ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসতে চায় সাত কলেজ
- শিউলি রহমান
- প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:৫৪ AM , আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৪:১৩ PM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত অধিভুক্ত সাত সরকারি কলেজের কমিটি নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন; তার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন কলেজগুলোর দায়িত্বে থাকা সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা। সৈকত বলেছেন, সাত কলেজের রাজনীতি হবে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীক। ঢাবির বাইরে এসব কলেজগুলোতে পৃথক কোনো কমিটি হবে না। কিন্তু কলেজগুলোর শীর্ষ নেতারা বলছেন, আগে সাত কলেজ থেকে ঢাবির শীর্ষ নেতৃত্ব দিতে হবে। পরে তারা বিষয়টি বিবেচনা করে দেখবেন।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক (টিএসসি) মিলনায়তনে অধিভুক্ত সাত সরকারি কলেজ শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক সংকট নিরসনে মতবিনিময় সভা আয়োজন করে ঢাবি ছাত্রলীগ। সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সৈকত এসব কলেজগুলোতে নিজেদের সংগঠনের কমিটির বিষয়ে এমন বক্তব্য দেন।
ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈকত বলেছেন, ‘‘অধিভুক্ত সাত সরকারি কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্ডারে আসবে কি না এ প্রশ্ন থাকারই কথা না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে সাত কলেজের কমিটি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’’ সৈকতের এমন বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রচারের পর সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এ বিষয়ে সাত কলেজের অন্তত দায়িত্বশীল শীর্ষ ১০-১২ জন ফেসবুকে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
আগে ঢাবির অধিভুক্ত সাত কলেজ ছাত্রলীগের যোগ্য কর্মীদের মধ্যে থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হোক। -রিভা, সভাপতি, ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ
সৈকতের বক্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা বলেন, ‘‘আপনি আগে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র পড়েন, তারপর কথা বলেন। একটা জেলা ইউনিটকে কোন সাহসে আপনি উপজেলা ইউনিটে নামাতে চান? আপনি যত শিক্ষার্থীর নেতৃত্ব দেন আমি তার থেকে বেশি শিক্ষার্থীর নেতৃত্ব দেই।
তিনি লিখেছেন, "বাংলাদেশ ছাত্রলীগে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কাছে দাবি জানাচ্ছি, আগে ঢাবির অধিভুক্ত সাত কলেজ ছাত্রলীগের যোগ্য কর্মীদের মধ্যে থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হোক।’’
আরও পড়ুন: ঢাবির বাইরে সাত কলেজে ছাত্রলীগের কমিটি হওয়ার সুযোগ নেই: সৈকত
বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবীবা আক্তার সাইমুন বলেন, তারা কি আদৌ শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানের জন্য মত বিনিময় সভা আয়োজন করেছিলেন? নাকি নিজেদের মনের আকাঙ্ক্ষা উপস্থাপন করার জন্য শিক্ষার্থীদের হয়রানি করলেন? গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাত কলেজ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের আওতাধীন থাকবে, আমি ব্যক্তিগতভাবে এ বিষয়ে ওনার মতামতের আবশ্যকতা দেখছি না।
কবি নজরুল সরকারি কলেজের সভাপতি বেলায়েত হোসেন সাগর বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা আপার প্রমোশনের যুগে তারা চাইলো আমাদের ডিমোশন। সাত কলেজের জন্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আছে।
ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভার সঙ্গে মিল রেখে সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানা ও তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. রিপন মিয়াও অনেকটা একই ধরনের মন্তব্য করেছেন। তারা উভয়ে বলেছেন, ঢাবির অধিভুক্ত সাত কলেজ ছাত্রলীগের যোগ্য কর্মীদের মধ্যে থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হোক।
ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ মিঠুন বলেন, নিজেরা একজন অব্যাহতি নিয়ে আগে সাত কলেজ থেকে ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক যেকোনো একটা এবং হল কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করুন। তার পরে আসেন, আলোচনায় বসি। মিঠুন আরও বলেন, সাত কলেজ তো দূরের কথা, আপনাদের তো ঢাকা কলেজের ভারও সহ্য করার ক্ষমতা নেই।
অধিভুক্ত সাত সরকারি কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্ডারে আসবে কি না এ প্রশ্ন থাকারই কথা না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে সাত কলেজের কমিটি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। -সৈকত, সাধারণ সম্পাদক, ঢাবি ছাত্রলীগ
বাঙলা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন পলাশ বলেন, সরকারি বাঙলা কলেজ ছাত্রলীগ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের অন্যতম সুপার ইউনিট। বাঙলা কলেজ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের অধীনে আছে-থাকবে। যারা বাঙলা কলেজ ছাত্রলীগসহ অধিভুক্ত সাত কলেজের ছাত্র রাজনীতিকে নিজেদের আওতাভুক্ত করতে চায়, তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে।
এদিকে, সাত কলেজে ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে সৈকতের ওই বক্তব্যে প্রতিবাদে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেছেন ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা। মিছিলটি সায়েন্স ল্যাবরেটরি, নিউমার্কেট, নীলক্ষেত এলাকা ঘুরে ঢাকা কলেজের মূল ফটকের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীরা বলেন, ঢাবি অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজ বিশেষ করে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তত্ত্বাবধানে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে। এই সাতটি সরকারি কলেজের ছাত্রলীগের দায়িত্ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেওয়ার যে চেষ্টা করা হচ্ছে সেটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এটি এক ধরনের অপচেষ্টা। ঘৃণাভরে আমরা এই ধরনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করছি।