চুয়েটে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মারামারি, আহত ১

চুয়েট ছাত্রলীগ
চুয়েট ছাত্রলীগ  © টিডিসি ফটো

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) গতকাল বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) রাত প্রায় ১২টার দিকে শেখ রাসেল হলে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মারামারিতে এক ছাত্রলীগ কর্মী আহত হয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১১ঃ৫০ মিনিটের দিকে শেখ রাসেল হলে হঠাৎ শোরগোল শুরু হয়। শহীদ তারেক হুদা হল ও শহীদ মোহাম্মদ শাহ হলের কতিপয় ছাত্রলীগ কর্মী দেশীয় অস্ত্র (ছুরি,কিরিচ) ও লাঠিসোঁটাসহ প্রবেশ করে। এরপর হলে অনেক জোরে আওয়াজ হতে থাকে। ছাত্রলীগের কর্মীদের ছোটাছুটি করতে দেখা যায়। তার কিছুক্ষণ পরেই চুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাহিত্য বিষয়ক উপ-সম্পাদক ও শেখ রাসেল হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মোঃ রাকিব উদ্দিন চৌধুরীর মাথায় আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়।

আরও পড়ুন: গুচ্ছে থাকার পক্ষে ১৯ ভিসি, সময় চেয়েছেন একজন

পরে দ্রুত তাকে চিকিৎসার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে চুয়েট মেডিকেল সেন্টারে নেয়া হয়৷ সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়। সেখানে তার মাথায় কয়েকটি সেলাই দেয়া হয়েছে।

গুরুতর আহত রাকিব উদ্দীন চৌধুরীর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি রাতে হলেই অবস্থান করছিলাম। হঠাৎ শহীদ মোহাম্মদ শাহ হল ও শহীদ তারেক হুদা হলের ছাত্রলীগ কর্মী ১৬ ব্যাচের নিশান, রাম, রিফাত, ১৭ ব্যাচের প্রিয়ম, কাব্য, রুম্মান ও ১৮ ব্যাচের মুন্না,তৌফিক,নিরব,রাজিনসহ আরও অনেকে এসে এলোপাথাড়ি আমার উপর হামলা করেন। এক পর্যায়ে তারা আমার মাথায় দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেন। এতে আমি রক্তাক্ত হয়ে যাই।

এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করেন শহীদ তারেক হুদা হলের ছাত্রলীগ নেতা ও চুয়েট শাখা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক ইফফাত হক নিশান বলেন, রাকিবের সকল অভিযোগ বানোয়াট ও মিথ্যে। আমাদের কোনো ছাত্রলীগ কর্মী সেখানে যায় নি।

এছাড়া শহীদ মোহাম্মদ শাহ হলের ছাত্রলীগ কর্মী সাফকাত আর রুম্মান বলেন, উক্ত হামলা কে বা কারা করেছে এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমাদের কারো দ্বারা এ কাজ হয় নি।

এর আগে ১৭ই মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু ম্যুরালে ফুল দেয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে অন্তত ১জন আহত হওয়ার অভিযোগ উঠে। ওইদিন বেলা ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু ম্যুরালে ফুল দেয়ার সময় এ ঘটনার সূত্রপাত হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান , বেলা ১২টায় শেখ রাসেল ও তারেক হুদা হলের ছাত্রলীগের প্রায় ৫০জন সদস্য ফুল দেয়ার উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু ম্যুরালের সামনে জড়ো হন। তখন দুপক্ষের মধ্যে হাতাহাতির সূত্রপাত হয়।

শেখ রাসেল হলের ছাত্রলীগের কর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, পুষ্পস্তবক অর্পণের সময় শহীদ তারেক হুদা হলের শিক্ষার্থী আজহারুল ইসলাম মাহমুদ মুন্না তাদের ধাক্কা দেয়।

আরও পড়ুন: ক্লাসে অপমান, ৩০ বছর পর শিক্ষিকাকে হত্যা করল ছাত্র

অন্যদিকে তারেক হুদা হলের ছাত্রলীগ কর্মীরা বলেন, ঐদিন বেলা ৩টা নাগাদ তারেক হুদা হলের আজহারুল ইসলাম মাহমুদ (মুন্না) নামক এক শিক্ষার্থীকে শেখ রাসেল হলের ক্যান্টিনে মারধর করা হয়েছে। এরপর তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।

অভিযোগ অস্বীকার করে শেখ রাসেল হলের ছাত্রলীগ কর্মী বলেন, ক্যান্টিনে মুন্না আমাদের সকালের ঘটনাকে কেন্দ্র করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। আমরা তাকে থামানোর চেষ্টা করি। এক পর্যায়ে কথা-কাটাকাটি শুরু হয়। এরপর সে তারেক হুদা হলের দিক থেকে অনেক শিক্ষার্থীকে লাঠিসোঁটা নিয়ে শেখ রাসেল হলের দিকে আসতে থাকে। তারা শেখ রাসেল হলের গেটে ভাঙচুর করারও চেষ্টা চালায়।

এ ব্যাপারে আজহারুল ইসলাম মাহমুদ(মুন্না) এর সাথে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেন নি।

চুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পাঠাগার সম্পাদক সৈয়দ ইমাম বাকের ঘটনার বিষয়ে বলেন, পরপর তিনবার এ ধরনের ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। শান্ত ক্যাম্পাসে এমন ঘটনা কখনোই কাম্য নয়। আমার মনে হচ্ছে এখানে বাইরের কারো ইন্ধন থাকতেও পারে। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আমরা সাংগঠনিকভাবে দোষীদের চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা করব।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, ছাত্রলীগের তৃতীয় দফায় এই সংঘর্ষের ঘটনা গতকাল রাতে সংগঠিত হয়েছে৷ বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে এমন ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। আমরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করেছি। আশা করি দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।

এদিকে ক্যাম্পাসে এসব ঘটনার পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। গতকাল রাতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় রাতে হলের মেইন গেটগুলো ও হল ক্যান্টিনসমূহ বন্ধ রাখা হয়।


সর্বশেষ সংবাদ