বাবার কাছে আকাশ-কুসুম কল্পনা, স্বামীর অনুপ্রেরণায় মৎস্য ক্যাডারে প্রথম রজনী

নীলুফার ইয়াসমিন রজনী
নীলুফার ইয়াসমিন রজনী  © সংগৃহীত

স্বামীর প্রবল ইচ্ছে, অগাধ বিশ্বাস ও ভালোবাসায় সাফল্যের চূড়ায় যবিপ্রবির রজনী। নিজের পরিবার ছেড়ে শ্বশুড়বাড়ি। নতুন সংসার সামলানোর এক চ্যালেঞ্জ। সেই কঠিন জায়গা থেকেই নতুন করে স্বপ্ন দেখালো রজনীর আম্মু-আব্বু ও স্বামী। এরপর আসলো তার ফলাফল। সম্প্রতি প্রকাশিত ৪১তম বিসিএসের ফলাফলে মৎস্য ক্যাডারে প্রথম হয়েছেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) সাবেক শিক্ষার্থী নীলুফার ইয়াসমিন রজনী। 

রজনীর বাড়ি যশোরের শার্শা উপজেলার বেনাপোল পৌরসভার দীঘির পাড় গ্রামে। তিনি বেনাপোলের দ্য স্যান রাইজ প্রিক্যাডেট স্কুল থেকে এসসসি এবং যশোরের আকিজ কলেজিয়েট স্কুল থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। যবিপ্রবির ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়োসাইন্স বিভাগের (২০১৪-১৫) শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী ছিলেন তিনি। 

অনার্স শেষ করার আগ পর্যন্ত বিসিএস এর প্রতি আগ্রহ খুবই সীমিত ছিল রজনীর। তিনি বলেন, মাস্টার্স চলাকালীন আমার বিসিএস এর প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় এবং সে অনুযায়ী পড়ালেখা শুরু করি, তবে করোনার কারণে কিছুটা বাঁধার সম্মুখীন হই। ২০১৯ সাল থেকেই মূলত যাত্রাটি শুরু।

এরপর ৪১তম বিসিএসে সঠিক পরিকল্পনা মাফিক পড়াশোনা করার ফলে পরবর্তী বিসিএস প্রিলি গুলো আমার জন্য অনেক সহজ হয়েছে। ৪১তম বিসিএস প্রিলির প্রস্তুতিতে যেখানে আমার ৫ থেকে ৭ মাস কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছিল সেখানে পরবর্তী ৪৪ ও ৪৫ তম বিসিএস এর প্রিলিতে সেই সময়টা এক মাসেরও কম ছিল। সত্যি বলতে আমি প্রিলির আগে পচুর পরিমাণে মডেল টেস্ট দিয়েছি যা আমার কনফিডেন্স বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। 

লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির মুহূর্ত নিয়ে তিনি বলেন, মাস্টার্সের পরীক্ষা, থিসিসের কাজ, ৪৩তম বিসিএসের প্রিলি সব মিলিয়ে পার করেছি একটা সংকটময় সময়। লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির মুহূর্তটা কিছুটা হতাশার মধ্যে কেটেছে। তিনি ধরেই নিয়েছিলেন এই লিখিত পরীক্ষা পাস করা সম্ভব না। 

কিন্তু নতুন করে স্বপ্ন দেখালো আমার আম্মু-আব্বু ও আমার স্বামী। আমার স্বামীর একটা কথায় সবসময় বলেছে, আমার বিশ্বাস এই এক মাসেই তুমি পারবে, তুমি শুধু পড়ো আর কিছু ভাবার দরকার নেই। আম্মুর সেই ভরসা দেওয়া আল্লাহ যদি চাই তাহলে এই একমাস পড়েও তুমি ক্যাডার হবে। আম্মুর এই কথাটি এখনও কানে বাজে। কত নির্ঘুম রাত কাটিয়েছি এই ক্যাডার হওয়ার যাত্রায়। 

আরও পড়ুন: গার্মেন্টসে কাজ করে অনার্স পাস, প্রথম বিসিএসেই ক্যাডার হেলাল

রজনীর আব্বুর ধারণা ছিল বিসিএসের মতো এত সম্মানজনক চাকুরি আমাদের মত মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য এক প্রকার আকাশ-কুসুম কল্পনা। তখন থেকেই মনে জেদ আসতো একদিন অনেক বড় কিছু হয়ে আব্বুর সে ধারণা বদলে দিবো। আমার প্রতি আমার মা, নানা, খালামনি, মামা, মায়ের মতো বড়মার অগাধ বিশ্বাস আর ভরসাই ছিল আমার সবচেয়ে বড় প্রেরণা। একই সাথে বাকৃবিতে তে মাস্টার্স করার সময়ে ক্যাম্পাসের পড়াশোনার পরিবেশ আমাকে বিসিএস এর প্রতি আগ্রহী করে তোলে।

এখনো রজনী স্বপ্ন দেখেন। নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে আমার উপর অর্পিত সকল দায়িত্ব আমি যেন নিষ্ঠার সাথে পালন করে আগামীতে দেশকে ভালো কিছু দিতে পারি।

তিনি বলেন, এ জীবনের জন্য চাকুরি, চাকুরির জন্য জীবন নয়, দিন শেষে বিসিএস একটি চাকুরি বৈ কিছু নয়। তাই বিসিএস এর যাত্রায় একবার ব্যর্থ হলে হতাশ হওয়ার কিছুই নেই। কবির ভাষায় আমাকেও বলতে হয় একবার না পারিলে দেখ শতবার। বিসিএস এর যাত্রায় সফলরা যতটা না মেধাবী তার চেয়ে বেশি পরিশ্রমী। পরিশ্রম ও ধৈর্য্যের কোনো বিকল্প নাই। 


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence