অছাত্র-ব্যবসায়ী-নিষ্ক্রিয়দের নিয়ে কুবি ছাত্রদলের কমিটি!

ছাত্রদল
ছাত্রদল  © টিডিসি ফটো

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) শাখা ছাত্রদলের ৩১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। বুধবার রাতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

তবে নেতাকর্মীদের অভিযোগ, কমিটিতে দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়, অছাত্র ও ব্যাবসায়ীদেরকে গুরুত্বপূর্ণ পদে মূল্যায়ন করা হয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন স্থান পাওয়া সদস্য সচিবসহ একাধিক নেতা। তাদের দাবি, বৃহস্পতিবারের মধ্যে কমিটিকে পুনর্বিবেচনা না করলে তারা পদত্যাগ করবেন।

কমিটিতে লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আল মামুনকে আহ্বায়ক এবং ইংরেজি বিভাগের ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান শুভকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। কমিটির অন্যান্যরা হলেন, যুগ্ম আহ্বায়ক অহিদ উল্লাহ ওয়াহিদ, গিয়াস উদ্দিন আশিক, এমদাদুলল হক সাকিব, আতিকুর রহমান আতিক, আবুল বাশার, গোলাম রাব্বানী আশিক, মেহেদী হাসান সোহাগ, মো: ইউসুফ মিয়া, সাইফুল ইসলাম মাসুম, আল আমিন, সায়মন সরকার, সাইফুল ইসলাম, মাইনুল ইসলাম, মামুনুর রশিদ, সাগর আহমেদ, মাহবুল আলম ( ইংরেজি বিভাগ) মাহবুব আলম ( অর্থনীতি), সাফায়েত হোসোন সজল, মুজাহিদুল ইসলাম ও মোঃ সাইদুল ইসলাম। সদস্যরা হলেন আশিকুর রহমান সৌরভ, মানজির হাসান, আবু হাসনাত, খোরশেদ আলম ফয়সাল, সাইফুল ইসলাম, মো: রিফাত হোসেন, মাসুম করিম, মোঃ ফরহাদ হোসেন ও মাসুম খান।

জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৩ অক্টোবর শাখা ছাত্রদলের ১ম কমিটি দেয়া হলেও অছাত্র এবং বহিরাগতদের আধিক্য থাকায় নিষ্ক্রিয় ছিল শুরু থেকেই। পরের বছর ১৩ অক্টোবর কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ২০১৮ সালের ১১ জুন মেয়াদউত্তীর্ণ সে কমিটি প‚র্ণাঙ্গ করা হয়। সভাপতি-সম্পাদকের নেতৃত্বে ক্যাম্পাসে দেখা যায়নি কোন দলীয় কার্যক্রম। এছাড়া সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ বেশিরভাগ নেতাদের ছাত্রত্ব না থাকায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। হাতেগোনা অল্প কয়েকজন নেতা বিভিন্ন উপলক্ষগুলোতে নিজ উদ্যোগে ক্যাম্পাসের বাইরে কার্যক্রম চালালেও কমিটির সিংহভাগ নেতাই ছিলেন পুরো সময়জুড়ে নিরব।

নতুন এ আহবায়ক কমিটি ঘোষণার পর আবারও একই অভিযোগ উঠেছে নেতা-কর্মীদের পক্ষ থেকে। তাদের অভিযোগ, এবারের কমিটিতেও ব্যবসায়ী, অছাত্র এবং দীর্ঘদিন ধরে কার্যক্রমে নিষ্ক্রিয়দের প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।

