ভারপ্রাপ্তে ভারাক্রান্ত সরকারি পলিটেকনিক, পূর্ণ হচ্ছে অধিদপ্তর

কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর ও বোর্ডের লোগো
কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর ও বোর্ডের লোগো  © সম্পাদিত

পতিত আওয়ামী সরকারের আমলে শিক্ষার যে কয়েকটি শাখা মানহীনতায় দেশজুড়ে সমালোচিত হয়েছিল, তার মধ্যে কারিগরি শিক্ষা খাত অন্যতম। অর্থের বিনিময়ে নকল সনদ তৈরি থেকে জাল সার্টিফিকেট প্রদানসহ অসংখ্য অনিয়মে বারবার খবরের শিরোনাম হয় কারিগরি শিক্ষা সেক্টর। তবে দীর্ঘদিন থেকে কারিগরি সেক্টরের সরকারি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটগুলোর অধ্যক্ষ পদে তৈরি হয়েছে শূন্যতা। বেশ কয়েকটি সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কাজেও দেখা দিয়েছে এমন শূন্যতা।

জানা গেছে, দেশজুড়ে ৫০টি সরকারি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের মধ্যে অর্ধেক প্রতিষ্ঠান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে চলছে। রাজধানীসহ সারাদেশের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন পলিটেকনিকে রয়েছে এই চিত্র। গত ১৯ জানুয়ারি কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক প্রকাশিত সর্বশেষ তালিকা থেকে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ২৪টি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট চলছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে। যাদের বেশিরভাগ অধিদপ্তর কিংবা বিভিন্ন দপ্তরে কর্মরত আছেন।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা থেকে শুরু করে প্রশাসন, পিআইডব্লিউ, ভোকেশনাল, পরিকল্পনা-ও-উন্নয়ন এবং পিআইইউ শাখায় অন্তত দুই ডজনের বেশি সংযুক্ত কর্মকর্তা, একাধিক সহকারী পরিচালকসহ বিভিন্ন পদে এসব শিক্ষক কর্মকর্তারা নিযুক্ত আছেন। যারা দেশজুড়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, চিফ ইনষ্ট্রাক্টর এবং ইন্সট্রাক্টর পদে কর্মরত ছিলেন। কিন্তু এসব কর্মকর্তাদের কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে নিয়ে আসার ফলে নাজুক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে দেশজুড়ে থাকা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটগুলোতে।

কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের আমলে সব থেকে বেশি অধ্যক্ষ বাড়তি সুবিধা পেতে বিভিন্ন এমপি ও মন্ত্রীদের সুপারিশ নিয়ে অধিদপ্তরে কিংবা বিভিন্ন প্রজেক্টে চলে আসেন। এদিকে অধ্যক্ষ কিংবা নবম গ্রেড থেকে উপরের পদগুলোতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক বদালি পদায়ন করা হলেও নবম গ্রেডের নিচে বিভিন্ন পদে অধিদপ্তর থেকেই বদলি পদায়ন করা হয়। সর্বশেষ কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রাক্তন মহাপরিচালক মো. আজিজ তাহের খানের শেষ সময়েও বেশ কিছু কলেজ থেকে শিক্ষক-কর্মকর্তারা নিয়েছেন এই অনৈতিক সুবিধা।

বদলির এমন প্রবণতায় সবচেয়ে বেশি সংকটের মুখে পড়েছে সারাদেশের পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটগুলো। কারিগরি বোর্ড সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষের চেয়ে অধিদপ্তর কিংবা গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলোতে বদলি নিয়ে যেতে বেশি আগ্রহী। যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে ইন্সটিটিউটগুলোর শিক্ষাকার্যক্রমে। একাধিক পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে যোগাযোগ করে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষা কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। 

অভিযোগ আছে, বেশিরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী চক্রের সাহায্যে স্থায়ী ঠিকানার পাশে নিয়েছেন বদলি। আবার দেশের বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে অনেককে ঢাকায় বদলি করে এনে ‘লোভনীয়’ হিসেবে পরিচিত অধিদপ্তরের বিভিন্ন শাখায় পদায়ন করা হয়।

অধিদপ্তর থেকে পাওয়া সর্বশেষ তালিকা অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ২৪টি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষের পদ চলছে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে। এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে, ঢাকা মহিলা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট আগারগাঁও, মোহাম্মদপুরের গ্রাফিক আর্ট ইন্সটিটিউট, শরিয়তপুর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, চট্টগ্রাম মহিলা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, ফেনী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, ফেনী কম্পিউটার ইন্সটিটিউট, লক্ষীপুর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, চাঁদপুর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, সিলেট পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, রংপুর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, ঠাকুরগাঁও পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, বগুড়া পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, পাবনা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভে পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট রাজশাহী, খুলনা মহিলা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, যশোর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, ঝিনাইদহ পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, পটুয়াখালী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, ভোলা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট,

পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট নয়, ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চলছে দেশের অনেক টেকনিক্যাল স্কুলও। দেশজুড়ে ১৪৯টি সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের মধ্যে অন্তত এক ডজন প্রতিষ্ঠানে ফাঁকা রয়েছে অধ্যক্ষের পদ। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। 

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শোয়াইব আহমাদ খানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি দেশের বাইরে থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে মহাপরিচালকের রুটিন দায়িত্ব পালন করা অধিদপ্তরের পিআইডব্লিউ শাখার পরিচালক মো. মিজানুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি কেনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা বিষয়টি অবগত রয়েছি। তবে অধ্যক্ষ পদটি ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চললেও আমাদের সব থেকে বেশি সংকট রয়েছে শিক্ষকদের নিয়ে। আমাদের বড় সংখ্যায় শিক্ষক শূন্যতা রয়েছে। ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে সেটা কিছুটা নিরসনের চেষ্টা করেছি। কিন্তু সেটা পর্যাপ্ত নয়।

এই সচিব আরো যোগ করেন, এতদিন পর্যন্ত আমরা অধিদপ্তর এবং সংশ্লিষ্ট অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর শূন্যতা পূরণের চেষ্টা করেছি। পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটগুলোর সমস্যার বিষয়েও আমরা অবগত রয়েছি। পর্যায়ক্রমে সেখানে অধ্যক্ষ নিয়োগের মাধ্যমে শূন্যতা পূরণ করা হবে। কারিগরি শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সতর্ক থাকবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence