প্রাচীনকাল থেকেই এক মাঠে হয় পুরো গ্রামের পশু কোরবানি
- ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৮ জুন ২০২৫, ১২:১১ PM , আপডেট: ১৭ জুন ২০২৫, ০১:৫১ AM

ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার পুটিজানা ইউনিয়নের বৈলাজান গ্রামে পালিত হয়েছে এক ব্যতিক্রমধর্মী কোরবানির আয়োজন। প্রাচীন ঐতিহ্য মেনে পুরো গ্রামের মানুষ মিলে এক মাঠে দিয়েছেন কোরবানি।
প্রায় ৪ একর আয়তনের মাঠটি ঘিরে আছে আম, কাঁঠাল ও বাঁশঝাড়। মাঠের মাঝখানে তৈরি করা হয় বিশাল একটি প্যান্ডেল, যেখানে কোরবানি শেষে সামাজিক বণ্টনের জন্য পাঠানো হয় মাংস। কমিটি ও স্বেচ্ছাসেবকরা সেই মাংস সারিবদ্ধভাবে ১৬শ ভাগে ভাগ করেন এবং গ্রামের প্রতিটি ঘরে তা পৌঁছে দেন।
এবারের কোরবানিতে ওই মাঠে জবাই করা হয়েছে ৭১টি গরু ও ১৫৩টি খাসি। দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসা এই ঐক্যবদ্ধ আয়োজন এখনো বহন করে ঐতিহাসিক পঞ্চায়েত প্রথার স্মৃতি। গ্রামে এই কোরবানির আয়োজক কমিটিকে আজও সবাই ‘পঞ্চায়েত কমিটি’ বলেই চেনে।
বৈলাজান গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা হারুন অর রশিদ দুলাল বলেন, ‘আমার বাবা-দাদারাও এই মাঠেই কোরবানি দিয়েছেন। আগে এখানে আসার কোনো রাস্তা ছিল না, এখন পাকা সড়ক হয়েছে, নলকূপ বসানো হয়েছে। কত বছর ধরে চলছে বলা না গেলেও, আমরা প্রজন্ম ধরে এই রীতি মেনে চলছি। আমার সন্তানেরাও এটি বজায় রাখবে।’
কোরবানি মাঠ কমিটির সভাপতি মো. ইব্রাহিম খলিল ও সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, “১৬শ ঘরে সমানভাবে মাংস পৌঁছে দেওয়া কঠিন হলেও আমরা এই কাজ করে আসছি যুগের পর যুগ ধরে। কখনো কোনো ঝগড়া হয়নি। বরং এতে গ্রামে সম্প্রীতি বেড়েছে। একে অপরের বিপদে সবাই পাশে দাঁড়ায়।”
তারা আরও বলেন, “আমাদের একটাই চাওয়া—এই ঐতিহ্য যেন আরও হাজার বছর ধরে টিকে থাকে। কোরবানির মাঠ শুধু ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি আমাদের সামাজিক ঐক্যের প্রতীক।”
প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে প্রবাহিত এই কোরবানির ধারা বৈলাজান গ্রামকে পরিণত করেছে সামাজিক সংহতির এক উজ্জ্বল উদাহরণে।