নারীর সমান অধিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থাই কি বড় বাঁধা!  

নারী দিবস
নারী দিবস  © প্রতীকী ছবি

'ডিজিটাল প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন, জেন্ডার বৈষম্য করবে নিরসন’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বুধবার (৮ মার্চ) বিশ্বব্যাপী পালিত হয়েছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হয়েছে দিবসটি।

পৃথিবীর কোনও অংশে এটি উদযাপনের দিন, কোথাও বা প্রতিবাদের। দিনটির পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ের ইতিহাস। বহু দেশে তাই দিনটি পরিচিত আন্তর্জাতিক নারী শ্রমিক দিবস হিসেবেই। ১৯০৮ সালে মজুরি বৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের (New York) রাস্তায় নেমেছিলেন ১৫,০০০ নারী শ্রমিক। সেই থেকেই ইতিহাসে জায়গা করে নেওয়া এই দিনের।

১৯০৯ সালে আমেরিকার সোশ্যালিস্ট পার্টি নারী দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯১১ সালে এর পর অস্ট্রিয়া, জার্মানি, সুইজারল্যান্ডে নারী দিবস পালিত হয় ১৯ মার্চ। কয়েক বছরের মধ্যেই, ১৯১৩-১৯১৪ তে ২৩ ফেব্রুয়ারিকে আলাদা করে উদযাপিত হয় নারী দিবস। বাংলাদেশে প্রথম বার ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপিত হয় ১৯৭৫ সালে। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে আজ একবিংশ শতাব্দীতে নারীর অধিকার ঠিক কতটুকু রক্ষিত হয়েছে ?  দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যাপিঠের ছাত্ররা  নারীর অধিকার নিয়ে ঠিক কি চিন্তা করছে?  নারীর অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে ঠিক কোন বিষয়গুলো বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র পারভেজ আহমেদ ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সংবিধানের ২৮ অধ্যায়ের ৪ অনুচ্ছেদ এবং ২৯ অধ্যায়ের ৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নারী-পুরুষের সম অধিকার স্পষ্ট। তারপরেও সমাজ নারীদের মানসিক এবং শারীরিক ভাবে দূর্বল হিসেবে বিবেচনা করে এবং অধিকার থেকে বঞ্চিত করে।

পারভেজ বলেন, আমি মনে করি নারীদের সমান অধিকার পাওয়া এবং কিছু ক্ষেত্রে বেশি অধিকার পাওয়া উচিত। যেমন, নারীদের ঘর এবং চাকরি দুইদিকেই সমভাবে মনোযোগ রাখতে হয়। তাই চাকরির ক্ষেত্রে একজনের নারীর জন্য নারীবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা এবং জেন্ডার চাহিদার কথা বিবেচনা করে নারীদের জন্য সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা উচিত। তবে আশার বাণী হলো দেশে নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রচলিত প্রথার বিরুদ্ধে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সকল ক্ষেত্রে সাফল্যের প্রমাণ রাখছে।

শিক্ষা ও গবেষণা ইনিস্টিউটের শিক্ষার্থী মো. শাকিব হাসান শুভ মনে করেন, পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থাই সমাজে নারীদের সমান অধিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাঁধা।  তিনি বলেন,  প্রথাগত সম্পত্তি বন্টনের আইন থেকে না  বেরিয়ে  নারী পুরুষ সমান অধিকার সম্ভব নয়। সম্পত্তির অসম বন্টনই এই বৈষম্যের প্রধান কারণ।  দেশের সশস্ত্রবাহিনীতে, প্রশাসনে, গার্মেন্টস সেক্টরে এবং বিশেষ ভাবে প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে নারীদের অগ্রাধিকার নারীদের সমঅধিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে একটু হলেও সাহায্য করছে।

আরও পড়ুন: সমন্বিত ৬ ব্যাংকে ৭৪ পদে নিয়োগ। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে পড়া আরেক শিক্ষার্থী নাহাত ইসলাম বলেন, আমি একজন নারী শিক্ষার্থী হিসেবে নারীদের আত্মনির্ভরশীল হতে বলবে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বিরুদ্ধে আত্মনির্ভরশীলতাই বড় হাতিয়ার। দেশে নারীরা এখন সম্পত্তি বন্টনের ক্ষেত্রে বঞ্চিত হচ্ছে। তবে আমি মনে করি এই প্রথা এই প্রজন্মের হাত ধরে পরিবর্তন হবে। 

স্বাস্থ্য অর্থনীতির জেরিন তাবাসসুম অদ্রি বলেন, নারীরা সবচেয়ে বেশি বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছে চাকরি ক্ষেত্রে। পুরুষ সহকর্মীদের দ্বারা সবচেয়ে বেশি শারীরিক এবং মানসিক হয়রানির স্বীকার হচ্ছে। তাছাড়া স্বামীর কাছেও নানা ভাবে অবজ্ঞা ও অবহেলার স্বীকার নারী। 'আমি চাকরি করি – আমার টাকায় চলো– আমার পছন্দের জিনিস পড়ি', এসকল আচার-ব্যবহার বর্তমানে চলে আসছে। নারী পছন্দের প্রতি অবহেলাই যেন পুরুষের বৈশিষ্ট্য।  পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় পুরুষ পুরুষের কাছে ঠকলেও নারীর থেকে তার ষোলো আনা আদায়ে বদ্ধপরিকর।

তবে যতই বলা হোক নারী অধিকারের কথা, বিভিন্ন জায়গায় অবহেলা, নির্যাতনের শিকার অসংখ্য নারী ও শিশু। নারীর অধিকার চর্চা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নারীর ক্ষমতায়ন, অধিকার রক্ষায় নিয়োজিত রয়েছে অনেক সংগঠন। প্রশাসন এখন নারী উন্নয়নে ভূমিকা পালন করছে অনেক বেশি। প্রতিনিয়ত সভা সেমিনারের মাধ্যমে নারীদের সতর্ক করা হচ্ছে, জাগানো হচ্ছে নারীদের সুপ্ত প্রতিভা ও তাদের অধিকার আদায়ের স্লোগানকে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence