সাত কলেজ ছাত্রলীগের কী হবে—অপেক্ষা প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের

সাত কলেজ ও ছাত্রলীগের লোগো
সাত কলেজ ও ছাত্রলীগের লোগো  © লোগো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি সাত কলেজ ছাত্রলীগ সাংগঠনিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ থেকে। তবে এই দায়িত্ব নিতে চায় ঢাবি শাখা ছাত্রলীগ। এতে একাডেমিক মানের সাথে রাজনৈতিক মানেরও উন্নয়ন ঘটবে বলে প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিষয়টি নিয়ে এতদিন গুঞ্জন থাকলেও প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে এনেছেন ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত।

বর্তমানে এই বিষয়টি আর শুধুমাত্র ছাত্রলীগ কিংবা সাত কলেজের গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। ছাত্রলীগের নেতারা দাবি করেছেন, ইতিমধ্যে বিষয়টি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের মাধ্যমে পৌঁছেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। এই মুহূর্তে বিষয়টি নিয়ে তিনিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিবেন বলেও জানা গেছে। অবশ্য বিষয়টি নিয়ে শুরু থেকেই আপত্তি জানিয়ে আসছে সাত কলেজ ছাত্রলীগের নেতারা। 

জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের একাডেমিক সংকট নিরসনে ঢাবি ছাত্রলীগের আয়োজনে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে তানভীর হাসান সৈকত বলেন, অধিভুক্ত সাত কলেজের ছাত্রলীগের কমিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে গিয়ে হওয়ার সুযোগ নেই। 

যদিও ‘সাত কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি ঢাবির বাইরে হওয়ার সুযোগ নেই’—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে এদিন রাতেই বিক্ষোভ মিছিল করেছেন ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আজ বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল করে বাঙলা কলেজ ছাত্রলীগও। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ঢাবি ছাত্রলীগের এমন প্রস্তাবনার সমালোচনা করে স্ট্যাটাস দিয়েছেন সাত কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

বিষয়টি নিয়ে আজ বুধবার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সাথে কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসন সৈকত। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি সাত কলেজ ছাত্রলীগকে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের অধীন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আওতায় নিয়ে আসার বিষয়টি আগে কখনও সাসনে আসেনি। এতদিন এর প্রয়োজনীয়তা ছিলোনা। কারণ এরআগে এই সাতটি কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ছিলোনা। ২০১৭ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর একটি স্বপ্ন নিয়ে সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করেছেন। তিনি চেয়েছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজের শিক্ষার মান যেন সমান হয়। সাত কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম, পরীক্ষা যেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো করেই সম্পন্ন হয়। 

সেজন্য ঢাবির একাডেমিক কালচার যদি সাত কলেজে প্রতিষ্ঠিত করতে হয় তাহলে রাজনৈতিক কালচারেও সমান সুযোগ  প্রয়োজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে শৃঙ্খলা ও সৌন্দর্যের রাজনৈতিক কালচার রয়েছে সেটি যদি সাত কলেজে তৈরি করা যায় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একাডেমি কালচারও স্থাপন করা যাবে। 

এর আগে সাত কলেজ নগরের আওতাভুক্ত ছিল। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাথে কাজ করেছে। এখন যেহেতু এই সাত কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভক্ত তাই সাত কলেজের কমিটিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগই দিবে এই প্রস্তাবনা আমরা রেখেছি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের অধীনে যাওয়ার বিষয়টি সামনে আসার পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ঢাকা কলেজ, বাঙলা কলেজ ছাত্রলীগের নেতা কর্মীদের বিক্ষোভ মিছিলের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো সাধারণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে হয়নি। এটি কেউ কেউ তাদের লোক দিয়ে করিয়েছেন। আমরাও আমাদের অনুসারীদের দিয়ে করাতে পারি। কিন্তু এতে কোন শৃঙ্খলা থাকেনা। 

আর একটি কথা বললেই সাথে সাথে বাস্তবায়ন হয়ে যায় না। এসব কাজ তাদের দুর্বলতার প্রমাণ। এখন আমরা যদি আমাদের অনুসারীদের দিয়ে কিছু করাই তাহলে আবার বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হবে। আমরা তো সেই কাজ করবো না। আমরা গতকাল মত বিনিময় সভা করেছি। সেখানে তো হাজারের উপর সাত করেজ শিক্ষার্থীদের সরব উপস্থিতি ছিলো। 

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাথে ঢাবি ছাত্রলীগের টানাপোড়েন চলছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, টানাপোড়েন চলছে বিষয়টি এরকম নয়। আসল বিষয় হচ্ছে কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব কর্মপরিধি একরকম আর আমাদের দায়িত্ব কর্মপরিধি আরেক রকম। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ হিসেবে তারা ৬৪ জেলায় তাদের কমিটি দিবে। ৬৪ জেলায় তৃণমূল সংগঠনকে সুসংঘটিত করবে, সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত করবে এবং সামনে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেবে এগুলো তাদের দায়িত্ব। 

