শুক্রবার: এক অনন্য আত্মিক ও সামাজিক মিলনমেলা

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি  © সংগৃহীত

শুক্রবার—ইসলাম ধর্মে পবিত্র জুমার দিন—মুসলিম সমাজে শুধু একটি সাপ্তাহিক ছুটির দিন নয়, বরং এটি এক গভীর আত্মিক পরিশুদ্ধি, সামাজিক সংহতি এবং মানবিক সাম্যের অনন্য প্রতীক। ইসলামি শরীয়তে এই দিনটির গুরুত্ব এতটাই গভীর যে, একে ‘সপ্তাহের ঈদ’ বা 'ঈদুল উসবু’ বলা হয়ে থাকে। এদিন মুসলিম উম্মাহর সকল স্তরের মানুষ—ধনী-গরিব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, রাজনীতিবিদ-শ্রমজীবী—একই কাতারে দাঁড়িয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আদায় করেন জুমার নামাজ। এই সাম্যবোধই ইসলামের মূল শিক্ষা এবং এটি সমাজে শান্তি, সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে তোলার অন্যতম মাধ্যম।
 
জুমার দিন এমন একটি সময়, যখন অনেকে সপ্তাহজুড়ে নামাজে অনুপস্থিত থাকলেও মসজিদমুখী হন। এই টান শুধু একটি ধর্মীয় অনুভব নয়; এটি একটি সামাজিক আকর্ষণও, যা মুসলমানদের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন ও পারস্পরিক যোগাযোগের সুযোগ তৈরি করে। মসজিদের অজুখানা, বারান্দা কিংবা নামাজের পর চত্বরটি হয়ে ওঠে এক প্রাণবন্ত সামাজিক চত্বর। পুরোনো বন্ধুর সঙ্গে হঠাৎ দেখা, প্রতিবেশীর খোঁজ নেওয়া, কারো সমস্যা শুনে সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া—সব মিলিয়ে এটি এক হৃদ্যতাপূর্ণ মানবিক মিলনমেলা।
 
শুধু তাই নয়, জুমার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো খুতবা। মসজিদের মিম্বরে উঠে খতিব বা ইমাম সাহেব সময়োপযোগী বক্তব্য রাখেন, তুলে ধরেন কুরআন-হাদীসের আলোকে মানব জীবনের করণীয়। এই খুতবা কখনো হয় নৈতিক শিক্ষার বার্তাবাহী, কখনো সমাজের অসঙ্গতি ও অন্যায় প্রতিরোধে উদ্বুদ্ধকারী। আজকের সমাজে যখন আমরা ধর্মীয় সহিষ্ণুতার সংকট, পারিবারিক অস্থিরতা, দুর্নীতি ও মূল্যবোধের অবক্ষয়ের মুখোমুখি, তখন জুমার খুতবা হয়ে উঠতে পারে জনসচেতনতা বৃদ্ধির একটি কার্যকর হাতিয়ার। শুধুমাত্র আখিরাতের প্রস্তুতির কথাই নয়, খুতবায় যদি আলোচনা হয় পরিবেশ রক্ষা, নারী অধিকার, সামাজিক ন্যায়বিচার কিংবা অর্থনৈতিক ভারসাম্যের মতো সমসাময়িক ইস্যু—তবে ইসলামের পূর্ণতা ও প্রাসঙ্গিকতাও সমাজে আরও সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে।

জুমার দিনে আত্মিক পরিশুদ্ধির সুযোগও অনেক বেশি। সপ্তাহের ব্যস্ততার মাঝে এই দিনটি যেন হয় একজন মুসলমানের আত্মজিজ্ঞাসা ও আত্মনিরীক্ষার দিন। এক সপ্তাহে যা কিছু ভুল হয়েছে, তার জন্য অনুশোচনা এবং পরবর্তী সপ্তাহে ভালো থাকার সংকল্প—এই চেতনা একজন মানুষকে ক্রমাগত নৈতিক উন্নতির পথে এগিয়ে দেয়। তাই, জুমার দিনকে কেবল একটি ধর্মীয় আচার বা ছুটির দিন মনে না করে এটি যেন হয় একজন মুসলমানের নৈতিক পুনর্জাগরণের উপলক্ষ।
 
সবশেষে বলা যায়, জুমা শুধু একটি দিন নয়; এটি একটি দর্শন, একটি অনুশীলন, একটি আন্দোলন। এটি মুসলিম সমাজে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সমতা, ও নৈতিকতা প্রতিষ্ঠার এক মহৎ সুযোগ। এই দিনে আমরা যদি কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয়, অন্তরের শ্রদ্ধা ও সচেতনতাকে স্থান দিই—তবে নিশ্চিতভাবে সমাজ হবে আরও মানবিক, ন্যায়ভিত্তিক এবং শান্তিময়


সর্বশেষ সংবাদ