নতুন কারিকুলাম শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের গভীর ষড়যন্ত্র, উদ্বেগ মাধ্যমিক শিক্ষকদের
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ৩১ আগস্ট ২০২৪, ০৮:০৯ PM , আপডেট: ৩১ আগস্ট ২০২৪, ০৮:১৩ PM
শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে। শিক্ষকরা শিক্ষাব্যবস্থার বড় অংশীজন। অথচ শিক্ষকদের সঙ্গে না নিয়েই তৈরি করা হয়েছে নতুন কারিকুলাম। এসব পড়াতে গিয়ে বিব্রতও হতে হচ্ছে তাদের। সব মিলিয়ে নতুন কারিকুলাম শিক্ষকদের জন্যই উদ্বেগের এবং এটি শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের গভীর ষড়যন্ত্র।
আজ শনিবার (৩১ আগস্ট) রাজধানীর ধানমন্ডিতে গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুলে বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি আয়োজিত কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি গঠন সভায় শিক্ষকরা এসব কথা বলেন।
সভায় হবিগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ রুহুল্লাহকে আহ্বায়ক কমিটির সভাপতি ও মো. সিকান্দার আলী খানকে সদস্য সচিব করে ১১৯ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। মোহাম্মদ রুহুল্লাহর সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির (বাসমাশিস) সাবেক মহাসচিব এমারত হোসেন মিয়া। দেশের বিভিন্ন সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এ সময় বক্তব্য রাখেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এমারত হোসেন মিয়া তার বক্তব্যে বলেন, ছাত্রদের রক্তের বিনিময়ে যে পরিবর্তন এসেছে এতে শিক্ষকরাও তাদের সম্মান ফিরে পাবেন। শিক্ষাব্যবস্থায় সুন্দর কাজ ও সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টির সুযোগ এসেছে। ড. ইউনূসের নেতৃত্বে সরকার আশা করছি শিক্ষায় পরিবর্তনে ভূমিকা রাখবে। নতুন কারিকুলাম শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের গভীর ষড়যন্ত্র। এটি মোকাবেলায় মাধ্যমিক শিক্ষকরা সব সময় সচেষ্ট ছিল, এখনও আছেন। এটি পরিবর্তিত না হলে এ জাতি পঙ্গু জাতিতে রূপান্তরিত হবে।
শিক্ষকদের দলীয় কাজ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষকরা প্রাক্তন শিক্ষকদের মতো কাজ করবেন না। আপনাদের কোনো প্রস্তাবনা থাকলে সব সময় লিখিতভাবে সরকারি অফিসে দেবেন। আর এ কমিটির কোনো লোক অন্যায় কাজ করলে তার বিরুদ্ধেও আমরা অবস্থান নেব। শিক্ষকরা এমন কথা বলবেন না, যাতে সবার সম্মানহানি হয়। সব শিক্ষকের সহযোগিতা পেলে এ খাত দুর্নীতিমুক্ত হবে।
সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে এ শিক্ষক নেতা বলেন, সেকেন্ডারি স্কুলের শিক্ষকরা এমনিতেই বৈষম্যের শিকার। তাদের পদোন্নতি হয় না। শিক্ষকরা সরকারি অফিসে গেলে দয়া করে একটু সম্মান দেবেন। অনেক অফিসে গেলে শিক্ষকদের বসতেও দেওয়া হয় না। আর শিক্ষকরা বেতন স্কেলের কোন গ্রেডে আছেন। তাদের কেন পদোন্নতি হয় না- এগুলো দেখবেন।
আহ্বায়ক কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ রুহুল্লাহ বলেন, মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের যেসব বৈষম্য আছে এখন তা নিয়ে কাজ করার উপযুক্ত সময়। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের এক ধরনের শূন্যতা তৈরি হয়েছে।
নতুন কারিকুলাম উদ্বেগের বিষয় জানিয়ে তিনি বলেন, নতুনভাবে তৈরি করা কারিকুলাম বড় উদ্বেগের বিষয়। শিক্ষকরা বড় অংশীজন হওয়া স্বত্বেও তাদের বাদ দিয়ে এ কারিকুলাম তৈরি করা হয়েছে। নতুন কারিকুলাম পড়াতে গিয়ে আমরা বিব্রতও হতে হচ্ছে। কারিকুলামে এমন কিছু বিষয় উত্থাপন করা হয়েছে যার ফলে জাতি হতাশ হয়েছে। এইচএসসি পরীক্ষা মাঝপথে এসে বন্ধ হয়ে গেল এর ভবিষ্যৎ কি- এটাই বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মোহাম্মদ রুহুল্লাহ বলেন, ছাত্র-জনতার পরিবর্তনের আন্দোলনে বড় স্লোগান ছিল বৈষম্য। আশা করছি আগামী দিনের পরিবর্তন শিক্ষকদের হাত দিয়েই হবে।
এ সময় শিক্ষকরা তাদের টাইম স্কেল আট বছর যাবত হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন। ৫০ বছরে সিনিয়র শিক্ষক নামের একটি পদ তৈরি হলেও সেটিও গলার কাঁটা বলেও মত দেন তারা।
আজিমপুর গার্লস স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক আজাদ রহমান বলেন, যখন এ কারিকুলাম আসলো, বড় অভিযোগ এলো শিক্ষকরা কিছু জানেন না। অথচ কারিকুলাম তৈরির সময় শিক্ষকদেরই ডাকা হয়নি। আমরা এ কারিকুলাম পড়াতে দিয়ে বিব্রত হচ্ছি। এ কারিকুলামের মূল্যায়ন পদ্ধতিও ত্রুটিপূর্ণ। আমরা আশা করছি কারিকুলামের পরবর্তী পর্বে অংশীজন হিসেবে আমাদেরও অংশগ্রহণ সেখানে থাকবে। এতদিন শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়নে আমাদের রাখা হয়নি।