এখন কেউ যদি সেগুলো না করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে পড়ে থাকে সেটা ঠিক না। আমরা আমাদের দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছি তারা তাদের মত করছে। এতটুকুই। এরবাইরে অন্য কিছুনা। 

বর্তমান কার্যক্রম নিয়ে ঢাবি ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বে আছি। চেষ্টা করছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে আরো সুশৃঙ্খল করার, রাজনীতি পরিস্থিতিকে আরো ছাত্রবান্ধব করার। পাশাপাশি অধিভুক্ত সাত কলেজের একাডেমিক বিভিন্ন বিষয়ে সুযোগ সুবিধা তৈরি ও অসুবিধা নিরসনের জন্যও ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছি ।

সাত কলেজ ছাত্রলীগের দায়িত্ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের অধীনে দেওয়ার বিষয়টি নতুন নয় বরং আগে থেকেই আলোচনা রয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসেনি বরং আগে থেকেই হাইকমান্ডকে জানানো হয়েছে। এটা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে বলা হয়েছে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও জানানো হয়েছে। এখন এই পুরো বিষয়টি নেত্রীর টেবিল আছে।

“নেত্রীই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিবেন। এখানে কারো ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত দেওয়ার কিছু নেই। আবার কেউ তাদের অনুসারীদের দিয়ে মিছিল মিটিং করিয়েও সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কোন সুযোগ নেই। একমাত্র সিদ্ধান্ত দিবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা। এর বাইরে কারোর কোন সিদ্ধান্ত নেই। এখান  কেউ যদি কারো বিরুদ্ধে মিছিল করিয়ে, স্লোগান দিয়ে ঘোলাটে অবস্থা তৈরি করতে চান সেটিও সম্ভবনা।”  

রাজনৈতিক অধিভুক্তকে ‘না’ বলছেন সাত কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা
সাত কলেজকে রাজনৈতিক অধিভুক্ত নিয়ে ব্যাপকভাবে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন শাখাগুলোর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, ঢাবি অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজ বিশেষ করে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তত্ত্বাবধানে রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছে। এই সাতটি সরকারি কলেজের ছাত্রলীগের দায়িত্ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেওয়ার যে চেষ্টা করা হচ্ছে সেটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এটি এক ধরনের অপচেষ্টা। ঘৃণাভরে আমরা এই ধরনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ সেন্ট্রাল ছাত্রলীগের সাথে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। এর ব্যতিক্রম হলে আরো কঠোর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে। 

ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা ফেসবুকে লিখেন, আপনি আগে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র পড়েন তারপর কথা বলেন। একটি জেলা ইউনিটকে কোন সাহসে আপনি উপজেলা ইউনিটে নামাতে চান? আপনি যত শিক্ষার্থীর নেতৃত্ব দেন আমি তার থেকে বেশি শিক্ষার্থীর নেতৃত্ব দেই।

একইসাথে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক কাছে সাত কলেজ ছাত্রলীগের যোগ্য কর্মীদের মধ্যে থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক  নির্বাচিত করার দাবিও জানান তিনি। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, ঢাকা কলেজের নিয়ন্ত্রণ চাওয়া ঢাবি ছাত্রলীগের  কান্ডজ্ঞানহীন প্রস্তাব। এটা নিয়ন্ত্রণ করা তাদের পক্ষে সম্ভব না। আমরা কেন্দ্রের সাথে থাকতে চাই, ঢাবির আন্ডারে যাওয়ার আমাদের ইচ্ছা নেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যেই ঢাবি ছাত্রলীগের অবস্থান জানিয়ে বক্তব্য দিয়েছি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করে পরামর্শ করে বিষয়টি জানাবেন। 

কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সাত কলেজ ছাত্রলীগকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যুক্ত করা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যেই ঢাকা কলেজে গিয়েছিলাম। তখন আমরা শিক্ষার্থীদের মনোভাব জানার চেষ্টা করেছি। এক্ষেত্রে পার্টির হাই কমান্ড যদি কোন সিদ্ধান্ত দেয় আমার জানামতে ঢাকা কলেজসহ অন্য কোন কলেজের কারোরই কোন আপত্তি থাকার কথানা। বর্তমানে অনেকেই অন্য নেতাদের অনুসারী রয়েছে তারা হয়তো তাদের কমান্ড অনেক কিছুই করছে।

এ বিষয়ে জানতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি সভাপতি সাদ্দাম হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানকে একাধিকবার ফোন করলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি। পরবর্তীতে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও তারা কোন সাড়া দেননি।


সর্বশেষ সংবাদ