ছাত্র ও ব্যবসায়ী সংঘর্ষ

৫০০ আসামি করে রাবি প্রশাসনের মামলা, গ্রেপ্তার ১

  © সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে। আজ রবিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবদুস সালাম বাদী হয়ে নগরীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতনামা ৫০০ জনের বিরুদ্ধে এই মামলা করেছেন। মামলার পর তসলিম আলী ওরফে পিটার (৪৫) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারের বাসের চেইন মাস্টার। নগরীর খোজাপুর এলাকায় তাঁর বাড়ি। 

মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান জানান, সংঘর্ষের জন্য বাসের চেইন মাস্টার তসলিমের বড় ভূমিকা আছে। মামলা হওয়ার পরে বিনোদপুর থেকেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সংঘর্ষে জড়িত অন্যদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হবে। 

এর আগে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় বাসের ভেতর এক রাবি শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা-কাটাকাটির জের ধরে সহপাঠীরা বিনোদপুর বাজারে চালক ও হেলপারকে মারধর করেন। বাস থেকে পেটাতে পেটাতে চালককে নামিয়ে মারধর করা হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এতে বাধা দিলে তাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বিরোধ লেগে যায়। এরপর রাতভর দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিনোদপুর বাজারের দোকানপাটে আগুন দিয়েছেন। কয়েকজন ব্যবসায়ীও আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের ইট-পাটকেলে অন্তত ২০০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এই ঘটনায় আজ সকালেও শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছেন। উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারকে অবরুদ্ধ করে তাঁরা বিক্ষোভ করেছেন। 

দুপুরের পর থেকে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও উত্তেজনা রয়েছে। শিক্ষার্থীরা তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ বেশ কিছু দাবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে তুলে ধরেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও তাদের শান্ত থাকার আহবান জানিয়েছে। 

সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কিছুসংখ্যক এলাকাবাসীর যে অপ্রীতিকর ঘটনা সংঘটিত হয়, তাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মর্মাহত। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপাচার্যের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। 

এতে উল্লেখ করা হয়, শনিবার সন্ধ্যায় বিনোদপুর গেট সংলগ্ন এলাকায় কতিপয় এলাকাবাসী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় এবং এতে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। ঘটনার একপর্যায়ে পুলিশের রাবার বুলেট নিক্ষেপের ফলে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এলাকাবাসী ও পুলিশের কতিপয় সদস্যের এসব কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। অনভিপ্রেত এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষ দাবি জানাচ্ছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আহত শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ চিকিৎসার সকল ব্যয়ভার বহনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা কর্তৃপক্ষের কাছে যেসব দাবি উত্থাপন করেছে, সে বিষয়ে উপাচার্য সংবেদনশীল এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতিমধ্যে স্থানীয় মতিহার থানায় এ ব্যাপারে একটি মামলা দায়ের করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সকল শিক্ষার্থী বিনোদপুর ও আশপাশের মেসে অবস্থান করছে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তৎপর আছে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাবি প্রশাসন মেস মালিক ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করছে। কর্তৃপক্ষ মনে করে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ। তাদের পরামর্শ ও সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। অতীতে এ রকম পরিস্থিতিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভূমিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় ঐতিহ্যের অংশ হয়ে আছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বর্তমান এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকা এবং সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার আহ্বান জানানো হয়েছে রাবি প্রশাসনের এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।


সর্বশেষ সংবাদ