স্কুল ভর্তিতে ইচ্ছেমতো ফি আদায়, মানছে না সরকারি নির্দেশনা

  © প্রতীকি ছবি

রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তিতে সরকারি নির্দেশনা মানছে না। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) নির্দেশনা অমান্য করে ইচ্ছামতো অতিরিক্ত ফি আদায় করা হচ্ছে।

করোনাকালীন সময়ে এসব অতিরিক্ত ফি আদায়ে অভিভাবকরা রীতিমতো বিপাকে পড়েছেন। তবে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান সরকারের নির্দেশনা মেনে শিক্ষার্থী ভর্তি নেওয়া হচ্ছে।

জানা গেছে, ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ইচ্ছামতো ফি আদায় করছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় মাউশির সর্বশেষ জারি করা নীতিমালায় পুন:ভর্তি, টিফিনসহ অন্তত ৭টি খাতে ফি নিতে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু এগুলোর ক্ষেত্রে উদাসীন বেশকিছু প্রতিষ্ঠান। 

মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোহাম্মদ গোলাম ফারুক বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে কোন খাতে ফি নেওয়া যাবে আর কোন খাতে নেওয়া যাবে না, সেই বিষয়ে আলাদা নির্দেশনা রয়েছে। ভর্তি ফি এবং পরীক্ষার ক্ষেত্রে দেওয়া নির্দেশনা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেউ না পেয়ে থাকলে মাউশির ওয়েবসাইট থেকে নিতে পারবে। কিন্তু পাইনি এমন কথা বলে সরকারি নির্দেশনার বাইরে কাজ করা যাবে না।

রাজধানীর মিরপুর-১৪’তে অবস্থিত শহীদ পুলিশ স্মৃতি কলেজে মাধ্যমিকে ভর্তিতে অতিরিক্ত ফি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটিতে ২য় শ্রেণি ভর্তিতে ৭ হাজার ৪১৫ (সিভিল) টাকা, ৩য় থেকে ৫ম শ্রেণি ভর্তিতে (সিভিল) ৭ হাজার ৬১৫ টাকা, ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণি ভর্তিতে (সিভিল) ৮ হাজার ৪১৫ টাকা এবং ৯ম থেকে ১০ম শ্রেণি ভর্তিতে (সিভিল) ৯ হাজার ৪১৫ নির্ধারণ করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিষ্ঠানটির এক ছাত্রীর অভিভাবক বলেন, আমার মেয়ে এ বছর নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে। ইতোমধ্যে স্কুল কর্তৃপক্ষ নবম শ্রেণিতে ভর্তি ফি ৯ হাজার ৪১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা করোনাকালীন সময়ে খুবই অযৌক্তিক এবং অমানবিক। শিক্ষামন্ত্রী ভর্তির ক্ষেত্রে নমনীয় ও মানবিক হতে বললেও শহীদ পুলিশ স্মৃতি কলেজে তা মানা হচ্ছে না। এতে করে হাজার হাজার নিরীহ অভিভাবক সমস্যায় পতিত হবে।

ঢাকার ওয়াইডব্লিউসিএ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দুই ভাগে অর্থ আদায় করছে। এর মধ্যে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে এখন ২ হাজার ৬০০ টাকা পরিশোধ করতে বলেছে। ফেব্রুয়ারি থেকে জুন মাসের মধ্যে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পরিশোধ করতে হবে ৮ হাজার ৬০০ টাকা।

চতুর্থ থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের একই সময়ে ৮ হাজার আর নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ৯ হাজার ৫০০ টাকা জমা দিতে হবে। এর মধ্যে ষষ্ঠ-অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ১৪ জানুয়ারির মধ্যে ২ হাজার ৮০০ টাকা আর নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ৩ হাজার টাকা জমা দিতে হবে। 

চট্টগ্রামের বেপজা পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তি ও টিউশন ফি ছাড়া সব ধরনের অতিরিক্ত বিবিধ চাঁদা আদায় করার অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটিতে সরকারের নির্ধারিত টিউশন ফি ছাড়া অতিরিক্ত সকল বিবিধ সেশন ফি বাবদ ৪০০০ টাকা, গ্রন্থাগার ফি বাবদ ২০ টাকা, ল্যাবরেটরি ফি বাবদ ৫০০ টাকা, ডায়েরি ফি বাবদ ২০০ টাকা, পাঠ্যক্রম ফি বাবদ ১০০ টাকা, অটোমেশন ফি বাবদ ৬০০ টাকা, যোগাযোগ বা এসএমএস ফি বাবদ ২৫০ টাকা, ক্রীড়া ফি বাবদ ৭০০ টাকা, স্কাউট ফি বাবদ ৫০ টাকা, আইডি কার্ড বাবদ ৩০০ টাকা, ম্যাগাজিন ফি বাবদ ৩৫০ টাকা, নিরাপত্তা ফি বাবদ ৮০০ টাকা, টিউশন ফি বই বাবদ ২৫ টাকা, পানি, বিদ্যুৎ মেরামত ফি বাবদ ১৩০০ টাকা, জাতীয় দিবস উপলক্ষে ৭০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে, মাউশি টিউশন ফি ছাড়া অন্য কোনো উন্নয়ন বাবদ ফি আদায় না করতে বললেও সেই নির্দেশ অমান্য করে বেপজা স্কুল এন্ড কলেজ প্রায় ১০০০ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৯ হাজার ৮৯৫ টাকা করে মোট ৯৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত বিবিধ ফি বাবদ আদায় করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিষ্ঠানটির এক অভিভাবক বলেন, করোনা মহামারির কারণে আগের মতো আয় রোজগার করা সম্ভব না হলেও কোনোভাবে সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী ভর্তি ফি ও টিউশন ফি পরিশোধ করে আসছি। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানটিতে সরকারের নির্দেশ অমান্য করে সকল ফি আদায়ের জন্য অভিভাবকদের চাপ দিয়ে আসছে। আসলে এসব অনিয়ম কেউ দেখছে না। তাদের ইচ্ছেমতো আমাদের জিম্মি করে রাখছেন।

প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এমএ মোমেন বলেন, আমরা মাউশির নির্দেশের বাইরে কোন ফি আদায় করছি না। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সব ফি পরিশোধের জন্য অভিভাবকদের বলা হয়েছে। কোন অভিভাবককে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে না।

জানা গেছে, গত ১৮ নভেম্বর ফি নির্ধারণ করে দিয়ে নির্দেশনা জারি করেছে মাউশি। সেখানে বলা হয়, বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো (এমপিওভুক্ত ও এমপিওবিহীন) শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শুধু টিউশন ফি গ্রহণ করতে পারবে। কিন্তু অ্যাসাইনমেন্ট, টিফিন, পুনঃভর্তি, গ্রন্থাগার, বিজ্ঞানাগার, ম্যাগাজিন ও উন্নয়ন বাবদ কোনো ফি গ্রহণ করবে না বা করা হলে তা ফেরত দেবে অথবা তা টিউশন ফির সঙ্গে সমন্বয় করবে। এছাড়া অন্য কোনো ফি যদি অব্যয়িত থাকে, তা একইভাবে ফেরত দেবে বা টিউশন ফির সঙ্গে সমন্বয় করবে।

নির্দেশনায় আরও বলা হয়, যদি কোনো অভিভাবক চরম আর্থিক সংকটে পতিত হন, তাহলে তার সন্তানের টিউশন ফির বিষয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ বিশেষ বিবেচনায় নেবেন। কোনো শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন যেন কোনো কারণে ব্যাহত না হয়, সে বিষয়টি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সবাইকে যত্নশীল হতে হবে।

পাশাপাশি বলা হয়, ২০২১ সালের শুরুতে যদি কোভিড-১৯ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয়, তাহলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিফিন, পুনঃভর্তি, গ্রন্থাগার, বিজ্ঞানাগার, ম্যাগাজিন, উন্নয়ন ফির নামে অর্থ নিতে পারবে না।


সর্বশেষ সংবাদ