‘ছাত্রীকে বিয়ে করায়’ চাকরিচ্যুত শিক্ষক, ৭ বছরেও ফিরে পাননি চাকরি

মো. সোলাইমান আলী
মো. সোলাইমান আলী  © টিডিসি ফটো

২০১৫ সালের শেষের দিকে নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক ছাত্রীকে বিয়ে করার অপরাধে চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার জাহিদুল হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ের সহকারী শিক্ষক মো. সোলাইমান আলী। এরপর চাকরি ফিরে পেতে নিম্ন আদালতের দ্বারস্থ হলে রায় তার পক্ষে আসে। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে গেলে শিক্ষক সোলাইমানের যোগদান স্থগিত হয়ে যায়। এ অবস্থায় স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ৭ বছর চাকরিবিহীন অসহায়-মানবেতর জীবন-যাপন করছেন তিনি। চাকরি ফিরে পেতে গতকাল মঙ্গলবার স্কুল প্রাঙ্গনে অনশনেও বসেছিলেন মো. সোলাইমান আলী।

জানা যায়, ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে একটি নোকিয়া মোবাইল সেট দিয়ে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোশাররফ হোসেন সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে বলেন। ‘মোবাইল ফোন প্রাপ্তির নিশ্চায়নস্বরূপ’ এই স্বাক্ষর তখন বলা হলেও পরবর্তীতে শিক্ষক সোলাইমান আলী জানতে পারেন ওই সাদা কাগজটি তার অব্যাহতিপত্র। এটি তার অগোচরে তৈরি করা হয়েছে এবং একইসাথে তাকে চাকুরিচ্যুতিও করা হয়েছে। এমন প্রতারণার প্রতিকার চেয়ে পরবর্তীতে আদালতে মামলা করা হলে সে মামলায় রায়ও আসে সোলাইমানের পক্ষে। তারপরও তাকে স্বপদে যোগদান করতে দেয়নি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোশাররফ হোসেন ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. মাকসুদুন নবী ও তাদের সহযোগী কয়েকজন শিক্ষক। 

জানা যায়, ২০১৪ সালে ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (ইংরেজি) পদে যোগদান করেন সোলাইমান। তার বাড়ি কুড়িগ্রামে। বর্তমানে তিনি চাকরি ও পরবর্তীতে বিবাহের কারণে কুমিল্লায় বসবাস করছেন। 

ভুক্তভোগী এই শিক্ষক জানান, আমি তখন কুমিল্লা ২০১৬ জেলা আদালতে মামলা দায়ের করি এবং আদালত সকল সাক্ষ্য প্রমাণ এর ভিত্তিতে আমার পক্ষে রায় প্রদান করেন ২০১৭। তাঁরা আবার সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন কিন্তু আদালত আবার আমার পক্ষে ২০২১ সালে রায় ঘোষণা করেন। ওই রায় নিয়ে বিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু তারা আমাকে বিদ্যালয়ে যোগদান করতে দিচ্ছেন না।

মো. সোলাইমান আলী আরও বলেন, তারা আমার অব্যাহতি পত্রে তারিখ দেখিয়েছে ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর। আমি তার কয়েকদিন আগে একই বছরের ৩০ নভেম্বর বিয়ে করি। তাহলে বিয়ে করার কয়েকদিনের মাথায় আমি কেন চাকরি ছাড়বো? আমি আমার এক শিক্ষার্থীকে পারিবারিকভাবে বিয়ে করি। সেখানে বিয়ের সময় তখন আমার শশুর, ভাইরা (বউয়ের বড়ভাই) আমার বড়ভাইও উপস্থিত ছিলেন। তারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন আমি নাকি পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছি। 

তিনি বলেন, মূলত আমার ছাত্রীর সাথে আমার বিয়ের পরই তাদের সাথে আমার সমস্যা তৈরি হয়। এরপর তারা আমার সাথে এরকম প্রতারণা করে আমাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিলে আমি তখন বিদ্যালয়ের সভাপতি, সহ-সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকসহ জড়িতে মোট ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করলে তারা সবাই আমার উপর ক্ষেপে যায়। এছাড়াও বিদ্যালয়ের প্রদান শিক্ষকের সাথে আরও কয়েকজন শিক্ষকও তাদের সাথে মিশে আমার যোগদানে বিরোধিতা করতে থাকে।

“আমি পারিবারিকভাবেই বিয়ে করেছি এবং তাতে আমি কোনো অপরাধ করিনি জানিয়ে এই শিক্ষক বলেন, আমি আদালতে গিয়েছি, আদালত আমার কথা শুনেছে। আমাকে নিম্ন আদালত এবং উচ্চ আদালতও যোগদানের জন্য বলেছেন। রায় আমার পক্ষেই দিয়েছেন, তারপরও তারা আমাকে যোগদান করতে দিচ্ছে না।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি মো. মাকসুদুন নবী জানান, এটি বর্তমানে উচ্চ আদালতে বিচারাধীন একটি বিষয়। এ নিয়ে আমি এখন কোনো মন্তব্য করবো না। আমরা যা বলার বা যা করার তা আদালতে গিয়ে করবো বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, তিনি অনশন করেন বা যাই করেন না কেন; এখানে আমরা চাইলেও কিছু করতে পারবো না। এটি আদালতে চলমান বিচারাধীন বিষয়। আর তিনি মামলা করেছেন আর আমরা আদালতে তার জবাব দিবো। আদালত যা রায় দিবে আমরা তাই শুনবো। 

তিনি আরও বলেন, তার চাকরি থেকে অব্যাহতি এবং এমপিওভুক্তির শিট থেকে তার নাম বাতিলের পর সে শিক্ষা অফিসের প্রোগামারসহ বিভিন্ন জনের কাছে গেছে। এখন আমরা চাহিদাপত্র দিয়েছি তাতে শিক্ষা অফিস কোনো নিয়োগ দিলে তাতে আমাদের কিছু করার থাকবে না। তবে এ বিষয়ে আমরা আর ওই শিক্ষকের কোনো মৌখিক কথা শুনবো না। তার কিছু বলার থাকলে সে শিক্ষা অফিসকে বলুক, আমি তার জবাব দিবো।

এ বিষয়ে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার ফারুখ আহমেদ জানান, আমি এখানে নতুন জয়েন করেছি; বিস্তারিত জানি না। তবে যতদূর শুনেছি, ওই শিক্ষকের সাথে তার ছাত্রীকে নিয়ে একটি বিষয় সংক্রান্ত কারণে তাকে বাদ দেয় স্কুল ম্যানেজিং কমিটি। আর এটি আদালতে বিচারাধীন একটি বিষয় তাই এ নিয়ে আমাদের কিছু করার নেই।


সর্বশেষ সংবাদ