১৭ নটআউট সাকিব আল হাসান
- টিডিসি স্পোর্টস ডেস্ক
- প্রকাশ: ০৬ আগস্ট ২০২৩, ০২:৫৮ PM , আপডেট: ০৬ আগস্ট ২০২৩, ০৩:৪৯ PM
বিশ্বসেরা ক্রিকেট অলরাউন্ডারের মধ্যে একজন সাকিব আল হাসান। দেশ-বিদেশে সাকিবের অসংখ্য ভক্ত। অনেক উঠতি ক্রিকেটার অনুসরণ করেন তাকে। সাকিব আল হাসান ব্যতিক্রমি এক চরিত্র। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ১৭ বছর কাটিয়ে ফেলেছেন সাকিব আল হাসান। ২০০৬ সালের ৬ আগস্ট। আজকের এই দিনে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শুরু হয় তার পথচলা। সেদিনের সেই সাকিব দীর্ঘ ১৭ বছরের ক্যারিয়ারে পরিণত হয়েছেন বিশ্বসেরাই। সাকিব মাঠে নামলেই যেন বাংলাদেশ জেগে উঠে।
সাকিব বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা ক্রীড়াবিদ তো বটেই, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন আধুনিক ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার হিসেবে। জিম্বাবুয়ের হারারে স্পোর্টস ক্লাবের মাঠে নিয়মরক্ষার ম্যাচে ২০০৬ সালের ০৬ আগস্ট মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ। এদিন স্কোয়াডে কিছু পরীক্ষা চালানো হয়েছিল। সেই পরীক্ষার অংশ হিসেবে মাঠে নেমেছিলেন ১৯ বছরের তরুণ সাকিব আল হাসান।
সেদিন বাংলাদেশের হয়ে এক ম্যাচে ৪০ রান আর এক উইকেট দিয়ে অভিষেকেই জানান দিয়েছিলেন নিজের উপস্থিতি। পরে ব্যাট হাতে ৪৯ বলে ৩০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে জেতান। সেদিনের ৮ উইকেটের জয়টি ছিল কেবল শুরু। সেদিনের সেই সাকিব দিনে দিনে সেরা প্রতিভা থেকে হয়েছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।
সাকিবের অল্রাউন্ডার হয়ে উঠার পথ কঠিন ছিল। কিন্তু তিনি সাকিব আল হাসান , জানেন কিভাবে স্নায়ুচাপ সামলে এগিয়ে যেতে হয়। আসুন জানি সে গল্পটা। ২০০৮ থেকে ২০০৯ সাকিবের অল্রাউন্ডার হয়ে উঠার গল্পের শুরু। ২০০৮ এর নিউজিল্যান্ড সফরে ৩৭ রানে তুলে নেন ৭ উইকেট, হতাশ করেন নি কোচ আর ভক্তদের। ১৭.৮০ গড়ে ১০ উইকেট নিয়ে সিরিজের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হন।এর পরের মাসেই টাইগার দল ২ টি টেস্ট, ৩ টি ওয়ানডে ও একটি টি-২০ খেলতে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যায়।
সাকিবের বোলিং এর ঘূর্নি জাদু এখানেও দেখা যায় । ১ম টেস্টের ১ম দিন সাকিব উইকেটশূন্য থাকে।,পরবর্তিতে মোহাম্মদ সালাহউদ্দীন, তাকে বলে ‘ফ্লাইট’ দেবার পরামর্শ দেন। গুরুর উপদেশ শিরোধার্য করে সাকিব ২য় দিনেই পাঁচ-পাঁচটি উইকেট শিকার করেন। ২য় টেস্টে সাকিব আবারও এক ইনিংসে ৫ উইকেট তুলে নিয়ে রেকর্ড করেন।সেই সিরিজ শেষে সাকিবের ভাগে জমা হলো ২০.৮১ গড়ে ১১টি উইকেট।
