কোরবানির পশু নির্বাচনের বিধিবিধান
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ২৯ মে ২০২৫, ০৬:৩৪ PM , আপডেট: ৩০ মে ২০২৫, ১১:১৫ AM
কোরবানির আভিধানিক অর্থ হলো—নৈকট্য লাভ বা আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে কোনো কিছু ত্যাগ করা। ইসলামি পরিভাষায়, কোরবানি হলো জিলহজ মাসের ১০ তারিখ সকাল থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে শরিয়তের নির্ধারিত নিয়মে নির্দিষ্ট পশু জবাই করা।
যে ব্যক্তি প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন মুসলমান এবং সাহেবে নিসাব (অর্থাৎ যার মালিকানায় সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা, অথবা সমপরিমাণ সম্পদ রয়েছে), তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। যদি কারও কাছে নগদ অর্থ না থাকে, তবুও সামর্থ্য অনুযায়ী ধার করে হলেও কোরবানি আদায় করা উচিত।
একটি ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা এক ব্যক্তির পক্ষ থেকে কোরবানি করা যায়। আর গরু, মহিষ ও উট সাতজন শরিক হয়ে কোরবানি করতে পারেন। অর্থাৎ একটি গরু বা উটে সর্বোচ্চ সাতটি অংশে কোরবানি দেওয়া যায়।
শরিয়তের দৃষ্টিতে কোরবানির জন্য ছয় ধরনের গৃহপালিত চতুষ্পদ নিরীহ প্রাণী নির্ধারিত ভেড়া, ছাগল, দুম্বা, গরু, মহিষ ও উট। কোরআনে এগুলোর জন্য ‘বাহিমাতুল আনআম’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: রাজধানীর যেসব স্থানে বসবে কোরবানির পশুর হাট
আল্লাহ তাআলা বলেন ,“আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য কোরবানির নিয়ম নির্ধারণ করেছি, যাতে তারা আল্লাহর দেওয়া ‘বাহিমাতুল আনআম’-এর ওপর তার নাম উচ্চারণ করে। তোমাদের ইলাহ এক ইলাহ। সুতরাং তোমরা তাঁরই আনুগত্য করো এবং সুসংবাদ দাও বিনয়ীদের” (সূরা হজ, আয়াত ৩৪)।
কোরবানির পশুর বয়স
ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা: কমপক্ষে এক বছর। গরু ও মহিষ: কমপক্ষে দুই বছর। উট: কমপক্ষে পাঁচ বছর। তবে যদি ছয় মাস বয়সী দুম্বা দেখতে এক বছর পূর্ণ পশুর মতো হৃষ্টপুষ্ট হয়, তবে তা কোরবানির উপযুক্ত হবে (সহি মুসলিম)।
কোরবানির পশুতে কী কী দোষ থাকতে পারবে না?
হাদিস শরিফে এসেছে, চার ধরনের পশু দ্বারা কোরবানি করা বৈধ নয়। “চার ধরনের পশু দিয়ে কোরবানি বৈধ নয়—অন্ধ, অসুস্থ, পঙ্গু এবং যার হাড় ভেঙে গেছে।” (ইবনে মাজাহ: ৩১৪৪)
কোন কোন ত্রুটিতে কোরবানি গ্রহণযোগ্য হবে না
১. চোখ অন্ধ
২. কান পুরোপুরি কাটা
৩. খুব দুর্বল বা অসুস্থ
৪. এমন ল্যাংড়া যে কোরবানির স্থানে পৌঁছাতে অক্ষম
৫. লেজের বড় অংশ কাটা
৬. শিং গোড়া থেকে উপড়ে যাওয়া
৭. দাঁত প্রায় সব পড়ে যাওয়া
৮. এমন পাগল, যে স্বাভাবিকভাবে খায় না
৯. স্তনের দুধ পুরোপুরি শুকিয়ে যাওয়া
১০. গরু বা মহিষের দুই বা ততোধিক দুধের স্তন কাটা
যেসব ত্রুটি থাকলেও কোরবানি বৈধ
পশুতে কিছু দোষ থাকলেও কোরবানি বৈধ হতে পারে, যেমন: হালকা পাগলামি থাকলেও খাওয়াদাওয়া ঠিকমতো করে। লেজ বা কানের কিছু অংশ কাটা। শিং ভাঙা বা না থাকা। একটি পা ভাঙা, তবে চলাফেরা করতে সক্ষম। দাঁতের কিছু অংশ না থাকা। বয়স্ক বা প্রজননে অক্ষম। পুরুষাঙ্গ কাটা, কিন্তু অন্যান্য দিক থেকে সুস্থ।
কোরবানি উত্তম হলো ত্রুটিমুক্ত, সুস্থ, হৃষ্টপুষ্ট পশু কোরবানি করা। নিজ হাতে কোরবানি করা, তবে না পারলে অন্য কাউকে দিয়ে করানো জায়েজ। কোরবানির সময় উপস্থিত থাকা সুন্নত। কোরবানি ও আকিকা একসঙ্গে করা বৈধ।
অতএব, মূল উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি। শুধু দামি পশু কিনে লোক দেখানোর জন্য কোরবানি করলে তা প্রকৃত ইবাদত হয় না। কোরবানির মূল শিক্ষা হলো আত্মত্যাগ, আল্লাহর নির্দেশ মান্য করা, এবং অন্তরের খালিস তাকওয়ার প্রকাশ ঘটানো।