ভয়ংকর নেশা ‘ডেভিলস ব্রেথ’ দিয়ে শিক্ষার্থীকে অপহরণ, যেভাবে ফিরে এলো

মাদ্রাসা শিক্ষার্থী আনাস আমিন
মাদ্রাসা শিক্ষার্থী আনাস আমিন  © সংগৃহীত

দাদুর কাছে হাসপাতালে যাওয়ার উদ্দেশ্যে গতকাল (৮ জুলাই) সোমবার বিকেল ৩টায় বাসা থেকে বের হয় মাদ্রাসা শিক্ষার্থী আনাস আমিন। কাছেই হাসপাতাল হওয়ায় হেঁটেই যাতায়াত করা যায়। এসময় এক অটোরিকশাসহ দুই আরোহী আনাসকে সামনে নামিয়ে দেয়ার কথা বলে আগবাড়িয়ে সাহায্য করতে আসেন। যেতে অসম্মতি জানিয়ে ‘টাকা আনিনি’ বললে তারা জানায় সমস্যা নেই, ভাড়া দেয়া লাগবেনা। চাচারবয়সী গুরুজনের পিড়াপিড়িতে আনাস তাদের সঙ্গে অটোরিকশায় উঠেন। কথা বলার একপর্যায়ে তার মুখের সামনে একটি কাগজের মুদ্রার নোট ঘুরিয়ে দিলে এক অদ্ভুত ও ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয় সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র আনাস।

কাগজের নোটে থাকা মাদকের প্রভাবে আনাস নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন এবং নিজের অজান্তেই অপরাধীদের দাবি মানতে থাকেন। চালক উল্টো পথে ঘুরিয়ে দেন তার অটোরিকশা। এরপরের ঘটনা তার আর জানা নেই। 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থানার আড়াইবাড়ী ইসলামিয়া সাঈদীয়া কামিল মাদ্রাসার ৭ম শ্রেণীতে অধ্যয়ন করেন আনাস আমিন সরকার। বাসা থেকে মাদ্রাসায় যাতায়াতের পথ মাত্র পাঁচ মিনিটের।

বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর নেশা ‘ডেভিলস ব্রেথ’ বা শয়তানের নিঃশ্বাস। যা অন্যকে আদেশ পালনে বাধ্য করানোর মূলমন্ত্র হিসেবে পরিচিত। ‘শয়তানের নিঃশ্বাস’ একটি হেলুসিনেটিক ড্রাগ। রাসায়নিকভাবে এটি স্কোপোলামিন নামে পরিচিত। স্কোপোলামিন একটি প্রাকৃতিক বা কৃত্রিমভাবে উৎপাদিত ট্রোপেন অ্যালকালয়েড এবং অ্যান্টিকোলিনার্জিক ড্রাগ। এটি হায়োসিন, ডেভিলস ব্রেথ, শয়তানের নিঃশ্বাস, বুরুন্ডাঙ্গা, রোবট ড্রাগ, জম্বি ড্রাগ বা কলম্বিয়ান ডেভিলের নিঃশ্বাস নামেও পরিচিত। এটি বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার প্রয়োজনীয় ওষুধের তালিকায় রয়েছে। রোগীকে অপারেশনের আগে অজ্ঞান করতে এটা ব্যবহার করা হয়। এটি মস্তিষ্কের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। দুর্বৃত্তরা লোকজনকে অজ্ঞান করে সর্বস্ব লুটে নিতে এটি ব্যবহার করে। বর্তমানে এটি হেলুসিনেটিক ড্রাগ হিসাবে খুব ব্যবহৃত হচ্ছে।

এবিষয়ে অনলাইনের ফোনকলে আনাসের মা উম্মে হাবিবা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন, নানাবাড়ি যাওয়ার কথা ছিল আনাসের, কিন্তু সেখানে যায়নি। সন্ধ্যা পর্যন্ত কোথাও খুঁজে পাচ্ছিলাম না। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা নিতে মনস্থির করি। এবং সে সময়েই (সন্ধ্যা ৭টা) ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এক নিরাপত্তাকর্মীর মুঠোফোন থেকে ফোন আসে আনাসের বাবা আলআমিন সরকারের কাছে। এবং আনাস তার হেফাজতেই আছেন বলে নিশ্চিত করেন ওই নিরাপত্তাকর্মী। তখন তাৎক্ষণিকভাবে গাড়ি রিজার্ভ করে আমরা বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দেই এবং আমার ছেলেকে নিয়ে আজ ভোর ৪ টায় বাসায় ফিরি।

শিক্ষার্থী আনাসের মা উম্মে হাবিবা ফাতেমা আরো জানান, আমার ছেলেকে একটি গোডাউনের মধ্যে হাত-পা ও চোখ বাধা অবস্থায় আটকে রেখেছিল দুর্বৃত্তরা এবং ঘরটির প্রবেশপথ সাটার দিয়ে বন্ধ ছিল। সেটি উঁচু করে পালিয়ে এসেছে আমার ছেলে। কোথায় আটকে রেখেছিল, সেটি আমরা জানিনা। সেখান থেকে পালিয়ে আমার ছেলে একটি মসজিদে আশ্রয় নেয় এবং সেখানের নিরাপত্তাকর্মীর সাথে পরিচয় হলে সেই নিরাপত্তাকর্মী আমাদেরকে জানান। 

বেলা ১টার দিকে বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকর্মী রেজাউলের সাথে কথা হয়। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন, গতকাল বিমানবন্দরের প্রধান নিরাপত্তা ফটকের গোল চক্করের পাশের সৌদি মসজিদে মাগরিবের নামাজ পড়তে যাই। অজু করে মসজিদের ভিতরে ডুকতেই হন্তদন্ত ও ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে এক ছেলে আমাকে এসে বলে, ‘আমি হারিয়ে গেছি, আমাকে বাঁচান’। আমার পরনে বন্দরের নিরাপত্তাকর্মীর পোশাক ছিল। 

নিরাপত্তাকর্মী রেজাউল মুঠোফোনে আরও জানান, নাম-ঠিকানা ও নাম্বার জেনে ছেলেটির বাবা মায়ের সাথে যোগাযোগ করি এবং ডকুমেন্টস নিয়ে আসতে বলি। আমার ডিউটি রাত ৮টায় শেষ হয়ে গেলে সহকর্মীদের দায়িত্বে ছেলেটিকে রেখে যাই। এরপর রাত ১২টার দিকে পরিবারের সদস্যরা এসে ছেলেটিকে নিয়ে যায়। এটা আমার চাকরি এবং নৈতিক দায়িত্বের জায়গা থেকে আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছিমাত্র বলেও যোগ করেন তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence