দেয়ার কারণ জানতে চেয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রীর তলপেটসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে কিল, ঘুষি ও পা দিয়ে আঘাত করেন। এসময় তার চিৎকারে আশেপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন তিনি। পরবর্তীতে হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন।

মারধরের সময় আসামি মেহেদী গাড়ি কিনে দেয়ার ব্যবস্থা না করলে আবার এসে অপহরণ করে খুন ও পরবর্তীতে মরদেহ গুম করার হুমকি দেন। ঢাকার কর্মস্থলে উপস্থিত দেখিয়ে ভুক্তভোগীকে খুন করলে আইনত তাকে দোষী করা যাবেনা বলে চিৎকার করতে থাকেন তিনি। এসময় ওই ছাত্রীর পড়াশোনা বন্ধ করে দেয়ারও হুমকি দেন মেহেদী।

বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট জুবাইদা সরওয়ার চৌধুরী নিপা বলেন, যৌতুকের অর্থ না পেয়ে ক্যাম্পাসে এসে ওই ছাত্রীকে মারধরের অভিযোগে ভুক্তভোগী ১৩ জানুয়ারি হাটহাজারী থানায় একটি মামলা করেন। সেই মামলায় ১৬ মার্চ আসামি মেহেদী হাসান চৌধুরী আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করলে আমরা এর বিরোধিতা করি। আদালত সন্তুষ্ট হয়ে তার জামিন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে।

আসামিপক্ষের আইনজীবী মোকাররম হোসাইনের দাবি ডিভোর্স দেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে মেহেদী হাসানকে সরকারি চাকরি থেকে বরখাস্ত করাতেই এই মামলা করেছেন বাদী।

তিনি বলেন, সাংসারিক বনিবনা না হওয়ায় গত ২৭ সেপ্টেম্বরেই মেহেদী হাসান তাকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দেন, সেটা তিনি ১৯ ডিসেম্বর গ্রহণ করেন। সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হলে তাদের অব্যহতি দেয়া হয়। ডিভোর্স দেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে মেহেদীকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করাতেই মামলাটি করেছেন তিনি। যৌতুকের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। বিষয়টা সত্যি হলে তো তিনি ডিভোর্সের আগেই মামলা করতে পারতেন।


সর্বশেষ সংবাদ