২০০৯ সালের ২২ জানুয়ারি সাকিব আইসিসি’র ওডিআই অল-রাউন্ডার র্যাঙ্কিংয়ে উঠে আসেন ১ নম্বরে।বাংলাদেশের একজন ক্রিকেটার রেংকিং এ শীর্ষে ভাবতেই তখন শিহরিত হতাম।এরপর তার মান বুঝে ২০১১ সালে আইপিএল এর নিলামে তাকে ৪ লাখ ২৫ হাজার ডলারের বিনিময়ে কিনে নেয় শাহরুখ খানের কলকাতা নাইট রাইডার্স।
সোনায় মোড়ানো আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত সাকিব খেলেছেন ৬৬ টেস্ট, ২৩৫ ওয়ানডে ও ১১৭ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। ৫ টেস্ট সেঞ্চুরিতে ৪৪৫৪ রানের মালিক সাকিব। ওয়ানডেতে ৯ সেঞ্চুরিতে ৭২১১ রান করেছেন আধুনিক ক্রিকেটের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার। টি-টোয়েন্টিতেও সফল সাকিবের সংগ্রহ ২৩৮২ রান। ২৩৩ টেস্ট উইকেট, ৩০৫ ওয়ানডে উইকেট ও ১৪০ টি-টোয়েন্টি উইকেটের মালিক এই বাঁহাতি অলরাউন্ডার।
এত এত রেকর্ডের মাঝে সবচেয়ে অনন্য রেকর্ড ১৪ হাজার রান এবং ৬০০ উইকেট পাবার এলিট ক্লাবে যোগ দেয়া। এমন বিরল রেকর্ড নেই অন্য কোন ক্রিকেটারের।
গত ১৭ বছরে অলরাউন্ডারদের মধ্যে সাকিবের ধারেকাছে কেউই ছিলেন না। বিশ্বের প্রথম ও একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে তিন সংস্করণেই একসঙ্গে এক নম্বর অলরাউন্ডার হওয়ার রেকর্ড গড়েছেন সাকিব। প্রায় এক যুগ ধরে অলরাউন্ডার র্যাঙ্কিংয়ে আধিপত্য ছিল শুধু সাকিবের। এখনো ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে শীর্ষ অলরাউন্ডার সাকিব। আছেন টেস্টের শীর্ষ অলরাউন্ডারদের তালিকার ২৯ এ।
২০১২ সালের ১২ই ডিসেম্বর সাকিব আল হাসান যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী উম্মে আহমেদ শিশিরের সাথে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে জীবনের আরেকটি অধ্যায়ের সূচনা করেছিলেন। মাঠে ও বাইরের বিভিন্ন কাজের কারনে সাকিব বিভিন্ন সময় সমালোচিত হয়েছেন। ২০১৪ সালে তিনি ৬ মাসের জন্যে নিষিদ্ধ হন। সাকিব ক্যারিয়ার আজ পর্জন্ত অনেক প্রশংসা তুল্য রেকর্ডের জন্ম দিয়েছে। তার রেকর্ড তার হয়ে কথা বলে। তার মত সাহসী ক্রিকেটার বাংলার টাইগারদের আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে পৌছে দেয়।
এমন ক্রিকেটার কম ই থাকেন যারা মানুষের আবেগে নাড়া দিয়ে যান যে মাঠে নামলে বাংলাদেশ জেগে উঠে। বাংলাদেশের মানুষ এখন টেন্দুলকার বা ভিরাট কোহলি কে বা এ বি ডি ভিলিয়ার্স এর জন্যে রাস্তায় জমাট বাধেনা। তারা সাকিবের জন্য অপেক্ষা করে। নিজের ক্যারিয়ারের শেষটা কোথায় করতে চান, এই বিষয় কখনও কিছুই বলেননি সাকিব। তবে বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার ইচ্ছে আরও কয়েকটি বছর দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার। হয়তো সাকিবের সেই অপেক্ষা একটি বিশ্বকাপ শিরোপার।