ছাত্রদলের কমিটিতে স্থান পাওয়া একাধিক নেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রথম সারির কোন নেতাই বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত ছাত্র নন। কয়েকজন সান্ধ্যকালীন কোর্সে ভর্তি থাকলেও বাকীরা বিভিন্ন ব্যবসা বা চাকুরি করছেন। এছাড়া মাঠের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয় থাকার অভিযোগও রয়েছে কয়েকজনের বিরুদ্ধে। যুগ্ম আহ্বায়ক -১ ওয়াহিদ দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় অবস্থান করছেন। ছাত্রত্ব নেই এবং বেসরকারী একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যুগ্ম আহবায়ক গিয়াস ইদ্দীন আশিক কুমিল্লা আইকন কোচিং সেন্টারের পরিচালক। এমদাদুল হক সাকিবের পরিবার আওয়ামী ঘরানার বলে অভিযোগ রয়েছে। যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম রাব্বানী আশিক বর্তমানে কুমিল্লা রেসিডেন্সিয়াল কলেজের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত। এছাড়া মুজাহিদুল ইসলাম, সাইমন সরকার ও মাসুম খানসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ রয়েছে।

এক ছাত্রদল নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আহবায়ক আবদুল্লাহ আল মামুন বিগত কমিটির পর থেকেই নিষ্ক্রিয়। তবে কমিটির জন্য কিছুদিন ধরে সক্রিয় হয়েছেন। তাও উনি একাই আসছেন তার কোন কর্মীকে নিয়ে কোন প্রোগ্রামে আসতে দেখা যায়নি। এছাড়া যারা মাঠে ত্যাগী ছিলো তাদেরকেও মূল্যায়ন করা হয়নি। সম্পূর্ণ ব্যাক্তি-তদবির কেন্দ্রিক কমিটি হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে গিয়াস ইদ্দীন আশিক বলেন, আইকন কোন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান না। এটার সাথে আমি এখন ওভাবে নাই। আমার কাজিন চালায়।

আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ২০০৫-০৬ সেশন থেকেই কমিটিতে আবেদন করার অনুমতি কেন্দ্র থেকে দেয়া হয়েছে। নবনির্বাচিত সবাই মিলে আমরা কুবি ছাত্রদলকে এগিয়ে নিয়ে যাবো।

কমিটির পর তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করে যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল বাশার বলেন, সদ্য ঘোষিত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের বিতর্কিত কমিটি ঘোষনা করায় তৃনম‚লের ক্ষোভ। উক্ত কমিটিতে আনাড়ি, আওয়ামী পন্থী, অনিয়মিত এবং অছাত্রদের দিয়ে ঘোষনা করায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল নেতাকর্মীরা হতাশ। অনতিবিলম্বে আগামীকাল দুপুর ১ টার মধ্যে সদ্য ঘোষিত কমিটি বাদ দিয়ে নতুন কমিটি ঘোষনার অনুরোধ করছি। অন্যথায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল পরিবারসহ সেচ্ছায় পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য থাকিবো।

কমিটির সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান শুভ বলেন, আমরা বেশিরভাগ নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলেছি। প্রায় তিন-চতুর্থাংশ নেতা এ কমিটির প্রতি পূর্ণভাবে অনাস্থা জানিয়েছে। কসেন্ট্রালকে আমরা এ মেসেজ দিয়েছি। এ কমিটিতে আওয়ামী লীগের পরিবারের সন্তানদেরও স্থান দেয়া হয়েছে। এছাড়া ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছে এমন ছেলেদেরও কমিটিতে পদ দেয়া হয়েছে। মাসুম খান আর মুজাহিদুল ইসলাম নামে দুইজনকে কমিটিতে স্থান দেয়া হয়েছে অথচ তাদেরকে কেউ চেনেই না।’

এসব বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল বলেন, আহ্বায়ক কমিটি স্বল্প সময়ের জন্য হয়। এটা বেশিদিন থাকবে না। আমরা সাংগঠনিকভাবে খোজ খবর নিয়েই কমিটি দিয়েছি। অনিয়মিত ছাত্র, ব্যবসায়ী ও নিষ্ক্রিয়দের প্রাধান্য দেয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইভিনিং এর ছাত্রও বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র। সংগঠনের দরজা কারও জন্য বন্ধ না। শহীদ জিয়ার আদর্শ ধারণ করে সবাই এ সংগঠনে আসতে পারবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence