মাধ্যমিকে শিক্ষার্থীদের চাহিদার ৯২ শতাংশ বই পায়নি ফেনীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত

মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী ও এনসিটিবি লোগো
মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী ও এনসিটিবি লোগো  © টিডিসি সম্পাদিত

নতুন বছরের ১৩ দিন পেরিয়ে গেলেও ফেনীতে মাধ্যমিক ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় ৯২ শতাংশ বই এখনও সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। সাধারণত বছরের প্রথম দিনেই বই বিতরণ শুরু হলেও এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। বইয়ের সংখ্যা অপ্রতুল হওয়ায় সংকটে পড়ছে শিক্ষার্থীরা এতে ব্যহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মতে, রাজনৈতিক পটপরিবর্তন, শিক্ষাক্রম পরিবর্তন, এবং বই পরিমার্জনের কাজে বিলম্বের কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, ফেনীর মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা পর্যায়ে ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৮৭৮ শিক্ষার্থীর জন্য ৩৭ লাখ ৩২ হাজার ৭৭৬টি বই প্রয়োজন। এখন পর্যন্ত পাওয়া বইয়ের সংখ্যা মাত্র ৩ লাখ ১৬ হাজার ২৪০টি। উপজেলাগুলোর চিত্র: ফেনী সদর উপজেলায় ১ লাখ ৩ হাজার, দাগনভূঞায় ৯৫ হাজার ২০, পরশুরামে ২০ হাজার ৫২৪, ছাগলনাইয়ায় ৩৯ হাজার ৯১, সোনাগাজীতে ৪২ হাজার ৩৭০ এবং ফুলগাজীতে ১৬ হাজার ২৩৫টি বই সরবরাহ করা হয়েছে। সূত্র আরও জানিয়েছে, চাহিদা অনুযায়ী এখনো সব বই সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। তবে প্রতিদিন এক-দুই বিষয়ের বই সরবরাহের কাজ চলমান রয়েছে।

অন্যদিকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে ফেনীর প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর জন্য মোট ৫ লাখ ৬৬ হাজার ৫৭৬টি বই বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় সব বই বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে। প্রাক-প্রাথমিকসহ প্রথম তিন শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সকল বই পেলেও চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এখনও দুই- একটি বই ছাড়া বাকিগুলো পায়নি।

যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষার্থী আগামী মাসের (ফেব্রুয়ারি) মধ্যে সব পাঠ্যবই পাবে। এ রকম পরিস্থিতিতে এনসিটিবির ওয়েবসাইটে দেওয়া পাঠ্যবইয়ের পিডিএফ ভার্সনের ওপর অনেকে নির্ভর করছে। কিন্তু সেখানে পাঠ্যবই ডাউনলোড করতে অসুবিধায় পড়ছেন। এছাড়া পিডিএফ ভার্সন থেকে বই পড়তে বিলম্ব হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক শিক্ষক বলেন, ওয়েবসাইট থেকে বই ডাউনলোড করতে বিলম্ব হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কার্যক্রম বই থেকে পরিচালিত হয়। কিন্তু হঠাৎ পিডিএফ থেকে পড়াতে আমাদের শিক্ষকদের বেশ অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে।

আরও পড়ুন: নতুন পাঠ্যবই অনলাইন থেকে ডাউনলোডের নিয়ম জানাল এনসিটিবি

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক শিক্ষক বলেন, এক-দুইটি বিষয়ের বই ছাড়া শিক্ষার্থীরা এখনও সবগুলো বই পায়নি। ফলে ওই এক-দুইটি বিষয়ের ওপর ক্লাস নিয়ে মাত্র ১-২ ঘণ্টা করিয়ে ছুটি দিয়ে দিতে হচ্ছে।

ফেনী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সামিয়া আফরোজ বলেন, বই হাতে না পাওয়ার কারণে এখনো ক্লাসে যোগ দিতে পারছি না। নতুন বছর শুরু হলেও এখন পর্যন্ত প্রয়োজনীয় পাঠ্যবই না পাওয়ায় পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ছি। বই ছাড়া ক্লাসে অংশগ্রহণ করা এবং পাঠ্যসূচি অনুসরণ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

ফেনী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাওসীফ বলেন, এখনও বই হাতে পাইনি। সরকার পিডিএফ থেকে পড়ার নির্দেশনা দিলেও মোবাইল থেকে সঠিকভাবে বই ডাউনলোড করে পড়া যায় না। এছাড়াও মোবাইলের ছোট স্ক্রিনে পিডিএফ পড়া খুবই কঠিন এবং অস্বস্তিকর।

সারমিন আক্তার নামের এক অভিভাবক তার উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, প্রতিবছর নতুন বছরের শুরুতে ছেলে-মেয়েরা নতুন বই হাতে নিয়ে স্কুলে যেতে আনন্দিত হয়। এটি তাদের মধ্যে পড়াশোনার আগ্রহ সৃষ্টি করে এবং নতুন উদ্যমে পাঠগ্রহণে উৎসাহিত করে। কিন্তু এ বছর সে চিত্রটি ভিন্ন। নতুন বই না পাওয়ায় আমার ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। তারা অলস সময় পার করছে, যা তাদের শিক্ষাজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। অভিভাবক হিসেবে এ পরিস্থিতি আমাকে চিন্তিত করছে।

এ প্রসঙ্গে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শফী উল্লাহ বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে আগামী ২০ তারিখের মধ্যে সকল বই বিতরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ফেনীর জন্য আলাদা কোনো নির্দেশনা এখনও পাওয়া যায়নি। যেহেতু বই এখনো সব বই পৌঁছেনি, তাই শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা ও আনুষঙ্গিক কার্যক্রমে সেরে ফেলার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রাক- প্রাথমিক, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির শতভাগ বই ইতোমধ্যে এসেছে এবং বিতরণ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। তবে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বই এখনও আসেনি। আগামী এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির সব বই পৌঁছে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